স্বাধীনতার ঘোষক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেট লেজিসলেচার (আইনসভা), যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে বর্ণনা করে এবং তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস তুলে ধরে বিএনপি-জামায়াত ও ফ্রিডম পার্টির অর্থায়নে সংযোজিত এক দশক পুরোনো মিথ্যা তথ্য বাতিল করে সঠিক তথ্য সংযোজন করে শুধরে নেওয়া হয়েছে।

গত ৮ই মার্চ নিউ ইয়র্ক স্টেট লেজিসলেচারের উভয় কক্ষে ওই প্রস্তাব গৃহীত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা জানান, সংশোধিত রেজ্যুলেশনের একটি অনুলিপি তারা পেয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০১২ সালের ২৬শে মার্চ প্রথমবার নিউইয়র্ক স্টেটের আইনসভায় পাস হওয়া ‘বাংলাদেশ ডে রেজ্যুলেশনে’ বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলা হয়েছিল। তখনই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ইতিহাসের উদ্ধৃতিসহ তথ্যপ্রমাণ জমা দেন স্টেট লেজিসলেচারের কর্মকর্তাদের কাছে।জিয়া

এরপরেও কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাস হওয়া রেজ্যুলেশনে জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলা হচ্ছিল। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও এ নিয়ে প্রতিবাদে স্বোচ্চার ছিলেন।

প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, স্টেট লেজিসলেচারের কয়েকজন সদস্যের নির্বাচনে ‘জামায়াত-শিবির এবং কুখ্যাত ফ্রিডম পার্টির লোকজন’ বিপুল অর্থ ব্যয় করছিল, সে কারণে গত কয়েক বছরে বার বার দাবি জানিয়েও ওই ভুল তথ্য সংশোধন সম্ভব হয়নি।

অবশেষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে স্টেট লেজিসলেচারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশের স্থপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের অবদান ও স্বীকৃতি সম্পর্কে অবগত হন। তারা সে সময় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকার তৎকালীন সংবাদ, গবেষণা পত্র ও নথিপত্রের কপি সংগ্রহ করেন।

তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের ২৬শে মার্চে কোনো রেজ্যুলেশন পাস করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর পাস হওয়া প্রস্তাবে সেই ভুল সংশোধন করে নেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক বিতর্ক

নিউ ইয়র্কে ‘বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি’র প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, “এই রেজুলেশন পাসের মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির গভীর একটি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা সম্ভব হল।”

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যত প্রবাসী রয়েছি, তার অর্ধেকেরও বেশি এই নিউ ইয়র্কে বসবাস করে। নিউ ইয়র্ক সিটি, স্টেট এবং এর বিভিন্ন সিটিতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রজন্ম কাজ করছেন। তারাও এখন ইতিহাসের সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।”

এই সংশোধন প্রক্রিয়ার সমন্বয় করেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আব্দুর রহিম বাদশা এবং আব্দুস শহীদ। ইতিহাস ঠিকভাবে প্রতিফলনের জন্য নিউ ইয়র্কে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রবাসীরা স্টেট লেজিসলেচারের উভয় কক্ষে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম রাজনীতিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জনিয়েছেন।

আরো পড়ুনঃ