খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীদের গড় আয়ু ৭৪.৫ বছর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বয়স সনদ অনুযায়ী বর্তমানে ৭৬ বছর চলছে। অর্থাৎ, গড়পরতা সাধারণ মানুষের আয়ুর চেয়েও তার বয়স বেশি। এই বয়সে যে কোনো মানুষ বিশ্রামে থাকেন, সতর্ক জীবন-যাপন করেন। বিভিন্ন সূত্রে খালেদা জিয়ার দৈনন্দিন জীবন-যাপন সম্পর্কে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। ২০১০ সালে মইনুল রোডের সেই দখলকৃত বাসভবন থেকে খালেদা জিয়াকে যখন উচ্ছেদ করা হয়, তখন সেই বাড়ি থেকে যেসব জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছিল, তা থেকে খালেদা জিয়ার বিলাসী এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

সে সময় সেই বাড়ি থেকে অনেকগুলো বিলাসবহুল গাড়ি, অর্ধশতেরও বেশি সংখ্যক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ

খালেদা

যন্ত্র, এক ডজনেরও বেশি বিশালাকৃতির ফ্রিজ উদ্ধার হয়। সেই সাথে পাওয়ায় যায় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদের ভাণ্ডার। সেই বাড়িটিতে বিলাসী বিভিন্ন দ্রব্য পাওয়া গেলেও ব্যায়ামাগারের সন্ধানের কথা জানা যায়নি। অর্থাৎ খালেদা জিয়া বিলাসিতায় এবং আরাম আয়েশে অভ্যস্ত একজন নারী, এটাই প্রমাণিত হয়।

সাধারণ পরিবারের মা-চাচী যারা উদয়াস্ত সংসারের জন্য খাটা-খাটনি করেন, ৭০ বছর হওয়ার অনেক আগেই তারা বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হন। কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে বাত, ব্যথা, হাড়ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ রোগ ধরা পড়ে। তারা বিছানায় পড়ে যান। আবহাওয়াগত কারণে এই অঞ্চলের নারীদের শরীরবৃত্তিয় কার্যক্ষমতা এভাবেই হ্রাস পায়। সবারই মোটামুটি একই পথে হাঁটতে হয়। যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ড. আল-মামুনদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হন। এত রোগ তিনি শরীরে বহন করছেন অনেক বছর ধরে।

অথচ বিএনপির নেতৃবৃন্দের কথায় এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, খালেদা জিয়াকে তারা এখনও ২৫ বছর বয়সী কোনো যুবতী হিসেবে দেখছেন। তার যেন রোগ ধরা পড়াটাই অবিশ্বাস্য তাদের কাছে। তার যেন রোগ, মৃত্যু কিছুই ঘটতে পারে না, বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে তিনি যেন গ্রিক পুরাণ থেকে উঠে আসা যৌবন আর ভালোবাসার দেবি আফ্রোদিতি, তিনি অমর এবং অক্ষয়!

[ফখরুল-রিজভীদের অপপ্রচারের হীন প্রচেষ্টার বলি খালেদা জিয়া ও বিএনপি]

এই স্বাভাবিক রোগে ভুগছেন বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ। সবাই এই দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবাই সতর্ক জীবন যাপন করার মাধ্যমেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। অথচ বিএনপির নেতৃবৃন্দ তথা রাজাকার তালিকার ৭১০নং-এ থাকা রুহুল আমিন চখার পুত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় প্রতিদিনই মিডিয়ার সামনে এসে কান্নাকাটির নাটক করছেন। খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকেই মির্জা ফখরুল এবং রিজভীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলে আসছেন, খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় থাকা একজন নারী, তিনি যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারেন, তিনি অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে আছেন… ইত্যাদি।

২০১৮ সালের পর থেকে তিনি প্রায় একইরকম অবস্থায় আছেন তারও বহু পূর্বে ধরা পড়া এই রোগগুলো শরীরে নিয়ে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিলাসি জীবন-যাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত এই মড়াকান্নার সৃষ্টি। সেই মড়াকান্না দেখে দয়াপরবশ হয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবপ্রাপ্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম পর্যায়ে তার দেখভাল করার জন্য একজনকে তার সাথে থাকার অনুমতি দেন। যা ইতিহাসের নজিরবিহীন। তবুও তাতে সন্তুষ্ট হয়নি বিএনপি।

আরো পড়ুনঃ খালেদার মৃত্যুর অপেক্ষায় বিএনপি, নাশকতার পরিকল্পনায় সতর্ক সরকার

দেশে অস্থিতিশীলতা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও দেখে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতার সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ করে খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন সাজা স্থগিতের আদেশ দিয়ে বিলাসবহুল বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়ার অনুমতি দেন। সেই ৬ মাস ক্রমে ক্রমে কয়েকবার বর্ধিত করেন।

একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যে কি না হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর বারংবার হামলা চালিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংসতার বুলডোজার চালিয়েছেন, আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমায় প্রাণ নিয়েছেন শত শত মানুষের, বছরের পর বছর ধরে মামলা-হামলা করে ধ্বংস করে দিয়েছেন, রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছেন, নিজে এবং পরিবার মিলে বিদেশে পাচার করেছেন কয়েকশ বিলিয়ন ডলার, সেই কুখ্যাত এক অপরাধী কখনই এতটা মানবিক আচরণ আশা করতে পারেন না। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর দয়া করেছেন।

কিন্তু এত প্রাপ্তিও বিএনপির সহ্য হয়নি। ঘি হজম হলো না তাদের পেটে। ক্রমাগত মিথ্যাচার আর ভুয়া বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন।

রাজনীতি সচেতন মহলের মনে থাকবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পলে তাকে বিদেশে নেয়ার মতও সময় ছিল না। তখন ডা. দেবী শেঠীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তিনি একা আসেননি, সাথে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নিয়ে এসেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ খালেদার পর বিএনপির নেতৃত্ব দিতে চান রুমিন, অনলাইনে চালাচ্ছেন প্রচারণা

অথচ খালেদা জিয়ার বিদেশে নেয়া নিয়ে অনশন-স্মারকলিপি নাটক করছে বিএনপি, যা কোনো কাজেই আসবে না। বিএনপি চাইলেই বিদেশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারে, দেশে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ সহযোগিতা করবেন বলেও জানালেন। বিএনপি চাইলেই খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে বিদেশি হসপিটালের সাথে ক্রসচেক করে, তাদের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে পারে। সরকার সব সুবিধা দিতে প্রস্তুত।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কি আসলে খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায়, নাকি তার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করতে চায়?

গতকাল রাজাকারপুত্র মির্জা ফখরুল দাবি করেছিলেন, সরকারের ইচ্ছা নাই খালেদা জিয়া বেঁচে থাকুক, তার কিছু হলে দায় সরকারের! তিনি বলেন, এখন ম্যাডামের যে অবস্থা, এজন্য সমস্ত দায় সরকারের। সরকারের ইচ্ছা নেই তিনি বেঁচে থাকুক। এজন্য বাইরে নেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রিজভী দাবি করছেন, খালেদা জিয়া মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

ধর্মপ্রাণ মানুষজন বিশ্বাস করেন, প্রতিটি জীবের জন্ম-মৃত্যু-ভাগ্য সৃষ্টিকর্তার হাতে। মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটবে, সব কিছু পূর্ব নির্ধারিত। স্রষ্টা সকলের জন্য পরিপূর্ণ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে রেখেছেন মানুষের সৃষ্টির পূর্বেই। কথায় কথায় ধর্মের ধুয়া তোলা বিএনপি এখন কি না খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুতে সরকারের দায় দেখছেন! ইসলামে বিশ্বাসী লোকজন একে নিশ্চিতভাবে শিরক বলবেন।

আজও মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়েছেন ফখরুল। খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে এক ভয়াবহ মিথ্যাচার করেন তিনি। একটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর দায়ে ফখরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

শুধু বিবৃতি দিয়েই নয়, তিনি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন ভালো মানুষের চেহারা নিয়ে ভয়ানক মিথ্যাচার করে। আর একইসাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের উস্কে দিচ্ছেন ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে দেশটাকে পুনরায় ভাগাড়ে পরিণত করার লক্ষ্যে। ইতিমধ্যে তিনি ৮ দিনের কর্মসূচি দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ রয়েছে উৎকণ্ঠায়। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে সবার। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে রাষ্ট্রের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, অর্থনৈতিক জাগরণ, মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট করতে পারে বলে এক ধরণের আতঙ্কে ভুগছেন সবাই। এশিয়ান টাইগার হিসেবে খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশ, যে দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রশংসিত, সেই দেশের সকল অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে তৎপর কানাডার আদালতের রায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি এই গণবিধ্বংসী দল- বিএনপি।

আর এ কারণেই দেশের সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুনঃ