
অবশেষে থলের বেড়াল বের হলো। তথাকথিত সাংবাদিক ও বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা মেশিন ‘নেত্র নিউজ’-এর সম্পাদক তাসনিম খলিলের দেশবিরোধী প্রচারণার কারণ ফাঁস হয়ে গেছে। নিউজের নামে ‘ফেক অ্যান্ড ফেব্রিকেটেড ভিউজ’ ছড়ানোর জন্য কার কাছ থেকে টাকা পান তিনি, তাও জানালেন নিজের মুখেই। বিদেশিদের টাকা নিয়ে অনলাইনে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে উগ্রবাদ উস্কে দিচ্ছেন তাসনিম খলিল, এমন অভিযোগ বেশ কিছুদিন থেকেই। কিন্তু বিষয়টি এতোদিন অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি।
তবে এবার নিজের সম্পাদিত আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েবসাইট ‘নেত্র নিউজ’-এর ফান্ডিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাসনিম খলিল জানান, মূলত বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় জোটের নেতা ড. কামাল হোসেনের জামাই ডেভিড বার্গম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি পত্রিকাটি চালান। এবং পত্রিকাটি চালানোর জন্য অর্থ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থাটির নাম -এনইডি (ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি)।
তাসনিম খলিলের দাবি, বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এনইডি বিশ্বব্যাপী এই অর্থায়ন করে। তবে তাসনিম খলিল এনইডি-কে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এবং এই সত্যটি আঁতকে ওঠার মতো। মূলত, বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে নীল নকশা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানটি (এনইডি)। অর্ধযুগ আগে ফেসবুকে উত্তেজনা ছড়িয়ে রাতারাতি ইউক্রেন সরকারকে উৎখাত করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা ও তাদের ইউক্রেনিয় এজেন্টরা। এরসঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত এই প্রতিষ্ঠান।
এখন তাদের চোখ বাংলাদেশের দিকে। আর বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিনিদের এই নটক্রীড়ার অংশ হয়েছেন তাসনিম খলিল। তবে তার পেছনে থেকে পুরো প্রক্রিয়াটিতে কলকাঠি নাড়ছেন গত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেনের ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জামাই ডেভিড বার্গম্যান। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হককে অনলাইনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাসনিম খলিল জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা এনইডি-এর অর্থায়নে ২০১৯ সালে ‘নেত্র নিউজ’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর থেকে এটি পরিচালনার সার্বিক খরচাপাতি সবই দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এনইডি কী এবং কীভাবে কাজ করে
এনইডি-এর ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক জেফরি টি রিচেলসনের বই থেকে। তিনি জানান, এনইডি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার একটি আন্ডারকাভার প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে কোনো দেশের কোনো গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে কোনো দেশের সরকারকে কৌশলে উৎখাত করার পটভূমি তৈরির কাজ করে এনইডি। এজন্য তারা ওসব দেশের স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নেগোশিয়েট করে বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণ ক্ষেপিয়ে তোলে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ওই দেশ ও সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওই দেশের ভাবমূর্তি খারাপ হয়ে যায়। দেশের অভ্যন্তরেও নৈরাজ্য বৃদ্ধি পায়। চূড়ান্তভাবে কেঁপে ওঠে সরকার। এভাবেই এজেন্ড সেট করে, মাঠ তৈরি করে, স্থানীয়দের সামনে রেকে, সুযোগ বুঝে হুট করেই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কোনো দেশের সরকারের পতন ঘটায় মার্কিন গোয়েন্দারা। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫মে শাপলা চত্বরে উগ্রবাদী সমাবেশ ঘটিয়ে একবার এই অপচেষ্টা করা হলেও, তা ব্যর্থ হয়। এরপর সম্প্রতি আবারো উগ্রবাদীদের মাধ্যমে সেই পটভূমি তৈরির কাজ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভের সাবেক সিনিয়র ফেলো জেফরি টি রিচেলসন দীর্ঘদিন কাজ করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা তথ্যের মহাফেজখানায় তার বিচরণ ছিল অবাধ। অনেক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা এসব তথ্যের আলোকেই বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন রিচেলসন। জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ বিষয়ে তিনি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাঠ দান করতেন। তার দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- ”দ্য ইউএস ইনটেলিজেন্স কমিউনিটি” এবং ”দ্য উইজার্ড অব লেংলি: ইনসাইড দ্য সিআইএ’স ডিরেক্টরেট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি”।
৫৯২ পৃষ্ঠার ‘দ্য ইউএস ইনটেলিজেন্স কমিউনিটি’ গ্রন্থের ১৬তম অধ্যায়ের নাম ‘কাভার্ট অ্যাকশন’। এখানে আমেরিকার গোয়েন্দাদের আধুনিক কার্যক্রম সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন রিচেলসন। তিনি জানান, স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ায় এবং ২০০১ সালের ৯/১১ এ ইসলামি উগ্রবাদীদের দ্বারা আমেরিকার টুইন টাওয়ার আক্রান্ত হওয়ারপর থেকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজের ধরনে মৌলিক পরিবর্তন আসে। সিআইএ, এফবিআই, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সি এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির কার্যক্রম নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়।
তিনি লিখেছেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরই মূলত বিশ্বব্যাপী আদর্শিক দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। এটি ছিল এমন একটি দ্বন্দ্ব, যার অবসান ঘটাতে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছড়িতে দিতে এবং সমাজতন্ত্র ও মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে গোপনে প্রচুর লেখা ও প্রকাশনা ছড়াতে হয়েছে।’
