অভিনন্দন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানদের অভিনন্দন বার্তা আসছে। বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রনেতা, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও জোট থেকে আসছে  সরকারের প্রতি সমর্থন ও শুভেচ্ছা বার্তা। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে অভিনন্দন বার্তা ও চিঠি পৌঁছে দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পাশাপাশি নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর সহিংসতার বিবরণ প্রকাশ করে সমালোচনাও হচ্ছে। গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাক্ষরিত অভিনন্দন বার্তাও এসেছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। আর এতেই স্বপ্নভঙ্গ হলো বিএনপির! কিন্তু কেন এই অভিনন্দন পত্র নিয়ে তাদের এত সমস্যা?

আরও পড়ুন : নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের স্টেটমেন্টে বিএনপির জন্য লাভের কিছু নেই, শুধুই হতাশা!

সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও গুজব ছড়াতে ছড়াতে বিভ্রান্তির বেড়াজালে বিএনপি এতটাই ডুবে গেছে যে, দড়ি দেখলেও তাকে সাপ ভাবে দলের নেতারা। মাঠের রাজনীতির চেয়ে ফেসবুকের গুজবনির্ভরতা বিএনপির এই অধঃপতনের কারণ। নির্বাচনের আগে বিএনপির বিশ্বাস ছিল, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারকে চাপ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠাবে। এরপর বিএনপির ফর্মূলাতেই জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন হবে, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। পলাতক তারেক জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবে।

বিএনপির বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে এসব কথা বারবার প্রচার করায় কর্মী-সমর্থকরা তাতে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু জাতিসংঘ কোনো স্বাধীন দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বা নির্বাচনের দায়িত্ব নেয় কিনা, বিএনপির কর্মীদের মাথায় এসব প্রশ্ন আসেনি। বিএনপির নেতারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম এভাবে ব্যবহার করত তাদের বক্তব্যে।

আরও পড়ুন : জাতিসংঘে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য ছড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াত চক্র

জাতিসংঘের নাম এবারই প্রথম ব্যবহার করেনি বিএনপি। এর আগেও জাতিসংঘের নামে মিথ্যাচার করেছিল। ২০১৮ সালের জুলাইতে ২ দিনের সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকায় আসেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে। তখন প্রচুর দৌড়ঝাঁপ ও লবিস্ট লাগিয়েও জাতিসংঘ মহাসচিবের সাক্ষাৎ লাভে ব্যর্থ হন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে তাকে অনেক কথা শুনতে হয়।

নির্বাচনের আগে সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ দেশের মিডিয়ায় হৈচৈ পড়ে যায়, জাতিসংঘের মহাসচিব নাকি ফখরুলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন! আওয়ামী লীগ সরকার ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের নালিশ শুনতে নিউইয়র্কে ডেকেছেন গুতেরেস, এমন দাবি করে বিএনপি। ফখরুলও দ্রুত নিউইয়র্ক যান। জাতিসংঘ ভবনের সামনে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছড়ান, বিএনপি কর্মীরা ফখরুলের নামে জয়ধ্বনি দেয়। বৈঠক শেষে বীরের বেশে ফখরুল ফেরেন দেশে।

মির্জা-ফখরুল-ইসলাম-আলমগীর-1-300x228পরে জানা গেল, ফখরুলকে কোনো আমন্ত্রণই জানাননি গুতেরেস। বরং অনেক দেন-দরবারের পর ফখরুল সুযোগ পান জাতিসংঘ মহাসচিবের সহকারী মিরোস্লাভ জানকোর সাথে দেখা করার। যা ছিল নিয়মিত বৈঠক। এ কথা মিডিয়ায় জানান তার স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অফিসার জোয়স লুইস ডায়াজ। অথচ ফখরুল ফিরে আসার আগপর্যন্ত এই আমন্ত্রণের কথা মিডিয়ায় প্রচার করে গেছেন রিজভী এবং মওদুদরা।

মিডিয়াও এমনভাবে প্রচার করেছিল যেন আন্তোনিও গুতেরেস ও ফখরুল একান্তে বৈঠক করেছেন। অথচ ফখরুল যখন জাতিসংঘের বারান্দায় দৌড়ঝাঁপ করছেন, সেসময় গুতেরেস নিউইয়র্কেই ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঘানায়, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে। দেশে ফিরে ফখরুল এমন ভাব নিয়েছেন যেন, আন্তোনিও গুতেরেস এবার শেখ হাসিনা সরকারকে হঠিয়ে দেবে। আসল সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর ফখরুলকে নিয়ে সারাদেশে তুমুল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী বেশ কিছুদিন ফখরুল গণমাধ্যমের সামনে আসেননি।

আরও পড়ুন : BNP’s social media handles spreading lies, disinformation.

বিএনপির নেতারাবিএনপির নেতারা এমন ছল-চাতুরি প্রায়ই করেন। পলাতক তারেক রহমানের বিশেষ সহকারী হুমায়ূনের মাধ্যমে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের নকল চিঠি প্রচার, খালেদা জিয়ার সাথে আলাপের বিষয়ে বিজেপি নেতা অমিত শাহ্‌র ভুয়া ফোনালাপ, জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকের পর আলোচনার বিষয় নিয়ে মিথ্যাচার, কানাডার ভুয়া মানবাধিকার সংস্থা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য পদক কিনে ধরা খাওয়া- এমন বহু ২ নম্বরি কাজে যুক্ত বিএনপি।

[জাতিসংঘ নিয়ে মিথ্যাচার করা বিএনপি এখন মহাসচিবের অভিনন্দন পত্র নিয়ে সন্দিহান!]

তারা সবাইকে নিজেদের মতই জোচ্চোর ভাবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুননির্বাচিত হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের পাঠানো অভিনন্দন পত্র নিয়ে জোচ্চোর বিএনপির নেতারা প্রশ্ন তুলছেন। এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা। জাল-জালিয়াতি করতে করতে যারা জাতির সামনে কলঙ্কিত, তারাই এই অভিনন্দন বার্তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই বিএনপি!

আরও পড়ুন :