পলাতক

বিএনপির পলাতক ডামি নেতা তারেক রহমানের জন্য পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর মায়াকান্না বেড়েই চলেছে। কোটি কোটি ডলার খরচ করে বিএনপির নিয়োগ দেওয়া মার্কিন লবিস্টরা এই সংবাদমাধ্যমগুলোর হঠাৎ সক্রিয়তার পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, ইসরাইল-গাজা ইস্যুতে আগ্রাসী ইসরাইলীদের পক্ষে নগ্ন পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগে এই পশ্চিমা মিডিয়া আউটলেটগুলো সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন ও মুক্ত গণমাধ্যমের দ্বারা তীক্ষ্ণভাবে সমালোচিত হয়েছিলো। সেই পশ্চিমা গণমাধ্যম এবার সক্রিয় তারেককে নিয়ে।

পশ্চিমা গণমাধ্যম তারেকের বক্তব্য প্রচারে হঠাৎ  সক্রিয় হলেও দেশবাসীর মধ্যে আমরা কোন বিকার লক্ষ্য করছি না। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কেন তারেক বিমুখ, তার জন্য একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে-

https://www.france24.com/en/live-news/20240104-exiled-opposition-leader-condemns-sham-bangladesh-election

https://thediplomat.com/2023/12/tarique-rahman-on-why-the-bnp-is-boycotting-the-bangladesh-elections/

যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছে তারেক ও বিএনপি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত ও কলুষিত করার পেছনে মূল কুশীলব ছিলেন তারেক রহমান। নিজের পছন্দের প্রার্থী ও বিএনপির পদধারী নেতা কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করবার জন্য বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা সংশোধন করে।

https://www.aljazeera.com/amp/news/2006/10/29/bangladesh-president-in-caretaker-role

https://www.dhakatribune.com/amp/opinion/op-ed/320772/how-the-caretaker-lost-political-legitimacy

https://www.tbsnews.net/bangladesh/minority-leaders-rights-activists-raise-safety-concerns-over-tariques-call-party-men

এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো কে এম হাসানের নিয়োগের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করলে যে সংকট তৈরি হয় তার ফলশ্রুতিতে আসে সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার। এই সরকারের হাতেই গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান এবং পরবর্তীতে এই সরকারের কাছেই রাজনীতি না করার মুচলিকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তারেক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মত একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাকে ম্যানিপুলেট করে, কলুষিত করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী এই তারেক।

https://www.aljazeera.com/amp/news/2006/10/29/bangladesh-president-in-caretaker-role

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দুদের উপর নেমে আসে নারকীয় নির্যাতন। নির্বিচারে লুট করা ও পুড়িয়ে দেয়া হয় হিন্দুদের বাড়িঘর, অসংখ্য হিন্দু নারী ধর্ষিত হন।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই আতঙ্কে উৎকণ্ঠে কেটেছে সংখ্যালঘুদের জীবন। আর এই নারকীয় নিপীড়ন চালানোয় তারেকের নেতৃত্বাধীন বিএনপির মূল সহযোগী ছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকা দল জামাতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ভক্ত ও সমর্থকরা। ১৯৭১ সালের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সাথে নিয়ে ২০০১ সালে এসেও যারা সাম্প্রদায়িক নৃশংসতা চর্চা করে সেই বিএনপি ও তারেকের মুখে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ কতটা হাস্যকর শোনায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিএনপির আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা ৬ বছর দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশ। তারেকের দুর্নীতির করাল থাবা এতটাই বিস্তৃত হয়েছিল যে, তারেক পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন মিস্টার টেন পার্সেন্ট নামে।

