
বাংলাদেশে চলমান হরতাল ও অবরোধে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে সম্প্রতি এক বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশন, যেখানে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে সংস্থাটি। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ৮৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। গত ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শীর্ষক ওই বিবৃতির ব্যাপারে নিজেদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশের মানবাধিকার কর্মী, যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারক, সংখ্যালঘু নেতা, লেখক এবং সামাজিক আন্দোলনের কর্মীরা।
বিশিষ্ট এ নাগরিকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, বিবৃতিটিতে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার সত্যতা প্রতিফলিত হয়নি এবং মানবাধিকার হাই কমিশনের মতো একটি সংস্থার পর্যবেক্ষণমূলক বিবৃতিতে এ ধরনের দায়মুক্তি হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে আরও স্পষ্টভাবে উৎসাহিত করে অপরাধীদের। তাই জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাটিকে নিজেদের পর্যবেক্ষণ পুণরায় বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
দেশের বিশিষ্ট এ ৮৬ নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “২৮ অক্টোবর থেকে বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত সম্মিলিতভাবে অবরোধ পালন করার কারণে দেশটিতে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।“ – মানবাধিকার হাই কমিশনের এ বিবৃতিটিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি একটি ভুল ধারণা প্রতিফলিত হয়, যেখানে নাশকতাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে মনে হয়। অথচ, প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের বাসভবনে নজিরবিহীন হামলায় গোটা জাতি হতবাক। প্রায় ৩৫ জন সাংবাদিককের হামলা করে আহত করার ঘটনাগুলোও জাতিকে নাড়া দিয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই সবকটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত, মুখোশধারী বা মুখোশহীন হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে তাদের স্পষ্ট সংযোগ খুঁজে পেয়েছে।
এছাড়াও ২৮ অক্টোবর থেকে হরতাল ও অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা যেভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তার চরম ধৈর্য দেখাচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এ বিবৃতিতে। অথচ, নির্বিচারে অভিযান ও গ্রেফতারের অভিযোগ আনা হয়েছে ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনের বিবৃতিতে।
৮৬ নাগরিকের এ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী; মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান; বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী; বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান; পিএসসির সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, অভিনেতা ও মঞ্চ পরিচালক রামেন্দু মজুমদার; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া প্রমুখ।
[জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের বিবৃতি নিয়ে অসন্তোষ]
এর আগে, সরকারও জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনের প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং “প্রমাণিত তথ্যের” ভিত্তিতে এটি সংশোধন করতে বলেছিল সংস্থাটিকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, “যদি ওএইচসিএইচআর-এর বিবৃতিগুলি অত্যন্ত যথার্থ না হয়, তবে তারা অচিরেই জনগণের সমর্থন, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।” জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও সংস্থাটির ‘বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের তালিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দুই ভারতীয় বিদ্রোহীর নাম খুঁজে পেয়েছিল, যাদের দুজনেই ভারতে বসবাস করছিলেন।
আরও পড়ুনঃ
- মির্জা ফখরুলের হাজার লক্ষ কোটির মিথ্যাচার
- কল্যাণমুখী রাজনীতিতে ব্যর্থ বিএনপির একমাত্র পথ গুজববাজি
- বাংলাদেশের জোরপূর্বক গুম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিবেদনের সমালোচনায় বিশ্লেষকরা