মিথ্যা-ফখরুল

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব ইস্যুতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। ফলে মিথ্যাচার অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে রাজনীতির মাঠ অস্থিতিশীল করা ছাড়া তাদের সামনে দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। আন্দোলন জমাতে ব্যর্থ হয়ে দলে নড়বড়ে অবস্থানে থাকা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কাজে অপর নেতাদের চেয়ে বেশি পারদর্শী। প্রচুর মিথ্যা বলতে পারেন দেখে দলের নেতা-কর্মীরা আড়ালে তাকে মিছা ফখরুল নামে ডাকেন। সেই ফখরুল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে একগাদা মিথ্যাচার করলেন। স্বভাবতই বিএনপির সংবাদ সম্মেলনগুলোতে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ রাখা হয় না, তাই তাদের মিথ্যা তথ্যগুলো কোনো সাংবাদিক চ্যালেঞ্জ করেননি, তথ্যসূত্রও জানতে চাননি। মূলত এসব সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় মিথ্যাচারকে পত্রিকার পাতায় বক্তব্য আকারে ছাপানোর উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে লন্ডনে গোপনে চিঠি পাঠালো বিএনপির একাংশ

► অর্থ পাচার ও লূটপাট নিয়ে মির্জা ফখরুলের মিথ্যা তথ্য:

এদিন ফখরুল কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে বলেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত আমাদের জানা মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাত থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে।

☼ ফ্যাক্ট:

লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে ফখরুল নিজের দেয়া গায়েবি তথ্যের পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হাজির করেননি। দাবি করেছেন বিভিন্ন পত্রিকার সূত্রের। অথচ পত্রিকায় আঁতিপাতি করে খুঁজেও এমন স্পেসিফিক ৯০ হাজার কোটি টাকা লুটের তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং পাওয়া গেছে, বিএনপি নেতাদেরই নিজস্ব বয়ানে নানারকম গায়েবি অভিযোগ। কখনো তাদের দাবি ১১ লক্ষ কোটি টাকা, কখনো ৮ লক্ষ কোটি টাকা, কখনো সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি এবং সর্বশেষ এবার সেটা এসে ঠেকেছে ৯০ হাজার কোটি টাকায়। বিএনপি নেতারা কখনো মেঠো বক্তৃতায়, কখনো টিভি টকশোতে এসব গায়েবি তথ্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু এসব তথ্যের পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র কখনই দেখাতে পারেননি তারা।

► অর্থ পাচার প্রসঙ্গে জিএফআই-এর প্রতেবদন নিয়ে ফখরুলের মিথ্যা তথ্য:

☼ ফ্যাক্ট:

ফখরুল ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে দাবি করেন, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যমূল্যের মিসইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এভাবে প্রতিবছর গড়ে ৮.২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, জিএফআই-এর প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিতর্কিত শিরোনামে কয়েক বছর ধরে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। যা পুঁজি করে বিএনপিসহ সরকাররবিরোধী বিভিন্ন পক্ষ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। জিএফআই মূলত সারাবিশ্বে মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করে। তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রা পাচার নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে। যাতে তারা কখনই কোন দেশ থেকে কত টাকা বছরে পাচার হয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য দেয়নি। বরং তারা তাদের ফর্মূলায় দেখানোর চেষ্টা করেছে, কোনো দেশের অর্থ পাচারের পরিমাণ সেদেশের অর্থনীতির পরিমাণের শতকরা ১০ ভাগ। একে তারা পটেনশিয়ালিটি বা সম্ভাবনা বলেছে।

অর্থাৎ এটা কোনো দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য নয়। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্য ও উৎপাদন এতটাই বেড়েছে যে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মাত্র ৯৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ বিলিয়ন ডলারে। জিএফআই-এর সেই গাণিতিক ফর্মূলায় হিসাব করলে বাংলাদেশ অর্থ পাচারের সম্ভাবনার হারও বেশি হবে। এটি তাই ডাটা নয়। জিএফআই নিশ্চিত নয়, বাংলাদেশ থেকে বছরে কত টাকা পাচার হয়। বরং তারা সবদেশের জন্যই গাণিতিক যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছে।

বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশের অর্থনীতি ছিল অনেক ছোট। তখন বাংলাদেশ থেকে এত বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে যে, সেই অর্থে ১৫ বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত নেতারা আয়েশি জীবন-যাপন করছে দেশে-বিদেশে। সেসময়কার পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ বর্তমান সরকার ফেরতও এনেছে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকোসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অর্থ পাচারের ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, সাক্ষ্য দিয়েছে কানাডিয়ান মাউন্টেন পুলিশও। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমএস এফ মরিয়ার্টি এবং হ্যারি কে টমাস ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি ও অর্থপাচার সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছেন। আরেক মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশি গোয়েন্দারা সাক্ষ্য দিতে আসছেন বাংলাদেশে। অথচ সেসময়কার বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় অর্থ পাচারের পরিমাণ হিসাব করলে জিএফআই-এর ১০% ফর্মূলার গণেশ উল্টে যাবে নিশ্চিত।

আরেকটি বিষয়, জিএফআই-এর প্রতিবেদনে অর্থ পাচারের পরিমাণ অনুসারে যেসব দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রথম ১০টিতে নেই বাংলাদেশ। তালিকার শীর্ষে রয়েছে- রাশিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মত বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো। ২০১৮ সালের সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬ তম। অথচ এই ফ্যাক্টগুলো বিএনপি বা সরকারবিরোধী দলগুলো এবং একইসাথে ক্লিকবেইট শিরোনাম করা গণমাধ্যমগুলো এড়িয়ে যায়। তাদের প্রতিবেদন কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্যে মনে হয় যেন অর্থ পাচারের সমস্যা শুধু বাংলাদেশেরই, বিশ্বের আর কোথাও ঘটেনা। এবং বাংলাদেশের শুধুই সরকারি দলের লোকেরা এসব করে।

অথচ প্রকৃত সত্য হলো, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রীসভার ১-২ জন ছাড়া বাকি সব মন্ত্রী-এমপি এমনকি একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাও শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছিল। আজও তারা সেসব সম্পদ খেয়ে শেষ করতে পারেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কোনো মন্ত্রী-এমপির নামে এমন অভিযোগ কেউ দেখাতে পারেনি। বরং কোনো সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়, কেউই ছাড় পায় না। বিএনপির অনেক বড় নেতার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির মামলা এখনো চলছে।

উল্লেখ্য, প্রথম আলো এবং বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০০১-২০০৬ মেয়াদের ৫ বছরে ৪ লক্ষ কোটি টাকা লুটের হদিস মিলেছে। এর বাইরে রয়ে গেছে অকল্পনীয় পরিমাণ আর্থিক অনিয়মের হিসাব। সেসময় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, একটি প্রকল্পেই ২০ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। এমন অনিয়ম-দুর্নীতি-পাচারের তথ্য অসংখ্য। বিএনপি-জামায়াত আমলের সাগরসম দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশ পর পর ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যে লজ্জাজনক ইতিহাস বিশ্বের আর কোনো দেশের নেই। আর বর্তমানে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খুঁজতে গেলে তালিকার অনেক নিচে নামতে হবে।

► বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মির্জা ফখরুলের মিথ্যা তথ্য:

নিজেকে অর্থনীতিবিদ পরিচয় দিয়ে মির্জা ফখরুল মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, দেশে নতুন বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়নি। তার দাবি, বিনিয়োগ কমে গেছে আগের তুলনায়।

☼ ফ্যাক্ট:

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুসারে ২০২২ সালে সারা বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। গত বছর দেশে এফডিআই প্রবাহ ২০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ কোটি ডলার, যা এখন স্থানীয় মুদ্রায় ৩৭ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ১০৮.৫০ টাকা ধরে)। দেশের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই। গত ৩৩ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৩৬১ কোটি ডলারের এফডিআই আসে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে এফডিআইপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় যেখানে এফডিআই প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে ২০ শতাংশ বেড়েছে। সব এলডিসি দেশের পাওয়া মোট এফডিআইয়ের ৭০ শতাংশই পেয়েছে মাত্র ৫টি দেশ। এর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ।

[সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো: https://www.prothomalo.com/business/industry/dy3u65kcw2]

আরেকটি তথ্য, জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ইউজি আন্দো জানিয়েছে, ৭২% জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে চায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আসিয়ান ও উত্তর-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের দিক থেকে জাপানি কোম্পানিগুলোর প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৪৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলছে ২০২২ সালে তারা পরিচালন মুনাফা করবে। আর ৬০ শতাংশ কোম্পানি ২০২৩ সালে এই মুনাফা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে। এ কারণে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে।

