
বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে খোন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানদের পৃষ্ঠপোষক শক্তি হিসেবে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়, তাদের মধ্যে প্রধান হলো যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে আসছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের তৎকালীন (১৯৭১) নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারও তার প্রেসিডেন্টের মতো পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। পাকিস্তানি জান্তাপ্রধান ইয়াহিয়া খান ছিলেন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, ১৯৭১ সালের নভেম্বরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বাঙালি গণহত্যার কথা বলেন, তখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেছেন। তাই বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জন করার পর, নিক্সন-কিসিঞ্জার চক্র বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে নিয়োজিত করেন।
এদিকে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে চৈনিকবান্ধব পাকিস্তানি জান্তাদের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে হেনরি কিসিঞ্জারের। তাই বঙ্গবন্ধুকে তিনি পাকিস্তানি জান্তাদের মতো ব্যক্তিগতভাবেও শত্রু ভাবতে শুরু করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, বঙ্গবন্ধু যদি ‘বাঙালির বাঁচার দাবি ছয় দফা’ ঘোষণা না করতেন এবং পরবর্তীতেও যদি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আপষ মীমাংসা করতেন; তাহলে পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হতো না। বাঙালি জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেওয়ার কারণে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন নিক্সন-কিসিঞ্জারের চক্ষুশূল।
তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একপর্যায়ে চরম সক্রিয় হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগ এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। যুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয় বুঝতে পেরে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেন। এমনকি যুদ্ধের শেষ দিকে, পাকিস্তানের পরাজয় যখন নিশ্চিত, এরকম একটা সময়ে প্রবাসী সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাককে গোপনে ম্যানেজ করে ফেলেন তারা।
সময়টা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের বৈঠকে যাওয়ার কথা ছিল খোন্দকার মোশতাকের। একাধিকবার গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সিআইএ নিশ্চিত করে যে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের বৈঠকে গিয়ে মোশতাক পাকিস্তানিদের সঙ্গে একটা আপোষরফা করে ফেলবেন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে এই চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায় এবং খোন্দকার মোশতাককে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন প্র্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ফলে মার্কিনিদের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু মোশতাকের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের সূত্রে যুক্ত হয় সিআইএ।
সিআইএ-আইএসআই-মোশতাক-জিয়া কানেকশান
এদিকে রাজনীতিবিদ খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান মাহাবুব আলম চাষী, তাহের উদ্দীন ঠাকুরের মতো আমলারা। খোন্দকার মোশতাক নিজে চীন ও পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফলে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই মোশতাকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে শুরু করে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
অবসর জীবনে মার্কিন প্রেসিডেন্ড নিক্সন তার লেখা আত্মজীবনীতে সিআইএ-এর কাজের ধরন সম্পর্কে লিখেছেন, অন্য দেশে কোনো মিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সিআইএ নিজেদের সরাসরি সম্পৃক্ততা যতোটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাসকে ডিঙিয়েও নিজেদের মিশন বাস্তবায়ন করে সিআইএ। যে দেশে এরা নাশকতা করতে চায়, সেই দেশের স্থানীয় এজেন্ট এবং তৃতীয় কোনো দেশের ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে অধিকাংশ কাজ গুছিয়ে নেয় এই গোয়েন্দা সংস্থা।
বাংলাদেশেও ঠিক একই প্রক্রিয়ায়, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে; সিআইএর তত্ত্বাবধান এবং পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি তৈরি করেছিল আমেরিকা।
এদিকে, সেনাবাহিনীর চাকরিতে জেনারেল শফিউল্লাহর চেয়ে জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের সিনিয়র ছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়ার ক্ষুব্ধ হন জিয়া। পাকিস্তানের ইনটেলিজেন্সে কাজ করার সুবাদে, আইএসআই ও সিআইএর-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জিয়াউর রহমানেরও। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে এক সাংবাদিকের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার, সিআইএ-এর বাংলাদেশ স্টেশন হেড ফিলিপ চেরি এবং বাংলাদেশের খুনি চক্রটির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।
এর আগে, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের সময় অনেক আমেরিকান সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসেন। তাদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার অনেক লোকজন ছিল। তারা ঢাকায় এসে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য, পুলিশের ইন্টেলিজেন্স, সংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিকসহ অনেকের সঙ্গে ঘোট পাকাতে থাকেন। এরপর থেকে খোন্দকার মোশতার ও তার মিত্ররা আমেরিকার দূতাবাসে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। এদিকে আমেরিকার টাকায় পরিচালিত হলিডে পত্রিকার মাধ্যমে নিয়মিত অপপ্রচার ছড়ানোর মাধ্যমে জনমতকে ক্ষুব্ধ করে তোলার কাজও গতি পায় তখন।
পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একটি বিপদগামী অংশ। সেদিন সকালেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক। এরপরেই তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন জেনারেল জিয়াউর রহমানকে।
সিআইএ-এর নেটওয়ার্ক: গ্রিফিন-স্যাণ্ডারস-কিসিঞ্জার-মাহাবুব আলম চাষী
বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় ঢাকায় ছিলেন দুই সিআইএ এজেন্ট জর্জ গ্রিফিন এবং হ্যারল্ড স্যান্ডারস। ১৯৭৫ সালের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ডান হাত হিসেবে পরিচিত হ্যারল্ড সান্ডারসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জর্জ গ্রিফিন। স্যান্ডারস ছিলেন ১৯৭১ সালে মার্কিন নিরাপত্তি উপদেষ্টা কিসিঞ্জারের পরমর্শদাতা এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একজন ডেপুটি। ১৯৭৫ সালে কিসিঞ্জার যখন সেক্রেটারি অব স্টেট হলেন, স্যান্ডারস তখন প্রমোশন পেয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টে কিসিঞ্জারের সহকারী হন। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা হয়, তখন স্যান্ডারস ছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর অব ইন্টেলিজেন্স। এই সময়টাতেও তার ডান হাত হিসেবে কাজ করতেন জর্জ গ্রিফিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার কনস্যুলেটে সিআইএ-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এই গ্রিফিন। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে গ্রিফিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন মোশতাকের পররাষ্ট্র সচিব মাহাবুব আলম চাষী। সিআইএ তার একটি ছদ্মনাম দিয়েছিল, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার তাকে কোয়ায়ুম ছদ্মনামে নামে সম্বোধন করতেন। চাষী একসময় পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের হয়ে ওয়াশিংটনে কর্মরত ছিলেন, তখনই তার সঙ্গে কিসিঞ্জারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই মাহাবুব আলম চাষীর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রিফিনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে খোন্দকার মোশতাকের।
তবে, অনেক ষড়যন্ত্র করেও, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আটকাতে পারেনি নিক্সন এবং কিসিঞ্জারের আমেরিকান চক্রটি। এরপর তাদের নতুন মিশন শুরু হয়। সিআইএর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সরিয়ে দিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশকে বিপন্ন করে তোলার চক্রান্ত শুরু করে তারা। ফলে পাকিস্তানফেরত পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মচারী সবার সঙ্গে সখ্যতা বাড়াতে থাকে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে ১১৩ জন পুলিশ সদস্যকে ওপিএস ট্রেনিং প্রদান করে তারা। এর মধ্যে ৪০ জনই মুজিব হত্যার সময় বাংলাদেশের ইন্টেলিজেন্সে কর্মরত ছিলেন এবং তাদের প্রায় সবার সাথেই সিআইএর সম্পর্ক ছিল, পরবর্তীতে এদের ব্যবহার করেন জিয়াউর রহমান। তবে মুজিব হত্যার পর আমেরিকা এই ট্রেনিং বন্ধ করে দেয়। কারণ এই ট্রেনিং নিয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক কথা রটাচ্ছিলো তখন। ১৯৭৪ সালে আমেরিকার হাউস অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর রিপোর্ট থেকেই এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সেই কালরাতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, সিআইএ-এর বাংলাদেশের স্টেশন চিফ, খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমানরা কে কী করছিলেন…...
১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সময় কে কোথায় ছিলেন
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ভোর আনুমানিক পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে। কিন্তু সেই রাতে নিজ বাসভবনে ছিলেন না মার্কিন রাষ্ট্রদূর ইউজিন বোস্টার। তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন। সেই রাতে বোস্টার কোথায় অবস্থান করছিলেন, তা পরে আর জানা সম্ভব হয়নি। সিআইএ-এর বাংলাদেশের স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরি নিজে জানান- সেদিন ভোর সাড়ে চারটায় দূতাবাসে নিজের অফিসে গিয়েছেন তিনি (যদিও তার অফিস শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল নয়টায়) এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গোলা-গুলির শব্দ শোনার পরই তিনি আমেরিকায় বার্তা পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঘটনাস্থলের একটু দূরেই ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তা বিক্রমাদিত্যের বাসার নিকটেই অবস্থান করছিলেন মাহাবুব আলম চাষী ও তাহের উদ্দীন ঠাকুর, যাদের সঙ্গে বিক্রমাদিত্যের কর্মীদের দেখা হয় (গুলির শব্দ শুনে এই কর্মীরা বাসার বাইরে বের হয়েছিলেন কী হচ্ছে তা বোঝার জন্য)।
এরপর চাষী ও ঠাকুর দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন এবং তারা সরাসরি বাংলাদেশ বেতারে চলে যান। খন্দকার মোশতাকও বেতারে উপস্থিত হন তাদের সঙ্গে। সেখানে খন্দকার মোশতাক জানান, তিনি সারারাত নির্ঘুম ছিলেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেয়ে দ্রুত উপসেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান রহমানের কাছে যান সেনাবাহিনীর সিজিএস জেনারেল খালেদ মোশাররফ। জিয়ার বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন যে, কাকডাকা ভোরে জিয়া ক্লিন শেভড হয়ে সামরিক পোশাকে প্রস্তুত।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক-রশীদ-হুদা চক্র বিদেশে গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর এক সাক্ষাৎকারে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান জিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে তাদের একাধিকবার কথা হয়েছে। সেসময় জিয়া তাদের জানান, সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি নিজে সরাসরি এই মিশনে সম্পৃক্ত হবেন না, তবে তিনি তাদের নিজেদের মতো করে এগিয়ে যেতে বলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় ঢাকায় ছিলেন সিআইএর-এর জর্জ গ্রিফিন ও স্যান্ডারস নামের দুজন কর্মকর্তা। তাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল খুনি চক্রের। এমনকি ঢাকার কয়েকজন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকের সঙ্গেও তারা নিয়মিত ককটেল পার্টিতে নিয়মিত অংশ নিতেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেক পরে সিআইএ-এর বাংলাদেশ স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরি সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে জানান- মাহাবুব আলম চাষী, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, পুলিশ সিনিয়র কর্মকর্তা ও ইনটেলিজেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ বি সফদরদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এবং বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনীতিবিদ এই ঘটনার আগে মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
আর এই দলের হোতা ছিলেন খন্দকার মোশতাক, যিনি পাকিস্তানের আইএসআই এর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। তবে ফিলিপ চেরি আরো জানান- বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটা অংশই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
আর সেই দলের ওপর ছায়া হিসেবে কাজ কাজ করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি চক্রের সবাইকে পুরস্কৃত করেন তিনি।
সূত্র: কনফিডেনশিয়াল ডায়েরি (১৯৮১): বিক্রমাদিত্য।