২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা দায়ের করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। কিন্তু জেলে একা থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তাই তার কাজ করে দেওয়ার জন্য, ১১ ফেব্রুয়ারি তার ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকেও তার সঙ্গে জেলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

৭ এপ্রিল নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপিপন্থী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটিন চেকআপ করান খালেদা জিয়া। পুরনো শারীরিক জটিলতাগুলোর কারণে, অক্টোবর মাসে সরকারের কাছে চিকিৎসার অনুমতি চান তিনি। তার বয়সের কথা বিবেচনা করে, তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসার অনুমতি দেয় সরকার। তারপর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে, নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পছন্দের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা এক মাসের বেশি সময় সর্বোচ্চ চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। জেলে থাকার সময়েও নিয়মিত ব্যক্তিগত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতেন তিনি।

খালেদা

এদিকে, করোনা মহামারির মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সাজা মাওকুফের জন্য মানবিক আবেদন করা হয় সরকারের কাছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে নিজ বাড়িতে থাকার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের বাসায় থাকতে শুরু করেন খালেদা। বাসায় থাকার এক বছর পর, ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল, বাসার আটজনকে সঙ্গে নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর নিজের ইচ্ছা অনুসারে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পছন্দের ডাক্তারদের অধীনে চিকিৎসা নেন।

করোনায় আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের পুরনো অসুখগুলো সংক্রমিত হতে থাকে। একারণে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের কয়েকজন সিনিয়র আমলাও করোনা পরবর্তী জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে তিন সপ্তাহ করোনার সঙ্গে লড়ে সুস্থ হন খালেদা জিয়া। কিন্তু ধীরে ধীরে জেগে উঠতে থাকে তার পুরনো সমস্যাগুলো। ফলে পুরনো বিকল হয়ে পড়ে পুরো লিভার, দীর্ঘদিনের আর্থাইটিস-ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, ক্যান্সারের সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে শরীরজুড়ে।

[খালেদা জিয়াকে নিয়ে তারেকের মহাপরিকল্পনা]

একারণে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং তারেক রহমানের বিশ্বস্ত ডাক্তারদের নিয়ে গঠন করা হয় মেডিক্যাল বোর্ড। নিজের ও বিএনপি নেতাদের পছন্দের চিকিৎসকদের অধীনে এখন এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। অথচ, বিএনপির পক্ষ থেকেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে নিয়ে হুট করেই গুজব ছড়ানো শুরু হয়।

তবে ২৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গুজব ছড়াতে নিষেধ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু একই দিন দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী দাবি করেন যে, খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশে, পরের দিন ২৫ নভেম্বর থেকে মির্জা ফখরুলও একই কথা বলতে শুরু করেন।

আরো পড়ুনঃ ফখরুল-রিজভীদের অপপ্রচারের হীন প্রচেষ্টার বলি খালেদা জিয়া ও বিএনপি

এখন কথা হচ্ছে- জেলের শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার দেখাশোনা করেছেন তারই ব্যক্তিগত পরিচারিকা। চিকিৎসার সবকিছু নিয়মিত তত্ত্বাবধান করেছেন তারই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি নেতাদের পছন্দের শীর্ষ ডাক্তাররা। এমনকি সরকার তাকে নিজের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিজের বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু নিজ বাসায় থাকার এক বছরের মাথায় খালেদা জিয়া কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন? তাহলে তারেক রহমানই কী দলের নেতা বা চিকিৎসক বা গৃহকর্মীদের কারো মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে করোনায় আক্রান্ত করার নীলনকশা করেছিল? যাতে, করোনা পরবর্তী ধাক্কা সইতে না পেরে, অন্যান্য সিনিয়র সিটিজেনদের মতো, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন খালেদা জিয়া। আর তার এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির মৃতপ্রায় রাজনীতিকে চাঙ্গা করার শেষ চেষ্টা চালাবে তারেক রহমান?

ঠিক এরকমই ঘটেছিল খালেদার উত্থানের সময়। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর মানুষের আবেগকে পুঁজি করে বিএনপির রাজনীতি জমিয়ে তোলেন তিনি। কিন্তু দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েও স্বামী-হত্যার বিচারের কোনো উদ্যোগ নেননি। ঠিক তেমনি, দীর্ঘদিন থেকে নিস্ক্রিয় বিএনপির রাজনীতিকে বাঁচানাের শেষ চেষ্টা হিসেবে, নিজের মাকে ব্যবহার ব্যবহার করা তারেক রহমানের মতো উচ্চাভিলাষি ধুরন্ধরের পক্ষেই শুধু সম্ভব। খালেদা জিয়াকে যদি কোনো স্লোপয়জনিং করা হয়েই থাকে, তাহলে সেই দায় কী তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতাদের ওপরই বর্তায় না?

আরো পড়ুনঃ