
১ ডিসেম্বর, ২০১৮। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের ঘোষণা দেন ড. কামাল হোসেন। উদ্দেশ্য, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন করা। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা। এরপরই আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কুৎসা রটানোর এজেন্ডা হাতে নেওয়া হয়।
মূলত এই জোট গঠনের পেছনে লিয়াজোঁ হিসেবে কাজ করেছেন ড. কামালের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন। নিজের স্বামী ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সংযোগ ঘটান তিনি। এরপরই ড. কামালকে প্রধান করে বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে সরকারবিরোধী জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডেভিড বার্গম্যান।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্রিটিশ নাগরিক বার্গম্যানের অনধিকার চর্চা এবারই প্রথম নয়। এর আগে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কারণে, ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর, আদালতে দণ্ডিত হয়েছেন। এছাড়াও খুন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে, তা বিতর্কিত করতে ব্লগিং শুরু করেন বার্গম্যান। এমনকি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কিছু বিদেশি গণমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনে নামেন।
নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে এই বার্গম্যান। কিন্তু সাংবাদিকতার নৈতিকতার অবক্ষয়ের দায়ে বাংলাদেশের দুটি গণমাধ্যম থেকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে তাকে। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, এক টেলিভিশন টক শোতে বার্গম্যানের সাবেক সহকর্মী ও দেশের শীর্ষ অনলাইন বিডিনিউজের সম্পাদক বলেন, ‘বার্গম্যানের কাজে ‘সাংবাদিকতার চেয়ে অ্যাক্টিভিজম বেশি। ডেভিডের এক ধরনের এজেন্ডা আছে, সেটা বোঝা যায় তার সাথে কাজ করলে বোঝা যায়।’
একপর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে চলে যায় তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ নেগোশিয়েটর ব্যারিস্টার সারা হোসেনের স্বামী বার্গম্যান। এরপর লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে আন্দোলনে দেখা যায় তাকে। তারেক রহমানের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের দায়ৈ দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের এই চক্রটিকে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছে।
এমনকি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, বার্গম্যানের শ্বশুর ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের পরাজয়ের পর, ২০১৯ সালে নিজেই ‘নেত্রনিউজ’ নামে একটি অনলাইনপোর্টাল খোলেন বার্গম্যান। সঙ্গে নেন পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত তাসনিম খলিলকে। এরপর সেই নেত্রনিউজকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এই চক্রটি। মার্কিন সংস্থা এনইডি-এর মাধ্যমে এই নেত্রনিউজের ফান্ডিং দিচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দারা। এর প্রধান সম্পাদক তাসনিম এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন।
এ বছরের ২ জুন, আবারো বাংলাদেশের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা এক গ্রন্থের পক্ষে প্রচারণায় নামে নেত্রনিউজ। একারণে আবারো ফিরতে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ ও গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। এরপরে, ২০১১ সালে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর অর্থায়নে একটি বিকৃত গ্রন্থ প্রকাশ করেন মার্কিন নাগরিক শর্মিলা বসু। বইটিতে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধ হয়নি। পাকিস্তানের সেনারা কোনো ধর্ষণ বা খুনের ঘটনা ঘটায়নি। এমনকি যেসব নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, তাদের অশিক্ষিত বলে অভিহিত করেছেন শর্মিলা বসু। এমনকি বইটিতে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানি জেনারেলদের। এসব তথ্যের সোর্স হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ডেভিড বার্গম্যানকে।
মূলত করোনা মাহামারির মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মিডিয়া ক্যু ঘটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় এই চক্রটি। করোনা ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করায় তারা। ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ৬ জুন ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় সাড়ে সাত লাখ করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। ১১ জুন, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যা দেয় পত্রিকাটি। ১০ জুন ডয়চেভেলে জানায়, করোনার কারণে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন ইউরোপপ্রবাসী দুই বাংলাদেশি পিনাকী ভট্টাচার্য ও নেত্রনিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল। এরা মূলত বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত ও দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। সারা হোসেন ও বার্গম্যানের মধ্যস্ততায়, কিন্তু হুম্মাম কাদেরের টাকায় তারেক রহমানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার এবং দেশের ইতিহাস নিয়ে বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে যাচ্ছে তাসনিম খলিল ও বার্গম্যান গং।