ফখরুলের দাবি অনুসারে দেশে নাকি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। আসুন দেখা যাক প্রকৃত পরিস্থিতি কী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের ২৭শে আগস্ট ২০২৩-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। আগের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চ মাসে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিলো ২৬ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা ৩ মাসে কমেছে ৯০ হাজার। তাই এখন বেকারত্বের হার কিছুটা কমে ৩.৪১ শতাংশ।

[সূত্র: ডয়চে ভেলে: https://www.dw.com/bn/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%A4/a-66642280]

দৈনিক প্রথম আলোর ১০ই এপ্রিল ২০২৩-এর প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়েছিল, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। অর্থাৎ ৩.৫১ শতাংশ। যা আগের তুলনায় কমেছে। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপে এই তথ্য মিলেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪.২ শতাংশ। সুতরাং ৫ বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্ব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। [সূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)]। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে ১ কোটি কর্মসংস্থান বেড়েছে। জরিপ বলছে, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার মানুষ আছেন। কাজে নিয়োজিত আছেন ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৭ সালে যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। এর মধ্যে ৯৯ লাখ নতুন কর্মসংস্থান বেড়েছে। গত ৬ বছরে ৬৭ লাখ ২০ হাজার তরুেণর কর্মসংস্থান হয়েছে।

[***** প্রথম আলোর প্রতিবেদনের এই অংশে শিরোনামে ‘লাখ’ শব্দটা মিসিং *****]

উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণার তথ্যের বরাতে বলা হয়েছে, কোভিডের সময়ে ঢাকা শহরে দারিদ্র্য কমেছে। এসময় দারিদ্র্যের হার ১৫% এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০%-এর নিচে নেমেছে। সরকার পুরোপুরি লকডাউনে যায়নি, শিল্পকারখানা বন্ধ করেনি, তাই বেকারত্বের হার বাড়েনি, কর্মহীনের পরিমাণ বাড়েনি, উল্টো কমেছে।

[সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো: https://www.prothomalo.com/business/economics/a20qc6kxfy]

► দেশের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে মির্জা ফখরুলের বিষোদগার:

ফখরুল বলেন, জনগণ শুধু নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথেও সরকার প্রতারণা করছে। এমন একটা ন্যারেটিভ খাড়া করেছে যে, বাংলাদেশ রোল মডেল হয়ে গেছে, বার বার এই কথাটা বলতে থাকে, জোর দেয় এবং বিভিন্ন সেতু, উড়াল সেতু, টানেল, মেট্রোরেল উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি বলতে চায় যে এটা উন্নয়নের দিকে চলে গেছে। এটা আমার কথা নয়, আমি যদিও অর্থনীতির ছাত্র, কিন্তু অর্থনীতি বিষয়ক যে সংস্থাগুলো আছে, যারা রিসার্চ করে, পড়াশুনা করে, তারা বলছে, এটা পুরোপুরিভাবে হলো, ফাঁপা একটা বিষয়। জনগণের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।

☼ ফ্যাক্ট:

মির্জা ফখরুল তার মেঠো বক্তব্যের পেছনে কোনো যুক্তিতর্ক বা ফ্যাক্ট তুলে ধরেননি। সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, টানেল, মেট্রোরেলের মত যোগাযোগ অবকাঠামো, বিশালাকৃতির বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সারাদেশে শত শত প্রকল্পের মাধ্যমে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে, সেসব কীভাবে জনগণের সাথে প্রতারণার বিষয় হলো, এর পেছনে ফখরুলের কোনো যুক্তি নাই। বিষয়টা অনেকটা এমন, যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করি, তাই তার সরকারের কর্মপরিকল্পনাগুলো পছন্দ না- ফখরুলের মন্তব্য এই ধাঁচেরই।

আরও পড়ুন : সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের সফলতা দেখে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে মরিয়া মির্জা ফখরুল

