ছাত্র

‘ছাত্ররাজনীতি’ নিষিদ্ধ নাকি ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধে’ আবারও উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), এমন প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন অঙ্গনে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রবেশ করেছে দাবি করে এই আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। অথচ রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবির এবং নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর এতদিন গোপনে কার্যক্রম চালালেও এ নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া জানায়নি তারা।

বুয়েটে শিবিরের কার্যক্রম চলছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম। এটি জানার পরেও সব শেষ সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। উল্টো কোনো প্রমাণ ছাড়াই শিবিরের সাবেক সভাপতির বক্তব্য দেওয়ায় এর প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে এক শিক্ষার্থীকে। অর্থাৎ শিবিরের সাবেক সভাপতির বক্তব্যও তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না বা আমলে নিতে চাইছেন না। যা স্পষ্ট দ্বিমুখী আচরণ।

আরও পড়ুন : খুনি তারেকের এবারের টার্গেট আগস্ট মাস!

এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে গত বছর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ বলেছিলেন, এসব শিক্ষার্থীকে আটকের পর ঢাকা থেকে জানানো হয়, এখানে তাঁদের সংগঠনের দু–একজন কর্মী আছেন। তাঁরা হাওরে বেড়াতে এসেছিলেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হলেও বিষয়টিকে সংবাদ সম্মেলনে ‘আদালতের এখতিয়ার’ বলে চালিয়ে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অথচ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়টিকে তারা নিজেদের এখতিয়ারের বিষয় বানিয়ে আন্দোলন করছে।

অভিযোগ রয়েছে, বুয়েটে নীরবে জঙ্গি কার্যক্রম বা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে হিজবুত তাহরীর। এই প্রতিষ্ঠানে তৎপরতা রয়েছে শিবিরেরও।

সম্প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক আউটলুক ইমেইলে পাঠানো হয়েছে হিযবুত তাহরীরের ইমেইল। প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইলে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বার্তা পাঠানো হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সকল শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ধরে একাধারে প্রেরণ করা হয় এসব ইমেইল।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হলেই তাদের নানাভাবে বুলিং করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অফলাইনে ও অনলাইনে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে।

বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথার বাইরে গেলেও নানা ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদকের কাছে এমন একটি মেসেঞ্জার বার্তার স্ক্রিনশট এসেছে। যেখানে দেখা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথার বাইরে পরীক্ষা দিতে গেলে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : আবরার হত্যাকে পুঁজি করে মাঠে নেমেছে জামাত-শিবির

আর এবারের আন্দোলনে সবকিছু ছাপিয়ে সামনে আসছে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি। এর আগেও বুয়েটে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে এ নিয়ে বুয়েটর এই আন্দোলনকারীদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ রায়হান দীপের মাথায় ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন মেজবাহউদ্দীন নামের এক শিক্ষার্থী। হাসপাতালে ৮৪ দিন কোমায় থাকার পরে ২০১৩ সালের ২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন দীপ। তার মৃত্যুর ১০ বছরের বেশি সময়ে পেরিয়ে গেলেও এখনও বিচার পাননি দীপের পরিবার ও বন্ধুরা। এমনকি দ্বীপ হত্যার কিছুদিন পরে বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদের ওপর হামলা চালায় শিবির কর্মীরা যেখানে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফেরেন তিনি। এখনো শরীরে শ’ খানেক সেলাইয়ের চিহ্ন নিয়ে ঘুরছেন তিনি।

[শিবির-হিযবুত নিয়ে যেমন-তেমন, শুধু ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি কেনো বুয়েটে আন্দোলনকারীদের]

এর আগে দুই দশক আগে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যে সাবিকুন নাহার সনি নিহত হয়েছিলেন। এসব ঘটনার পরেও বুয়েটে চলমান ছিল ছাত্র রাজনীতি।

আরও পড়ুন :