তারেক রহমান- দুর্নীতির রাজপুত্র কিংবা বরপুত্র। যার সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট কল্পকথাকেও হার মানিয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তারেক রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে বনানীর হাওয়া ভবনে বসে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন।



তারেক রহমানের ব্যবসায়িক জীবনের শুরু ১৯৯১ সালে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত নৌ পরিবহনের দুটি ব্যবসা ছাড়াও আরো অন্তত ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তবে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয় দেখানো হয়। এই আয়ের উৎস কি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারেকের ব্যবসার অংশীদার ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। ১৯৯৪ সালে মামুনের ছদ্মনামে শিল্প ঋণ সংস্থার প্রতিষ্ঠিত ১৬ কোটি টাকা নামমাত্র মূল্যে তাজ ডিস্টিলারিজ ক্রয় করে তারেক। এভাবে শুরু হয় তারেকের ব্যবসায়িক জীবন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার সুপারিশে দলের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পায়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দেয়া হয় মনোনয়ন। এমনকি পরে তার সুপারিশে কয়েকজনকে মন্ত্রীসভার সদস্যও করা হয়। তরুণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করতো সে। বড় অংকের সরকারি সব কেনাকাটা করতে হতো তারেকের মাধ্যমে। ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের একক কর্তৃত্বের অধিকারী হয়ে উঠেন তারেক রহমান। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয় হাওয়া ভবন। তারেক, মামুন, খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার ও শামীম ইস্কান্দারসহ গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কাছে যেনতেনভাবে টাকা উপার্জনই হয়ে ওঠে মুখ্য। রহমান শিপার্স থেকে ক্রমে প্রতিষ্ঠা হতে থাকে রহমান গ্রুপ, ওয়ান গ্রুপ, রহমান নেভিগেশন, চ্যানেল ওয়ান, ডান্ডি ডায়িং, ইউনিটেক্স এ্যাপারেলস, ক্রিমেন্টাইন লিমিটেড, ক্রোনোটেক্স লিমিটেড, তুরাগ ফিশারিজ, তাজ ডিস্টিলারিজ, দৈনিক দিনকালসহ নামে বেনামে নানা প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুনঃ জিয়া পরিবার ও বিএনপির দুর্নীতি
 
জিয়া পরিবার কতটি খাত থেকে মোট কত টাকা গ্রহণ করেছিল এবং কোথায় সম্পদ গড়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার উপায় নেই। তাজ ডিস্টিলারিজ ক্রয় করা হয়েছিল আবদুল্লাহ আল মামুন নামে। এতে তৎকালীন সময়ের হিসাবে সরকারের ক্ষতি হয় অন্তত ১১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি কোম্পানির বিপরীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ নেয়া হয়েছিল বিপুল অঙ্কের টাকার।  

তারেক রহমান ব্যবসায়ী বন্ধুদের মাধ্যমে বিনা প্রতিযোগিতায় সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে। এমনকি সরকারের সকল প্রকল্পে তারেক রহমানকে দিতে হতো মোটা অঙ্কের কমিশন। জার্মানীর সিমেন্সের সকল প্রকল্পে তারেক রহমানকে ঘুষ দিতে হতো ২% অনুপাতে। চীনের হারবিন কোম্পানী, একটি প্রকল্পের কাজ পেতে তারেক জিয়াকে ঘুষ দিতে হয়েছিল ৭,৫০০০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের আবুল মোনায়েম কন্সষ্ট্রাকশন একটি কাজ পেতে তারেক রহমানকে দিয়েছিল ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার। এমনকি মানুষ খুনের ব্যাপারও টাকার বিনিময়ে দফারফা করতেন তারেক জিয়া। খালেদার সম্মতিতে বসুন্ধরা গ্রুপের টেলিযোগাযোগ শাখার পরিচালক সাব্বির হত্যায় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের কাছ থেকে নিয়েছিলো ১০০ কোটি টাকা।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে টাকা পাচারসহ রয়েছে অসংখ্য প্রমাণিত অপরাধ। দেশের অগ্রযাত্রাকে উল্টোপথে ধাবিত করে ও জনগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের নায়ক তারেককে যদি দেশনায়ক বলে গণ্য হয় তাহলে অন্ধকার ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।