https://www.thedailystar.net/news-detail-201716?amp

https://www.thedailystar.net/news-detail-111469

কুখ্যাত হাওয়া ভবনে বসে দেশে নিজের মত আলাদা সরকার পরিচালনাকারী তারেক, দেশি-বিদেশি সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেন পার্সেন্ট করে কমিশন খেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন তার ঘনিষ্ঠ মিত্র গিয়াস, হারিছ, বাবর দের সহযোগীতায়।তখন অবস্থা এমন ছিল যে দেশে যত ব্যবসা আছে তা হয় নিয়ন্ত্রণ করবেন তারেক ও তার মিত্ররা, না হয় তাদেরকে দিতে হবে চাঁদা বা কমিশন। এছাড়া, কোন লাইন ছাড়া শুধুমাত্র বিদ্যুতের খাম্বা আমদানি করে অর্থ আত্মসাৎ, দেশের প্রায় সকল ব্যবসা থেকে চাদা বা কমিশন আদায়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা পাহাড়সম এ সম্পদের প্রায় পুরোটাই বিদেশে পাচার করেন তারেক। এমনকি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে মধ্যপ্রাচ্যে যে অর্থ পাচার করেন তারেক, সে অভিযোগে পরবর্তীতে জেল খাটতে হয় তার মা, খালেদা জিয়াকে। দূর্নীতি ও অর্থপাচার কে রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন তারেক।

https://unb.com.bd/category/Opinion/niko-corruption-how-a-deal-facilitated-by-tariques-cronies-cost-bangladesh-over-106-billion/128582

https://www.dhakatribune.com/bangladesh/312013/the-dark-prince-and-his-hawa-bhaban-symbol-of

বিএনপি’র শাসনামলে বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠী ও জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং গডফাদার ছিলেন তারেক। হরকাতুল জিহাদ (হুজি), বাংলাভাই, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর মত সংগঠনগুলোকে লালন করে তাদের ব্যবহার করতেন শেখ হাসিনা,আওয়ামী লীগ এবং সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা, ২০০৪ সালে ১৭ই আগস্ট একযোগে একই সময়ে ৬৩ জেলায় আদালত ও সরকারি স্থাপনাসমূহে বোমা হামলা এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত অধ্যায়- ২০০৫ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। তারেকের নেতৃত্বে  রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় প্রধান বিরোধীদল ও বিরোধী নেতাকে একত্রে নিধন করতে জঙ্গিদের দ্বারা গ্রেনেড হামলার এমন ঘটনা পুরো বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেই বিরল।

[পলাতক আসামী ও বাংলাদেশে দুর্নীতির বরপুত্র – জঙ্গি গডফাদার তারেকের জন্য কেন পশ্চিমা মিডিয়ার এতো মায়াকান্না?]

https://www.thedailystar.net/august-21-carnage/21-august-grenade-attack-what-happened-on-that-day-1644268?amp

https://www.thedailystar.net/news-detail-111469

আরো রয়েছে চট্টগ্রামে আটক হওয়া ২০ ট্রাক অস্ত্র ও বিস্ফোরক আনা মামলা। প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিচ্ছিনতাবাদী সংগঠন উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার সাথে ষড়যন্ত্র করে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে ২০ ট্রাক আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ হয়। এ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ততকালীন সামরিক ও অসামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন যে, ভারতে নাশকতা চালানোর জন্য তারেকের নির্দেশেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে আনা হয়েছিল সে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র।

তারেকের এই সকল অতীত কুকীর্তি এখনও বাংলাদেশের মানুষের মনে শিহরণ জাগায়। কোটি কোটি ডলার ঢেলে পশ্চিমা মিডিয়ার মাধ্যমে যতই চরিত্র ধবল ধোলাই এর চেষ্টা করুক না কেন, তারেকের নাম শুনলেই এ দেশের মানুষের মনের সেসব দু:সহ স্মৃতি দগদগে হয়ে ওঠে। অর্থের ঝনঝনানিতে পশ্চিমা মিডিয়া সেসব কুকীর্তি বেমালুম ভুলে গেলেও ভুলে যায়নি বাংলাদেশের জনগণ। এজন্যই, তারেক জিয়া ও বিএনপির প্রতি এতোটা ক্ষুব্ধ ও বিতৃষ্ণ এ দেশের মানুষ- এ কারণেই বিএনপি ও তারেক বাংলাদেশে এতোটা জনবিচ্ছিন্ন।

আরও পড়ুন :