বুয়েট

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) কেন্দ্র করে যেই অস্থিরতা তার শুরু এখানকার সাংবাদিক সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে। সেখানে লেখা হয়, ‘রাতের অন্ধকারে বুয়েট ক্যাম্পাসে দলীয় প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করলো ছাত্রলীগ- সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ।’ এই সাংবাদিক সমিতিরই বেশ কিছু পদে থাকা ৪ জন টাঙ্গুয়ার হাওরে আটক হন শিবির কর্মী হিসেবে (https://www.somoynews.tv/news/2023-07-31/XEtyQWPv)। এদের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেও কিভাবে তাদের এখনও বুয়েট সাংবাদিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক সিনিয়র সাংবাদিকেরা। 1

বুয়েট সাংবাদিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দীন, ট্রেজারার মো. ফাহাদুল ইসলাম, সম্পাদক (ফিচার) মাহমুদুল হাসান, সহকারী সম্পাদক (ইনভেস্টিগেশন) তানভীর আরাফাত ফাহিম। এর প্রত্যেকেই টাঙ্গুয়ার হাওড়ে শিবির কর্মীদের সঙ্গে আটক হন। স্থানীয় জামায়াত নেতাও বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চললেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোন অংশ বা সাংবাদিক সমিতি থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের কথাও বলা হয়নি। বরং তারা এখনও নিজ নিজ পদে কাজ করে যাচ্ছেন শিবির তকমা গায়ে নিয়ে। কিন্তু ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়ন সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলেই তার বিরোধিতা করেছে এই গোষ্ঠি। বিষয়টিকে ‘সরিষার মধ্যে ভূত’ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

collage

 

জানা যায়, (https://www.facebook.com/buetshangbadikshomiti/posts/433655839327696) ২৮ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক সমিতি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ‘ছাত্রলীগের প্রবেশ’ নিয়ে পোস্ট দেয়। কিন্তু এর আগে হিযবুক তাহরীর যখন বুয়েট শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল আউটলুক মেইল থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে জিহাদী বার্তা প্রচার করে, তখন বিষয়টি নিয়ে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি বুয়েট সাংবাদিক সমিতিকে তাদের ফেসবুক পেজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘণের এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি সংগঠনটি।

কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, সাংবাদিক সমিতি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিষয়টি প্রচারের আগে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। প্রশ্ন থাকে, তাহলে কিভাবে সাংবাদিক সমিতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার আগেই লিখতে পারে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ’।

এদিকে বুয়েট সাংবাদিক সমিতিতে শিবিরের রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের প্রসঙ্গে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হওয়া ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় আহমেদ (https://www.facebook.com/TAhmedBuet07/posts/122123350262232767) বলেন, ‘এরা কোন প্রতিষ্ঠিত বা রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত কোন মিডিয়ার কোন প্রতিনিধি না। গুজবের সোর্স হিসেবে কাজ করার জন্যই শিবিরের ছেলেরা সাংবাদিক সমিতি দখল করে, রাব্বিকে বহিষ্কার করে। মজার বিষয় সাংবাদিক সমিতির ইসিতে থাকা ৪/৫ জন টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেফতার হওয়া শিবিরের বিভিন্ন স্তরের কর্মী। তবে কি বুঝার বাকি থাকে এই আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত করায় শিবির খুব সুচারুভাবে কাজ করেছে?’

6

বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এক নয়। যখন কারো বিরুদ্ধে পেশাদারিত্বের বদলে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করার এ ধরণের অভিযোগ চলে আসে, তখন তা থেকে অব্যহতি না নিয়ে পদ আকড়ে ধরে রাখা খুবই দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত এবং বিষয়টি কোনভাবেই নিরপেক্ষতা হতে পারে না।

তারা আরও জানান, গণমাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট গেটকিপিং থাকে। যা ইচ্ছে তাই লেখা বা বলা যায়না। কিন্তু সেটি না করে ফেসবুকে নিজেদের মতো করে যে কোন তথ্য প্রকাশ করে সেটাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম করলে বিষয়টি সাংবাদিক সুলভ আচরণ হয়না।

[বুয়েটে সাংবাদিক সমিতি দখল করে গুজবের মাধ্যমে আন্দোলন করাচ্ছে শিবির]

এদিকে বেশ কিছু মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুয়েটের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথক প্রতিনিধি রাখা হয়না। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরাই বুয়েটের বিভিন্ন খবর প্রকাশ করে। সেই হিসেবে বুয়েট সাংবাদিক সমিতিতে থাকা সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করা অধিকাংশরাই মূলধারার গণমাধ্যমে কাজ করছেন না। কিন্তু তারপরও গণমাধ্যমকে কেন্দ্র করে নয় বরং সমিতিকে কেন্দ্র করে চলছে তাদের কার্যক্রম।

আরও পড়ুন :