এই বই থেকে গোয়েন্দাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে আরো জানা যায়, ‘আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন দেওয়া বা কোনো কিছুর প্রচারণা কিছুটা গোপনে করা হতো। তবে এখন তা ছদ্মবেশে কিন্তু অনেকটাই প্রকাশ্যে করা হয়। বেসরকারি সংস্থা এনইডি ( ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি), ১৯৯০ সালে নিকারাগুয়ার ক্ষমতাসীন সান্দিনিস্তা বিপ্লবী গেরিলাদের বিরোধী-রাজনৈতিক শক্তিকে ইন্ধন ও সমর্থন করে।’ অবাধ নির্বাচন ও মার্কিন স্টাইলের গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে তারা বিভিন্ন দেশে এভাবেই সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে।
এই বইয়ের ২২তম অধ্যায়ে তিনি জানান, নিকারাগুয়া সরকারের পতনে এনইডি-এর মাধ্যমে মার্কিন ভূমিকার পুরো পরিকল্পনাটি। এই ব্যাপারে ১৯৮৯ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিরেক্টিভ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথা হুবহু তুলে ধরেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালের সেই নির্দশনায় বলা ছিল, ‘নিকারাগুয়ায় একটা অবাধ নির্বাচনের জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্যাপক পরিসরে প্রকাশভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নেবে। ক্ষমতাসীন সান্দিনিস্তাদের সরকারের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পনা গণতান্ত্রিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে সবধরনের প্রচেষ্টাই করা হবে।’ এবং ১৯৯০ সালে এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে তারা। প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে জনমত গঠন করে, তারপর রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে নিকারাগুয়া সরকারের পতন ঘটায় তারা। এই অপারেশনের সফলতা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রজন্মের গোয়েন্দা তৎপরতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক যোগ করে।
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিনিদের ষড়যন্ত্রের ইতিহাস খুবই জঘন্য
নিকারাগুয়ায় সরকার বদলের অভিযানটি সফল করতে তারা গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে ছদ্মবেশী নাম দিয়ে (ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি-এনইডি) একটি বেসরকারি সংস্থা চালু করে সিআইএ। এই এনইডি-নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই নিকারাগুয়ার প্রবল ক্ষমতাধর সাবেক বিপ্লবীদের সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি করা হয় এবং অবশেষে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্র। গণতন্ত্র রক্ষার মুখোশে তারা একটি দেশের সরকারের পতন ঘটায়। এভাবে গণতন্ত্র রক্ষার নামে সরকার পতনের জন্য ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, চিলিসহ অন্তত এক ডজন দেশে উগ্রবাদীদের দিয়ে সহিংসতা ছড়াতে মোটা অর্থ বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে, ষাটের দশকের শুরুতে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের সরকারকে উৎখাত করে পাহলভী বংশের রাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এটিও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি একটি পরিকল্পিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের ন্যাক্কারজনক ভূমিকাও ভুলে যাওয়ার মতো নয়। সেসময় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশ থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নেরই পরিচালিত হয় ‘এনইডি’, যে প্রতিষ্ঠানটি তাসনিম খলিলের নেত্র নিউজের খরচ দেয়, এবং নেত্র নিউজের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালায়। এজেন্সি ফর ইন্টারনাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর মাধ্যমে ১৯৯৫ সাল থেকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই বেসরকারি সংস্থার পুরো খরচ বহন করছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের দেওয়া অর্থগুলোই আনুষ্ঠানিকভাবে ডোনেশন হিসেবে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছে ‘এনইডি, যাদের মাধ্যমে তারা ওই দেশগুলোতে সরকারবিরোধী প্রচারণার অপারেশন চালাচ্ছে। যত হাত ঘুরেই আসুক, উন্নয়নখাতের নামে সরবরাহ করা এসব ফান্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল অনুমোদন লাগে। সুতরাং খুব বোকা না হলে এই ফান্ডিংয়ের কারণ এখন যে কেউ বোঝে। তাসনিম খলিল এসব ফান্ডকে মানবাধিকারের ছদ্মবেশে ঢাকার চেষ্টা করছেন। তবে এটি তার নিতান্তই একটি দুর্বল অপচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিনিদের সাম্রাজ্যবাদ ও বিভিন্ন দেশে দখলদারিত্বের নতুন মুখোশ এখন এসব ফান্ড ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। মার্কিন গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ রিচেলসন এসব মিশনের ব্যাপারে খোলামেলা লিখেছেন। এছাড়াও ডেভিড মারপলস এর ‘দ্য ময়দান রিভল্যুশন ইন ইউক্রেন’ বইটি থেকেও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিনিদের কৌশলী হস্তক্ষেপের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়।
ইউক্রেন স্টাইল: গুজব ছড়িয়ে হঠকারিতা সৃষ্টির যোগাযোগ কৌশল
১৯৯০ সালে নিকারাগুয়াতে পরিচালিত মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতার পর, এই পদ্ধতিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের সবচেয়ে সফল অপারেশন ছিল ইউক্রেনের সরকার উৎখাতে। ২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনের ইউরো-ময়দান (কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ার) গণবিপ্লবের ছদ্মবেশে সরকার উৎখাত করে তারা। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজিত করে তুলতো এবং সেই সঙ্গে রাশিয়াসমর্থিত সরকারের বিরোধীপক্ষকে নিয়মিত অর্থায়ন করতো। মানুষের মনে রোষ সৃষ্টির এক পর্যায়ে, এক রাতে হুট করে ফেসবুকে বিপ্লবের ডাক দেওয়া হয়, জমতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতা। এরপর উত্তেজিত জনগণের আবেগকে ব্যবহার করে, আকস্মাৎ ইউক্রেনের ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটাতে সমর্থ্য হয় আমেরিকার গোয়েন্দারা। ফলাফল, রাতারাতি সরকারের পতন!