জনগণের যাতায়াতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে বহুমুখী সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলো কী দেশবিরোধী প্রকল্প? এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী তো দেশের মানুষই। এমন নয় যে, এসব মেগা প্রকল্প শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য করা হচ্ছে। দেশের প্রতিটি মেগা প্রকল্পে কাজ করছেন এদেশি শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা, যারা বিদেশি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের অধীনে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় সক্ষম হাজারো তরুণ রাশিয়া থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন, যারা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যদেশেও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে সক্ষম। এমনকি অন্যদের প্রশিক্ষণও দিতে পারবেন। তারা ইতিমধ্যে এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র পরিচালনা করছেন ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি তরুণরা। পদ্মা সেতুর মত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পে বাংলাদেশি যেসব প্রকৌশলী বিদেশিদের তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন, অনুরূপ প্রকল্পে বাংলাদেশিরাই নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। এই দক্ষতা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয় এমনি এমনি তৈরি হয়নি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শুধুমাত্র দেশের মানুষ সুবিধা পাবেন- তা নয়, একইসাথে আমাদের বিপুল দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। যারা আগামীতে এমন প্রকল্পগুলোতে প্রথম সারি থেকে নেতৃত্ব দেবেন।

মির্জা ফখরুলদের আমলে এসব কেউ কল্পনা করেনি। তাদের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নেতিবাচক প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে। বলা হয়েছিল, সাইফুরের দূরদৃষ্টি নেই, তিনি পুরনো ধ্যান ধারনায় বিশ্বাসী। একই কারণে খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকীও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূতের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাইফুর রহমানের মনোভাব ছিল- দেশ বেশি স্বাবলম্বী হয়ে উঠলে বিদেশি সহায়তা কমে যাবে। কারণ, বিএনপি-জামায়াত আমলে বিদেশি সহায়তা নির্ভর অর্থনীতি ছিল বাংলাদেশের। বাজেট পাস হতো সহায়তা প্রাপ্তি সাপেক্ষে। বিএনপি বিদেশি সংস্থার ফর্মূলায় সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র লিজ দেয় অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান নাইকোকে। দুই দফা সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যার ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ১২ কোটি ডলার বাংলাদেশ আজও পায়নি।

বাংলাদেশ এখন আর বিদেশি ফর্মূলায় চলা দেশ নয়। বিদেশি সংস্থা- যাদের আগে দাতা সংস্থা বলা হতো, এখন তাদের বলা হয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এসব সংস্থা বর্তমান সরকারকে নানাভাবে চাপ দেয়ার চেষ্টা করেছিল তাদেরই ফর্মূলা মেনে চলতে। কিন্তু শেখ হাসিনা জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই এমন প্রকল্প হাতে নেন, যা জনকল্যাণকর, যা লাভজনক এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তিনি সিএনএন-কে বলেছেন, সরকার অকারণে উচ্চাভিলাষী ঋণ বা মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো প্রকল্প বা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি যা থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব। শেখ হাসিনা সংসদেও বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলো যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে নেওয়া হয় বলে বাস্তবায়নে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। প্রকল্পগুলো নেয়ার আগে যথাযথ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা হয়। তাই প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

[মির্জা ফখরুলের হাজার লক্ষ কোটির মিথ্যাচার, তথ্যসূত্র চাইলেই মুখ বেজার!]

বিদেশিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয় না আর বাংলাদেশকে, ফলে ৭১০ নং তালিকাভুক্ত রুহুল আমিন চখা রাজাকারের পুত্র ফখরুলদের এত গাত্রদাহ। বিদেশিদের গোলামি করতে করতে ফখরুলদের মেরুদন্ড বলে আর কিছু অবশিষ্ট নাই। যে দলের নেতারা বলতে পারে পাকিস্থানই ভালো, সেদেশের কাছ থেকে দেশপ্রেমও আশা করা বৃথা।

পরিশেষ:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মিথ্যাচার নির্ভর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সাধারণ পাঠকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা ফখরুলের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুল একজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষ হয়েও নিজের গদি বাঁচাতে যেভাবে মিথ্যাচার করছেন, এটি তার মতো নেতার মুখে মানায় না – মির্জা আব্বাস

তাদের মতে, রাষ্ট্রে এ ধরনের গুজব মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচারে জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আইন থাকা উচিত। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে রাজনীতির মাঠে যা-তা বলে দিলেই হবে না, এসব বক্তব্যের পক্ষে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে হবে। আর এসব প্রমাণে ব্যর্থ হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জাতিকে বিভ্রান্ত করার দিন শেষ, এটা মির্জা ফখরুলদের মত বয়স্ক নেতাদের বোঝা উচিৎ।

আরও পড়ুন :