
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে যে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনাগুলো ঘটছে সেখানে পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র হাত থাকতে পারে বলে দেশি বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
বাংলাদেশের সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। যার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। যার সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে রংপুরের পীরগঞ্জে। এখানে গুজব ছড়িয়ে হিন্দু এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনাগুলোকে এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না, তারা মনে করছে পরিকল্পিতভাবেই সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজত জড়িত তার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে কুমিল্লা ও ফেনীর ঘটনায় সরাসরি বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে রয়েছে। তবে শুধু যে দেশীয় অপশক্তিগুলো কাজটি করেছে এমনটি নয় বলেই মনে করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ সক্রিয় বলে দেশের শীর্ষ সকল গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে তার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। যার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীকে উসকানি দেওয়া। এখন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন বলে জানা গেছে।
এসব ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ বিরোধী কোনো চক্র অথবা বাইরের কোনো দেশের সম্পৃক্ততা, অর্থায়ন কিংবা প্রত্যক্ষ মদদ ও সহায়তা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশের যত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হয়েছিল ততবারই এর পেছনে পাকিস্থানের ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল। এ নিয়ে বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে সরাসরি পাকিস্থানের কাছে অভিযোগও করা হয়েছিল।
[বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলায় পাকিস্তানের ইন্ধন]
আরেকটু পেছনে ফিরলে দেখা যায়, ৮০’র দশকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে যাওয়া বাংলাদেশের কয়েকটি উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের হাজার হাজার সদস্যকে সামরিক ও নাশকতার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাকিস্থানি সামরিক বাহিনী নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।
সে সময় হেফাজত নেতা মামুনুল হকের পিতা যুদ্ধাপরাধী আজিজুল হক এবং তার খেলাফতে মজলিসের জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এছাড়াও আইএসআই’র প্রশিক্ষকরা বাংলাদেশে এসেও গোপনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়াও চট্টগ্রামের জঙ্গি নেতা ইজহারুল ইসলামও একই সময়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ পান আফগানিস্তানে।
এক পর্যায়ে ইজহারুল ইসলাম উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেন। তার হাত ধরে উপমহাদেশে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বা হাতে তৈরি বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পায় উপমহাদেশের হাজার হাজার জঙ্গি। ইজহারুলের বড় ছেলে হারুন ইজহারও একইভাবে প্রশিক্ষিত হন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের লালখান বাজারস্থ তার মাদ্রাসায় এমন বোমা তৈরির সময় বিকট বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এছাড়া ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা এবং কয়েকজন পাকিস্থানি প্রশিক্ষিত জঙ্গির সম্পৃক্ততার খবর পুরনো। ২১ আগস্টে ব্যবহৃত গ্রেনেড ও সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ প্রস্তুতিতেও আইএসআই সম্পৃক্ত ছিল সরাসরি। যা জঙ্গি মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে জানা যায়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতার ঘটনায় পাকিস্থানের সম্পৃক্ততার এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মামুনুল হক গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, মামুনুল হক নিয়মিত পাকিস্থানে যাওয়া-আসা করতেন। সেখান থেকে তিনি একটি জঙ্গি সংগঠনের হয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নির্দেশনা পেয়েছেন। মামুনুল হকের বোনের স্বামী পাকিস্থানের ওই জঙ্গি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি সেই সুবাদে পাকিস্থানের নাগরিকত্বও পেয়েছেন।
বোনের স্বামী পাকিস্থানেই অপর এক নারীকে বিয়ে করে নতুন নাম-পরিচয় নিয়ে অবস্থান করছেন। তার সুবাদেই মামুনুল হক পাকিস্থানি জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত হন। মামুনুল হক ছাড়াও হেফাজতের অনেক নেতা পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে।
[বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলায়
পাকিস্তানের ইন্ধন]
এসব বিষয় নজরে রেখে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে যেভাবে গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে সেটির পেছনে জড়িত কারা? ধর্ম অবমাননার ধুয়া তুলে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো, হত্যা করা ইত্যাদি পাকিস্থানে নিয়মিতই ঘটে। পাকিস্থানে অমুসলিমদের ঘরের পেছনের নর্দমায় কোরান ফেলে অবমাননার অভিযোগে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের খবরও অনেকের মনে আছে।
তাই বলা যায়, শুধুমাত্র বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী যে কাজটি করছে না এটি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এখানে পাকিস্থানের ভূমিকা কী এবং আইএসআই এখানে আদৌ জড়িত কি না সে ব্যাপারে আরো তদন্ত প্রয়োজন বলে বাংলাদেশের অন্তত দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।