প্রখ্যাত সাংবাদিক টেড গ্যালেন কারপেন্টার ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ পত্রিকায় এ ব্যাপারে লিখেছেন, ‘ইউক্রেন বিপ্লবের নামে এটি ছিল আসলে আমেরিকান ধোঁকাবাজি। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের রাজনীতিতে মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপের এই ঘটনাটি ছিল শ্বাসরুদ্ধকর ও হৃদয়বিদারক।’
এদিকে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীর চূড়ান্ত পরাজয়ের পর বাংলাদেশের সরকারকেও বদলানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। এজন্য তারা ইউক্রেনের ইউরো-ময়দান স্টাইলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুসারে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধারাবাহিকভাবে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিক্ষুব্ধ করে তোলার অব্যাহত চেষ্টা চলে। মূলত মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত এনইডি নামের এই বেসরকারি সংস্থাটি মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ছদ্মবেশে বিভিন্ন দেশের সরকার বদলের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশের সরকার বদলানোর গ্রাউন্ড তৈরির জন্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশান নামক একটি প্রতিষ্ঠানেও মার্কেন গোয়েন্দারা অর্থায়ন করেছে। একারণে গত নির্বাচনের সময় বিদেশি পর্যবেক্ষদের বিভিন্নভাবে সরকারের ব্যাপারে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে তারা।
মূলত কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তৎপরতার জন্য প্রকাশ্য একটি পটভূমি তৈরি করে এরা। এরই অংশ হিসেবে এনইডি-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নেত্র নিউজকে এবং কাড়ি কাড়ি টাকা পাচ্ছেন তাসনিম খলিল ও ড. কামাল হোসেনের জামাই ডেভিড বার্গম্যান। অবশ্য এরকম অপসাংবাদিকতার কারণে বাংলাদেশের দুটি পৃথক গণমাধ্যম থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন বার্গম্যান। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিকৃতির দায়ে আদালতে সাজাও পান এই ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ।
ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তৎপর বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত
শুধু আন্ডারগ্রাউন্ড নিউজপেপারে গুজব ছড়িয়েই থেমে নেই ষড়যন্ত্রকারীরা। ইউটিউবার কনোক সারোয়ার, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দীন খান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার, শহীদুল আলম, মাহমুদুর রহমানরাও ইউক্রেনের ইউরো-ময়দান স্টাইলের প্রচারণা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনলাইনজুড়ে সরকারবিরোদী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যাইহোক, এতাদিন অর্থায়নের ব্যাপারে চুপ থাকলেও, সম্প্রতি মুখ খুলেছেন তাসনিম খলিল। তবে তিনি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি তথা এনইডি-এর টাকায় দেশবিরোধী অপপ্রচারকে মানবতার দোহাই দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইন্টারনেটের এই যুগে এসব কপটতা ঢেকে রাখা যায় না। এখন বিশ্বব্যাপী সচেতন মানুষরা সবাই জানেন যে, এনইডি-এর সঙ্গে গণতন্ত্র বা মানবতার কোনো সম্পর্ক নেই, এটি একটি রাক্ষুসে প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন দেশে দেশে রক্তপাত ঘটায়। এনইডি মার্কিন গোয়েন্দাদের একটি প্রজেক্ট। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী গোপনীয় কার্যাবলীর সামর্থ্য বাড়ানোর পরিপূরক হিসেবে প্রকাশ্য নটক্রীড়ার একটি ছদ্মবেশী অংশ।
আর এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী চক্রের সঙ্গে উগ্রবাদী বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো একত্রে মিলে, অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে, দেশের সাধারণ মানুষকে হুট করে উত্তেজিত করে, একটি নাশকতাময় পরিবেশের মধ্যে ফেলতে চাচ্ছে দেশকে। তবে দেশবাসীর সামনে ধীরে ধীরে এসব হঠকারিতা প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে।