
ধর্মের দোহাই দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বসানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী।
ফাঁস হওয়া একটি অডিও থেকে মেয়রের এই অবস্থানের কথা জানা গেছে। আব্বাস আলী পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য।
তবে জেলার পোড় খাওয়া, ত্যাগী ও পরীক্ষিত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তুলে ধরেছেন মেয়র আব্বাসের অতীত। তিনি ২০০৯ সালে সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। বহিস্কারের ৬ বছর পর ২০১৫ সালে তিনি জামায়াতের হয়ে বোমাবাজি করতে গিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
তৎকালীন পত্রপত্রিকার মারফত জানা যায়, রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহজাহান সিরাজ সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আব্বাস আলী বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় বোমাবাজি ও নাশকতা সংগঠিত করে আসছিলেন।
এছাড়াও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৬ বছর আগে আব্বাস আলীকে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এরপর তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
এমন একজস সন্ত্রাসী এবং নাশকতাকারী কীভাবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করল, কারা তার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দলের আহ্বায়ক এবং মেয়র পর্যন্ত বানালেন, তাদের বিচার দাবি করেছেন নগরীর পৌড় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে তিনি ধর্মকে টেনে এনেছেন, অথচ তিনি বোমবাজি করে মানুষের রক্তপাত ঘটানোর বেলায় আল্লাহর কথা ভুলে গিয়েছিলেন!
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, জামায়াত বিভিন্ন সময় নিজেদের সংগঠনের কাউকে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে অন্য দলে ঢুকিয়ে দেয়, তাদেরকে বিশেষ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানোর পেছনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায়। উক্ত দল বা সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে সুকৌশলে।
এটি কিন্তু নিছক কোনো তত্ত্ব নয়। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের বিশেষ ধারা ৩৯ (ক) অনুসারে এভাবে অন্য দল
বা সংগঠনের নিজেদের লোকজনকে অনুপ্রবেশ করানো হয়। সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. গোলজার আহমদকে এভাবে ছাত্রলীগে ঢোকানো হয়েছিলে। যার ফরমের কপি-
মূলত এভাবেই জামায়াত শিবির থেকে বিভিন্ন দলে ঢুকে অনুপ্রবেশকারীরা নাশকতা চালায় এবং প্রবেশ করা দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজে লিপ্ত হয়।
মেয়র আব্বাসের আলাপে শোনা যায় তিনি একজনকে বলছেন, … যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখব না), সব করব তবে শেষ মাথাতে যেটা… ম্যুরালটা করা ঠিক হবে না। আমার পাপ হবে; তো কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না, যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে, ম্যুরালটা হলে আমার ভুল করা হবে।
[ধর্মের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনে নারাজ মেয়র আব্বাস জামায়াতের পেইড এজেন্ট]
এটা যদি আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে যে এই ম্যুরাল দিছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এ জন্য কিছু করার নাই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।
তার কথায় মনে হতে পারে, তিনি বিরাট আল্লাহওয়ালা লোক। কিন্তু তার অতীত কর্মকাণ্ড সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কাজের কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, তিনি আসলে জামায়াতের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আসল সমস্যা তাদের কাছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হলো লোক দেখানো।
তবে আশার ব্যাপার হলো, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের মত মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধেও হার্ড লাইনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের আদর্শ এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির প্রতিফলন দেখা যাবে অচিরেই। ইতিমধ্যে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কাটাখালীর মেয়রের কটূক্তি
এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় করা মামলার বাদী হয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ১৩ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, চন্দিমা থানার মামলার বাদী নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তহিদুল হক সুমান এবং রাজপাড়া থানায় মামলা করেছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
তিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুনঃ
- পৌর মেয়র আব্বাসকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার
- বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে পৌর মেয়রের কটূক্তির অডিও ফাঁস রাজশাহীতে তোলপাড়
- বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তি: মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ৩ মামলা