বিএনপি

দেশের স্বার্থ ও মানুষের কল্যাণের চিন্তা না করে ধ্বংসের রাজনীতি করতে গিয়ে আজ ব্ল্যাকহোলে নিমজ্জিত বিএনপি। দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা হতাশ কর্মীরা জানেন না, নেতারা কী চায়, দলের লক্ষ্য কী! নেতারা মাঝে মাঝে লন্ডনী ইশারায় কর্মীদের চাঙ্গা করতে আজগুবি কথা ছড়ান। এই যেমন সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করলেন তার ৬০ লাখ নেতাকর্মী নাকি কারাবন্দি! আসলেই কি তাই?

সোনাভানের পুঁথির শ্লোক- লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, গনিয়া শুমার করে দুই-তিন হাজার। বিএনপির দাবিও কি তেমনি? সুনির্দিষ্ট নাশকতা মামলায় আটক কিছু কর্মীর কথা বলতে গিয়ে ৬০ লাখ-এর মত হাস্যকর দাবি করলেন ফখরুল? তার এই দাবি কতটা বাস্তব, বিশ্লেষণ করা যাক।

আরও পড়ুন : ব্ল্যাকহোলে বিলীন হওয়া বিএনপির করুণ পরিণতি

যদি আদৌ রাজপথে সক্রিয় ৬০ লাখ নেতাকর্মী থাকত, তবে বিএনপি কেন জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলো? মাত্র ১ লাখ কর্মী ২ কোটি জনসংখ্যার শহর ঢাকায় জড়ো হলে সরকারের পতন ঘটত এক ঘণ্টায়। পুরো দেশ অচল করে দেয়া যায় ৬০ লাখ কর্মী থাকলে। অথচ সামাজিক ও গণমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনে ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়ে পালায় বিএনপির কর্মীরা। ৬০ লাখ কর্মী থাকলে তারা তাদের তথাকথিত আপোসহীন নেত্রীকে কারামুক্ত করতে পারত, সরকারের সাথে আপোস করে বাসায় থাকতে হতো না খালেদা জিয়াকে। তাহলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর জেলে থাকার দাবি কি আদৌ বাস্তব?

বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এক দিকে সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেয়, বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার হরণকারী ‘ফ্যাসিস্ট’ খেতাব দেয়, আবার সেই সরকারের কাছেই সমাবেশের অনুমতি চায়, টিভিতে, গণমাধ্যমে ‘বাকস্বাধীনতা নেই’ বলে মিথ্যার বেসাতি সাজায় প্রতিদিন। ৬০ লাখ নেতাকর্মী থাকলে বিএনপিকে কেন এত হাহাকার ও কান্নাকাটি করতে হয়? হাজার পাঁচেক মানুষ ধারণক্ষমতার গরু বাজারের মাঠের সমাবেশকে ফটোশপ করে জনসমুদ্র বানাতে হয়? ৬০ লাখ কর্মীর পরিবার ও স্বজনের সংখ্যা হিসেব করলে ন্যূনতম ৫ কোটি মানুষ। এর অর্ধেকও যদি ভোটার হন, যেকোনো নির্বাচনের ফলাফল বদলে যেতে বাধ্য। অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। ৬০ লাখ নেতাকর্মী তবে কোথায়? তারা কি গায়েবি দলের গায়েবি কর্মী? কাজীর গরুর মত গোয়ালে অস্তিত্ব নাই কিন্তু কেতাবে আছে- এমন কিছু?

আরও পড়ুন : ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে খালেদার গুম নাটক ফাঁস!

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। বিএনপির দাবি অনুসারে তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন ধরে নিলে প্রশ্ন উঠবে, বাংলাদেশের কারাগারগুলোর মোট ধারণক্ষমতা কত? সেখানে যদি বিএনপিরই ৬০ লাখ কর্মী আটক থাকেন, তবে সাধারণ কয়েদির সংখ্যা কত? আর বিএনপির ৬০ লাখ কর্মী যুক্ত হওয়ার পর পুরনো কয়েদিদের ঠাঁই হয়েছে কোথায়? নাকি চোর, ডাকাত, ধর্ষক, খুনিসহ যত পুরনো কয়েদি আছে, তারা রাতারাতি বিএনপিতে নাম লিখিয়েছেন, আর তাদেরকে নিয়েই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ৬০ লাখের হিসাব দিচ্ছেন! অর্থাৎ যত অপরাধী, সবাই বিএনপির কর্মী? কী এক গোলমেলে ব্যাপার!

আরও পড়ুন : হাল ভেঙে দিশেহারা, চরম সংকটে বিএনপি

তবে এ কথাও তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যেকোনো অপরাধ- যেমন নাশকতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস বা জানমালের ক্ষতি করলে রাজনৈতিক কর্মী বিবেচনায় ছাড় পাবার সুযোগ নাই। মামলা হলে গ্রেপ্তার বা কারাবরণ করতে হবে। আন্দোলনের নামে বিএনপির বহু কর্মী নাশকতায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ জামিনে বেরিয়েও আসছেন। কিন্তু ৬০ লাখ কর্মী একইসময়ে কারাবন্দি- এটা নিশ্চয় হাস্যকর দাবি।

[বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী কারাবন্দি, মির্জা ফখরুলের দাবি কতটা বাস্তবসম্মত?]

গ্রীষ্মের তুমুল দাবদাহে গরু হারালে নাকি মাথা ঠিক থাকে না। বিএনপির সেই অবস্থা। দলের এক গায়েবি নেতা লন্ডনে, দল চালাচ্ছেন অযোগ্যরা। হতাশ কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে স্বপ্নেপ্রাপ্ত গায়েবি গপ্পো ছাড়ছেন মাঝে মাঝে। বাস্তবতা হলো, বিএনপি যতই ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করুক, তাদের কোনো জনসমর্থন নাই। এটা জেনেই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। বিদেশিদের বন্ধু ভেবে ধোঁকা খেয়েছে। দেশি যে তালেবররা বিএনপির পক্ষে লিখতেন, তারাও গায়েব। সব মিলে বিএনপি পুরোপুরি এতিম। এভাবে একদিন তারা বিলূপ্ত হয়ে যাবে। যে দল নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানে না, বুঝতে হবে তাদের রাজনীতি কতটা নিম্নস্তরের, কতটা দেউলিয়াত্বে ভরপুর।

আরও পড়ুন :