ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচিত সহ-সভাপতি নূরুল হক নুরু এবং তার দলের সদস্যদের নিয়ে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে। 

কুমিল্লায় সহিংসতার ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো চট্টগ্রামেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ যুব–ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসবে এ ধরণের সহিংসতা বিচ্ছিন্ন ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এমন কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।

এসব ঘটনার মূলহোতা ও কারিগর হিসেবে লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নাম উঠে আসছে বিভিন্ন সূত্রে। আর তার হয়ে দেশে বসে ঘটনা পরিচালনায় নুরুর সম্পৃক্ততা এবং ইন্ধন নিয়েও

মিলছে তথ্য।

নুরুল হক নূরএ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরান রাখার খবর পেয়েই যুব ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা গোপন স্থানে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন।

সেই বৈঠকেই ১৫ই অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় শাহী জামে মসজিদের সামনে কথিত কোরান অবমাননার প্রতিবাদে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি ও মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেখানে আরও সিদ্ধান্ত হয়, টেরিবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান মালিক কর্মচারীদেরকে একাট্টা করা। এখানে উল্লেখ্য, এখানকার মার্কেটগুলোর দোকান মালিক ও কর্মচারীদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত সাতকানিয়া এলাকার। তাই তাদেরকে উসকানি দিয়ে উত্তেজিত করে মিছিলে শরিক করার পরিকল্পনা হয়।

দোকান মালিক ও কর্মচারীরা রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা মো. সাদেক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি কর্মচারীদের একটি সংগঠনেরও নেতৃত্বে আছেন। আর টেরিবাজার এলাকায় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নানের ভাতিজা ইমরান মাজেদ রাহুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

রাহুলও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ফলে এ প্রশ্ন অত্যন্ত ন্যায্য যে, এরা কার মদদে এ তাণ্ডব চালালো? দলের প্রধান নেতার গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া এতজন নেতা একসঙ্গে কিভাবে সহিংসতা চালান এটিও একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

[তারেকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপকর্ম ঘটিয়ে চলছে নুরু] 

এমতাবস্থায়, নুরু যদি সরাসরি নির্দেশ নাও দিয়ে থাকেন, তবুও তার নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত এ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দায় নুরুর কাঁধেও বর্তায় বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

এদিকে আরও জানা গেছে, কুমিল্লার সহিংসতার ঘটনার আগের দিন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের বৈঠক এবং চট্টগ্রামে নুরুর দলের ১০ নেতা গ্রেপ্তার একই সূত্রে গাঁথা কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।

কুমিল্লার ওই বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন অনেকেই। সেদিনের বৈঠকের পর তারা কে কোথায় ছিলেন, কী করেছিলেন জানা দরকার। পাশাপাশি নুরুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই ঘটনার উৎসমূলে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে নুরু নতুন দলের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি জামায়াত সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে।

তারেক রহমান
যে রেজা কিবরিয়ার পিতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন স্বচ্ছ ইমেজের সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যাকে হত্যা করেছে বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাসীরা, সেই রেজা কিবরিয়া কীভাবে তার পিতার রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে খুনিদের পক্ষেই রাজনীতিতে নামছেন, এ এক বিস্ময় সবার কাছে।

ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের গুরুত্বপূর্ণ পর্যয়ে থেকেও সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নুরুর মত উঠতি কারো দলে গিয়ে যুক্ত হওয়া- রেজা কিবরিয়ার বিচক্ষণতা এবং রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নুরুর দলের মাঝে রেজা কিবরিয়া কী পেয়েছেন, সেটাও প্রশ্ন উঠেছে।

যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তারপরও এমন সিদ্ধান্তে কি আসা যায় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্যই গণফোরামের পর এখন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের দ্বারস্থ হয়েছেন রেজা কিবরিয়া? তাহলে নুরুর যদি এসব অপকর্মে সম্পৃক্তথা পাওয়া যায়, তার দায় কি এড়াতে পারবেন রেজা?

আরো পড়ুন- বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক উসকানিতে পাকিস্তানের ইন্ধন

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তারেক রহমানের নেতৃত্বে একাধিক সিরিজ বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকগুলোতে একাধিক বার একটা ঘটনার ঘটানোর কথা বলা হয়।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১১ এবং ১২ অক্টোবর কুমিল্লায় তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। দুই পর্বের এ বৈঠকের প্রথম পর্বটি ছিল আনুষ্ঠানিক। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকটি খুবই গোপনে হয়। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে তা কেউ জানে না। এই বৈঠকের পরদিনই কুমিল্লার ঘটনাটি ঘটে। ফলে অনেক আলামতই তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কুমিল্লার ঘটনার জেরে চট্টগ্রামেও তাণ্ডব চলেছে। চট্টগ্রামের ঘটনায় নুরুর দলের ১০ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে নুরুর মদদ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে এতজন নেতা এই ঘৃণ্য কাজটি করেছে, এই যুক্তি ধোপে টেকে না।

নুরুর সঙ্গে তারেকের সম্পর্ক পুরনো। এর আগে, তাদের হোয়াটসঅ্যাপের বার্তার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এতবড় ন্যক্কারজনক ঘটনায় তারেক রহমানের সঙ্গে তার পেইড এজেন্ট নুরুর যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন- তারেক রহমান

* বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে সমঝোতা করে বড় ছেলেকে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেতার