সরকার

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। এ নির্বাচনে ২২৩টি আসন পেয়ে সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে বর্তমান সরকারের নির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রীদের শপথ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে এই ভোটকে কেউ মেনে নেয়নি দাবি করে নতুন করে নির্বাচনের কথা বলছে ভোটে না আসা বিএনপি। নির্বাচনের আগে বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় যেতে চাওয়া দলটি এখন কোনো উপায় না পেয়ে আবার নতুন করে নির্বাচন চাইছে। সম্প্রতি দলটি নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের প্রতি চাপ দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে মিলছে না সারা।

বিএনপির এমন দাবি প্রত্যাখান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বরং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তারা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন, ভারত, ইতালি, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত। নির্বাচনের আগে সরকারকে গণতন্ত্রের নামে বেকায়দায় ফেলতে চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চায়। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমনটি জানান তিনি।

সর্বশেষ বিএনপির নতুন করে নির্বাচন দাবি করার বিষয়টি যে একেবারে অবাস্তব সেটিই বুঝিয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ভাবনা নাকচ করেন তিনি।

একজন সাংবাদিক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে বলেন, ‘আপনি যখন বলেন যে বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি, তার মানে কি যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদকে স্বীকৃতি দেবে না?’এমন ভাবনা নাকচ করে ম্যাথু মিলার দুবার বলেন, ‘না, না’।

এদিন নির্বাচন নিয়ে মিলার কিছু আপত্তির কথা জানালেও সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষেই কথা বলেন।

[সরকারকে অবৈধ ঘোষণায় কোন দেশের সমর্থন পেলোনা বিএনপি]

এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে সহিংসতার নিন্দা জানাই আমরা। সহিংসতার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ তদন্ত, এতে জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে আমরা উৎসাহিত করছি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহার করতে সব দলের প্রতি আহ্বান জানাই।’

এই আহ্বান নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের কাছেই করা হয়েছে। ফলে স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারকে মেনে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সর্বশেষ মিলারের বক্তব্য শোনার পর নতুন করে নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে বিএনপি’র যেই দাবি তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি না থাকার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গেল।

তবে তাই বলে থেমে নেই বিএনপি এবং তার লবিস্টার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের স্টেটমেন্টের পর থেকে বেশ হতাশ মুশফিক ফজল আনসারী জন ড্যানিলোভিজ সহ আরও অনেকে। সবচাইতে বড় হতাশা বিএনপির জন্য। তাদের লবিংয়ের কল্যাণে বিতর্কিত এএনএফইআরএল সহ ছয়টি বৈশ্বিক সংস্থা বিবৃতির মাধ্যমে নতুন এক নির্বাচনের আহ্বান জানায়। কিন্তু বিএনপি যাদের সবচাইতে নিকটতম বন্ধু বলে মনে করে সেই যুক্তরাষ্ট্র সহ কোন দেশেরই নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার বিষয় সাড়া মেলেনি। নির্বাচনের আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তাদের পক্ষে কোন সমর্থন আদায় করা সম্ভব হয়নি আন্তর্জাতিক এই গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ২২৩টি আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন। আর রেকর্ড ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

আরও পড়ুনঃ