
বিএনপির পক্ষ থেকে আজ বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। দলের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে বলছেন, যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের নিরুত্তাপ-নীরবতা দলের মধ্যে নানারকম প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
গতকাল পর্যন্ত অসুস্থ মায়ের একবারও খোঁজ নেননি পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমান। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অনশন করা বিএনপির নেতাকর্মীরা। নিজেরা কষ্ট করে অনশন করছেন, অন্যদিকে অসুস্থ খালেদার নিজের গর্ভের সন্তানের কোনো চিন্তাই নেই!
বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, তারেক রহমান হলেন খালেদা জিয়ার একমাত্র
জীবিত সন্তান। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার জন্য যত দুর্গমই হোক না কেন, বাংলাদেশে তার আসা নিয়ে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন, তার বাংলাদেশে ফিরে আসা উচিত।
বিএনপি নেতারা এটাও মনে করেন, তারেক রহমান বাংলাদেশে এলে পুরো পরিস্থিতি ঘুরে যেত এবং এর ফলে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার পথও উন্মুক্ত হত। কিন্তু তারেক রহমানের রহস্যময় আচরণ বিএনপির মধ্যেই প্রশ্ন তৈরি করেছে। তারা বলছেন যে, এ কেমন সন্তান।
বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের জন্য নদী সাঁতরে এসেছিলেন। মায়ের জন্য ত্যাগ স্বীকারের ইতিহাস পৃথিবীতে অনেকে রয়েছে। যারা পৃথিবীতে বড় হয়েছেন, বিখ্যাত হয়েছেন তাদের মাতৃভক্তির ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে আলোচিত আছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাহরণ দিয়েও বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেন, ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন শুধুমাত্র বাবা-মার হত্যার বিচারের জন্য। আর এরকম পরিস্থিতি যখন তারেক রহমানের মা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন তিনি দেশের বাইরে থাকেন কীভাবে।
বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং তারেক রহমানের ভূমিকা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তারা বলেন, তারেক যদি দেশে ফিরে আসেন তাহলে কী হবে? তাকে জেল দেওয়া হবে, গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু এর ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাহস পাবে, উদ্বেলিত হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
[একবারও মায়ের খোঁজ নেননি তারেক, হতাশ অনশনকারী নেতাকর্মীরা]
তারেক রহমানের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়া একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তারেক রহমান যদি দেশে ফিরে জেলখানায় যান তাহলে হয়তো সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং তখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিলেও দিতে পারেন।
কিন্তু তারেক রহমান যদি এভাবে লন্ডনে বসে থাকেন এবং সেখানে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে থাকেন,
তাহলে শেখ হাসিনার সরকার তাকে কীভাবে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাবে?
বিএনপির সাবেক ওই নেতা স্বীকার করেছেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার পরিবারে যদি এমন পরিস্থিতি হতো, তাহলে তারাও হয়তো অনুমতি দিতেন না।
যদিও বিএনপি প্রকাশ্যে মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করছে, তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে না নিয়ে মানবিকভাবে দেখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে বিএনপির নেতারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে না আসলে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হবে না। তারেক রহমান আগে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু এবার অসুস্থ হয়ে সিসিইউতে যাওয়ার পর তারেক কোনো খোঁজই নেননি।
আরো পড়ুনঃ দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে তারেকের নয়া মাস্টারপ্ল্যান
গতকালও তিনি বিএনপির মহাসচিবসহ দুই নেতার সাথে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি আন্দোলনের কৌশল এবং অন্য বিষয় নিয়ে কথা বললেও মায়ের অসুস্থতা নিয়ে কথা বলেননি।
বিএনপির ঢাকা মহানগরের একজন বর্ষীয়ান নেতা দুঃখ করে বলেছেন, যখন মা মৃত্যুশয্যায় তখন রাজনীতির চাণক্য, কূটচাল তার মাথায় আসে কীভাবে। এখন তো তার মায়ের রোগমুক্তির জন্য সবকিছু করা উচিত। আর এ নিয়ে এখন বিএনপিতেও ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
তারেক রহমান বিদেশে থেকে কী অর্জন করতে চান? সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ তার মা। যদি তিনি মায়েরই সেবা করতে না পারেন তাহলে দেশের সেবা কীভাবে করবেন, এই প্রশ্ন এখন সবার।
আরো পড়ুনঃ
- জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল?
- ৭ নভেম্বর: মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ও রাজাকারদের ক্ষমতায়ন শুরু করে জিয়া
- অসুস্থ মায়ের খোঁজ না নিয়ে দলীয় কাজে ব্যস্ত তারেক