বাংলাদেশের-কিংস

বাংলাদেশে প্রথম সরকারী ছত্রছায়ায় বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গঠিত দল বা ‘কিংস পার্টি’ হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। কারণ দেশের প্রথম সেনা স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সেনা উর্দি পড়া অবস্থায় যে দল গঠন করেছিলেন, তার নামই বিএনপি।

আরও পড়ুন : ফাদার-ই-বহুদলীয় গণতন্ত্র জিয়াউর রহমানের এক ঝলক

জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি ছিলেন অবৈধভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী এবং একই সঙ্গে সেনাপ্রধান। অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখল করা অবৈধ সেনাশাসক পরিচয় মুছে ফেলতে ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি’ সাজার অভিপ্রায় থেকেই তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপি এমন একটি দল যার জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনি থেকে। বিএনপি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টরা প্রথম বৈঠকে যেখানে বসেছিলেন- অনৈতিকভাবে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের যে বাড়িতে বসবাস করেছিলেন সেখানেই!

সামরিক শাসক থেকে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার পথে বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে জেনারেল জিয়া কুখ্যাত হ্যা-না ভোট আয়োজন করেছিলেন। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ওই নির্বাচনে দেশের ৮৮.৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৯৮.৯ শতাংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন। এমনই এক মিথ্যা, বানোয়াট ও প্রহসনের ভোটাভুটি করেই জিয়ার রাজনৈতিক রূপে উত্থান!

জেনারেল জিয়া এরপর দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সেজন্য নিজের একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন তিনি। সেনা ইউনিফর্মধারী জেনারেল জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল বা জাগদল নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন জিয়ারই গৃহপালিত ডেপুটি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। তবে জাগদল রাজনৈতিক দল হিসেবে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

আরও পড়ুন : ইতিহাসের কাঠগড়ায় স্বৈরশাসক জিয়ার গুম ও হত্যার রাজনীতির উপাখ্যান

১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়াউর রহমান নিজেই নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নোতি দেন এবং ১৯৭৮ সালের ১ মে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ৬টি দল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ঘোষণা করা হয়। অনেক নাটকীয়তার পর ১৯৭৮ সালের ১২ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাইফেল হাতে নিজের অধীনে হওয়া সেই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান যে জয়লাভ করেন এটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আরও পড়ুন : কিভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল ডিক্টেটর জিয়া

এবার জিয়া নিজেই দল গঠনের উদ্যোগ নেন। আর লুকোচুরি নয়, আর নয় উর্দির খোলস। এবার তাকে রাজনৈতিক নেতা হতে হবে! ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক করে বিএনপির ৭৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। জিয়াউর রহমান কিন্তু তখনো সেনাপ্রধান! এভাবেই একজন সেনাপ্রধানের হাতে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হয় বিএনপির।

[বিএনপি : বাংলাদেশের এক ও অদ্বিতীয় কিংস পার্টি]

কার্যত, জন্মগতভাবেই বিএনপি স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্রবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের উত্তরাধিকার। তাই শুরুতেই শাহ আজিজুর রহমান ও আবদুর রহমান বিশ্বাসের মতো চিহ্নিত ও প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপিতে যুক্ত হয় এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পদকে কলঙ্কিত করে। জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় বাতিল হয় একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করতে গড়া দালাল আইন। মুক্ত হয় নরঘাতকরা। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ফিরে আসে রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দিতে মহান সংসদে আইন আকারে পাশ হয় কলঙ্কিত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’। এসবই উর্দি পড়া কিংস পার্টির জন্মদাতা জিয়ার উপাখ্যান। এসব কলঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে এভাবেই জন্ম হয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে কুখ্যাত বিএনপির।

আরও পড়ুন :