সম্প্রতি দেশে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। অন্যদিকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। বাজার সংশ্লিষ্ট এবং সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, রোজার মাসকে সামনে রেখে বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

তবে এর আগেই নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও বাজার পর্যালোচনা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পর কমছে ভোজ্যতেলের দাম

এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে আমদানি পর্যায়ে এবং ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট কমাতে এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে চলছে সারাদেশে অভিযান। ইতিমধ্যে অনেক মজুদদারকে আটক, সাজা প্রদান এবং গুদাম সিলগালা করা হয়েছে অবৈধ মজুদের দায়ে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এতে বোঝাই যাচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে জনমনে প্রশ্ন, এবার কি দাম কমবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের? স্বস্তি ফিরবে জনমনে? সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে পণ্যমূল্য?

গতকাল ৫ মন্ত্রীর বৈঠকের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকারের পদক্ষেপগুলো দেশবাসীর নজরে এসেছে। এই বৈঠক শেষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়েও তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, আমরা ওএমএস কার্যক্রমের বিস্তৃতি বাড়াবো। পণ্যের সরবরাহ বাড়াবো। মজুদ নিয়ন্ত্রণ করবো যাতে কেউ বেশি করে মজুদ করে দাম বাড়াতে না পারে।

এছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ফায়দা নিতে না পারে সেজন্য আগামী একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। আমরা জানাতে চাই, এ (দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি) সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধুতা যেন প্রশ্রয় না পায়। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে।

ইতোমধ্যে আমদানি পর্যায়ে সব ভোগ্যপণ্যের সর্বনিম্ন কর ধার্য করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

এছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ কমে ভ্যাট ৫ শতাংশ হচ্ছে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং একইসাথে ভোক্তা পর্যায়েও ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হয়েছে আজ।

আরো পড়ুনঃ ১৯৯১ সালে বিএনপির তৈরি করা প্রথম তেলের সিন্ডিকেটটি এবারো চক্রান্ত করে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ক্ষমতা তো আমাদের নেই। দাম কমবে কি না ব্রাজিল বলতে পারবে, কারণ ৯০ শতাংশ ভোজ্য তেল আমরা সেখান থেকে আমদানি করি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য। অনেক ক্ষেত্রে এটি সরকারের হাতে থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দাম সরকারের হাতের বাহিরে থাকে। ফলে চাইলেই সরকার সেটা করতে পারছে না। ফলে সরকারের হাতে যেটি আছে সেটিই করছে সরকার। এখানে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই।

কারণ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আমদানি পর্যায়ে সব ভোগ্যপণ্যের সর্বনিম্ন কর ধার্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়েছে। দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং এর কাজ করে যাচ্ছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে শীঘ্রই নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে এবং দেশের মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করবে।

কয়েকদিন হলো সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, যার ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের দামে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। পাশাপাশি চিনি, পেঁয়াজের দামও বাড়ার সুযোগ পায়নি ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের দাম দুই দফা কমেছে। ছোলাসহ আরও কয়েকটি পণ্যের বাজার দরও এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল।

সয়াবিন তেলের আমদানিকারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে পর্যাপ্ত তেলের মজুদ রয়েছে। রমজান মাসেও তেলের সংকট হবে না। আমদানি না করলেও দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা যা-ই হোক না কেন, চিন্তার কারণ নাই আপাতত।

অতএব, জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করা যায়। অসাধু ব্যবসায়ীদের ওপর মনিটরিং জোরদার থাকলে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারবে না কেউ, এমনটাই মত সাধারণ মানুষের।

আরো পড়ুনঃ