
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন মিশনে নেমেছে প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট নেত্র নিউজ। ডেভিড বার্গম্যান ও তাসনিম খলিলরা এবার শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চরিত্রহননের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ফান্ড পাচ্ছে তারা। এমনকি বার্গম্যানের মধ্যস্থতায় ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা পৌঁছে গেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিক ও কিছু অনলাইন পোর্টালের কাছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েকটি দৈনিকের সম্পাদকদের যোগসূত্রের তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দারা।
ষড়যন্ত্রের জন্য ৫০০ কোটির প্রজেক্ট:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য নেত্র নিউজ গংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বিএনপি-জামায়াত চক্র। এরপর করোনাকালে বাংলাদেশে গণমৃত্যু হবে বলেও বিশ্বমিডিয়ায় অপপ্রচার চালায় তারা। এমনকি সরকার যখন মানুষের জান-মাল রক্ষায় ব্যস্ত, তখন উগ্রবাদীদের উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রাণান্ত চেষ্টা করে এরা। পাশাপাশি ফেসবুক-ইউটিউবেও উস্কানি ছড়াতে থাকে এদেরই আরেকটি অংশ। সেনানিবাস ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে সিনেম্যাটিক স্টাইলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তরুণ সেনাকর্মকর্তাদের বিপদগামী করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা চালায় এই ষড়যন্ত্রীরা।
কিন্তু বাংলাদেশের সচেতন জনগণ ও অনলাইনে সক্রিয় শিক্ষিত সমাজের কারণে দেশবিরোধী উস্কানি ও গুজব প্রতিহত করতে সমর্থ হয় সরকার। ফলে নতুন করে আবার ৫০০ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট নিয়েছে এই পলাতক দেশবিরোধীরা।
সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বার্গম্যানের মধ্যস্থতায় গত কিছুদিন ধরে দেশের কয়েকজন বিএনপিপন্থী ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিলের। নতুন মিশনের নতুন টার্গেট নির্ধারণ করেছে তারা। তাদের এবারের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো। এজন্য বাংলাদেশ থেকে বিএনপিপন্থী কয়েকজন সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করিয়ে নিচ্ছে তারা।
এটি বাস্তবায়নে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কয়েকজন সাংবাদিক ও সম্পাদকের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট করেছে এই চক্রটি। বিভিন্ন মাধ্যমে ইতোমধ্যে লেনদেন হয়েছে শত কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে ধাপে ধাপে লেনদেন হবে বাকি টাকা। এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশের বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েকটি দৈনিকের সম্পাদকদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
গোয়েন্দা আরো জানান, প্রাথমিকভাবে দুজন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাসনিম খলিলের উপর্যুপুরি যোগাযোগের তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। এমনকি আরো একজন অর্থদাতার সন্ধানও পেয়েছেন তারা। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে গভীর অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিককে।
এরআগে, ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল, লন্ডনের সেন্ট্রাল রোডের একটি রেস্টুরেন্টে বার্গম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসে তারেক রহমান। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা করে তারা। সেই বৈঠকেই তারেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার ডলার পান বার্গম্যান। এছাড়াও তাকে নিয়মিত অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে (পেইড এজেন্ট) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও প্রচারণা বিষয়ক লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় তারেক। ব্রিটিশ পরিচয় ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংস্থাগুলোতে সহজেই পৌঁছাতে পারে বার্গম্যান, একারণেই তাকে আস্থাভাজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গণ্য করে বিএনপি-জামায়াত চক্র।
বার্গম্যান ও তাসনিম খলিলদের কালো অধ্যায়:
বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লেখালেখির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে ড. কামালের ব্রিটিশ জামাই ডেভিড বার্গম্যান। এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতির দায়ে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হতে হয় তাকে। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগ দেয় তাসনিম খলিলরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে বাংলাদেশবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করাতে থাকে তারা।
এরই এক পর্যায়ে বাংলাদেশবিরোধী এই চক্রটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে মার্কিন গোয়েন্দাদের। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা এনইডি-এর অর্থায়নে তারা গড়ে তোলে প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট নেত্র নিউজ। সংবাদ প্রকাশের ছদ্মবেশে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রক্তস্নাত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার, সেনানিবাস ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে এই চক্রটি।
এমনকি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মতো তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছে তারা। ধর্মের নামে উগ্রবাদী উস্কানি দিয়ে, সরলপ্রাণ মানুষদের বিপদগামী করে, জনসমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, দেশকে উগ্রবাদীদের হাতে তুলে দিতে চায় তারা।
এই করোনাকালে মানুষের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ায় জন্য নিকৃষ্ট পরিকল্পনা ও অপপ্রচার চালাতেও দ্বিধা করেনি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের পোষ্য বার্গম্যান-তাসনিম খলিলরা। করোনার শুরুতে তারা গণমৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এরপর টিকা নিয়েও প্রোপাগান্ডা চালায় তারা। তারা বলেছিল, সরকার টিকা আনতে পারবে না। টিকা আসার পর, এই চক্রটি উগ্রবাদীদের মাধ্যমে গুজব ছড়ালো যে- এই টিকায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস লুকানো আছে, গোমূত্র মেশানো আছে প্রভৃতি। মানুষ যাতে টিকা না নেয়, সেজন্য সর্বোচ্চ অপপ্রচার চালিয়েছে তারা। তারা চেয়েছিল, টিকা না নিয়ে মানুষ গণহারে বের হয়ে আসুক ঘর থেকে, ভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ ঘটুক, লাশের নীরব মিছিলে স্তব্ধ হয়ে যাক বাংলাদেশ।
কিন্তু তরুণপ্রজন্ম অনলাইনে এসব গুজবের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকায় তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই এখন নতুন করে ষড়যন্ত্রের মিশন সেট করেছে তারা। তাদের এবারের টার্গেট প্রধানমন্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।
রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি:
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার খুনি, ধর্ষক ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দাসংস্থা আইএসআই। এমনকি বাংলাদেশের ভেতরে থেকেও এই বিচারকে বানচাল করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বিএনপি-জামায়াত চক্র। তবে গণমানুষের গণদাবির মুখে এদের অপচেষ্টা সফল হতে পারেনি। কিন্তু সেই ক্ষোভ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর পেছনে লেগে আছে এরা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বুকৃত মন্তব্য করার আদালতে দণ্ড পেতে হয় ড. কামাল হোসেনের ব্রিটিশ জামাই ডেভিড বার্গম্যানকে।
সেই ধারাবাহিকতায় আইএসআই-জামায়াত-বিএনপির পেইড এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে নোংরা খেলায় মেতে ওঠে তাসনিম খলিল ও বার্গম্যানের প্রোপাগান্ডা ওয়েবসাইট নেত্র নিউজ। সম্প্রতি আবারো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ন্যাক্কারজনক, বিকৃত ও আন্তর্জাতিকভাবে ধিকৃত এক লেখা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে। নেত্র নিউজের ওই লেখায় বলা হয়েছে- ১৯৭১ এর ২৫ মার্চরাতসহ পুরো মুক্তিযুদ্ধে কোনো গণহত্যা করেনি পাকিস্তানিরা, যুদ্ধাকালের ৯ মাসে কোনো বাঙালি নারী ধর্ষণের শিকার হয়নি, এমনকি ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি।
এমনকি ত্রিশ লাখ শহীদ ও এক কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মতো মানবেতর ঘটনাকেও তারা মানবিক বিপর্যয় বলে স্বীকার করেনি। নেত্র নিউজে প্রকাশিত ওই আর্টিকেলে ধর্ষণের শিকার বাঙালি নারীদের অশিক্ষিত বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি নেত্র নিউজে প্রকাশিত একটি প্রোপাগান্ডা আর্টিকেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেছে ডেভিড বার্গম্যান।