হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর তার অপরাধ জগতের অনেক কিছুই আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। তাকে গ্রেপ্তারের আগে বেশ কিছুদিন যাবৎ তাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নজরে রাখছিল। তার অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ডের নানা তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এসে পৌঁছানোর পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর পুলিশের কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বিরোধী সমালোচনা করতেন। মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে বেশ কিছু তথ্যের সত্যতার প্রমাণ মিলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের বেশকিছু নেতা মাদরাসার অর্থ ভাগবাটোয়া করে থাকেন। এই অর্থ দিয়ে কওমি মাদরাসার ভাগ্য বদল না হলেও নেতারা নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন। মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা পরিচালনার সাথে জড়িত মামুনুল হক। শুধু এই মাদরাসা নয় মামুনুলসহ হেফাজতের নেতারা এভাবে যাত্রাবাড়ী, বারিধারা, লালবাগের বেশ কয়েকটি মাদরাসা পরিচালনা করছেন। এসব মাদরাসার আয়-ব্যয় হিসেবে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে মাদরাসার নামে যেসব অনুদান এসেছে, সেগুলোর বিস্তারিত তথ্যাদিও নেই। পাশাপাশি মাদ্রাসাগুলো অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ নিয়ে বছরের পর বছর বিল পরিশোধ না করেই পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মামুনুল হক ২০১৩ সালের সহিংসতা এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায়ও নিজে সম্পৃক্ত ও উসকানি দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, মোদিবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই তাণ্ডবের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নেপথ্যে ছিলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। হেফাজত ইসলামের নেতা হলেও মামুনুল হক আলোচিত হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এরপর সর্বশেষ স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের সময়ে মামুনুলের বক্তব্যের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে কওমি মাদরাসার ১৭ জন ছাত্র নিহত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যার উদ্দেশ্যে, আঘাতে গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগের অভিযোগ -এর মামলায় মামুনুল হক সাতদিনের রিমান্ডে আছেন। পুলিশের একাধিক ইউনিট তাকে বিভিন্ন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঘুরে ফিরে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চে হেফাজতের নাশকতার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারের সমালোচনা ও বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়ায় নাশকতা হয়েছে। এই নাশকতাগুলোর দায় কার এমন প্রশ্নের উত্তরে মামুনুল হক বলেছেন, যেহেতু আমি নেতা, আমি তো দায় এড়াতে পারি না। নাশকতা ছাড়াও মামুনুলের পারিবারি জীবন ও শিক্ষাকতাসব বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশ জিজ্ঞেসাবাদ করলে অকপটে উত্তর দিয়েছেন মামুনুল। কোনো প্রশ্ন তাকে দুইবার জিজ্ঞেস করতে হয়নি।