জঙ্গিবাদ

রাষ্ট্রীয় মদদে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ জন্ম দেয়া এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। জঙ্গিরাষ্ট্র পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৮০’র দশকে আফগানযুদ্ধে অংশ নেয়া উগ্রবাদী ধর্মান্ধগোষ্ঠীর নেতাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলা হয় আল-কায়েদার অনুকরণে। এজন্য রসদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে পাকিস্থান। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরে নাশকতা চালানো, ভারতকে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে পাকিস্থানের নোংরা রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ব্যবহার করা।

আরও পড়ুন : আবারও বিএনপি-জামায়াতের হত্যার রাজনীতি : ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেল শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী

এজন্য খালেদা জিয়া সরকারের মাধ্যমে জঙ্গিদের জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তাও দিত আইএসআই। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আজ্ঞাবহ কয়েকজন কর্মকর্তা এসব তত্ত্বাবধান করতেন। জেএমবিসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের নেতারা তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেত, তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এমনকি কুখ্যাত জঙ্গি বাংলা ভাই’র সাথে তারেক রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। বাংলা ভাই তারেককে মামা সম্বোধন করত। এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছিল মুফতি হান্নানসহ অপর জঙ্গিদের জবানবন্দিতে। বিএনপি নেতারা এসব অস্বীকার করলেও উইকিলিকস-এ ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন তারবার্তায় তা প্রমাণ হয়।

আরও পড়ুন : জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন খালেদা!

মার্কিন সেই ফাঁস হওয়া গোপন তারবার্তা:

তারবার্তা নং- ০৫, ঢাকা- ৬১৯০, ১৫ই ডিসেম্বর ২০০৫; সময়: ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, শ্রেণি: কনিফডেন্সিয়াল
বিষয়: খালেদার একজন প্রধান পরামর্শক ভিন্নমত

১. (সি) সারসংক্ষেপ: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্দরমহলের মানুষ সিদ্দিকী চার্জকে বলেন, বিএনপির কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদ জামায়াতে ইসলামিকে ক্ষমতাসীন জোট থেকে বাদ দিতে চান। তারা স্বীকার করেন যে বাংলাদেশ সরকার জেএমবির সন্ত্রাসবাদী সামর্থ্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অভিযোগ করেন যে তারেক রহমান জেএমবির প্রধান বাংলা ভাইয়ের দ্বিতীয় সহযোগীর মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। তারেক ও জামায়াতে ইসলামির কঠোর সমালোচক সিদ্দিকী। সারসংক্ষেপ শেষ।

২. (এসবিইউ) ১৪ই ডিসেম্বর চার্জ দে অ্যাফেয়ার্স জুডিথ শামাস প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (নোট গ্রহণকারী) তার সঙ্গে ছিলেন।

৩. (সি) সিদ্দিকী তাৎক্ষণিকভাবে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) উদ্দেশে আক্রমণের ঝড় তোলেন। তিনি তার সরকারের ভুল পদক্ষেপগুলোর কথা স্বীকার করেন। বিশেষত, জেএমবির সন্ত্রাসবাদী শক্তি-সামর্থ্য ও সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে না পারা এবং জেএমবির উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের প্রতি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সুরক্ষা প্রদান সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘জেএমবি জামায়াতে ইসলামির সেই সব সাবেক সদস্য নিয়ে গঠিত, যারা বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ঐক্য গড়ার সময় জামায়াত থেকে বেরিয়ে গেছেন। জামায়াতের কিছু সদস্য জেএমবির সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।’ জানতে চাওয়া হলে সিদ্দিকী কারোর নাম জানাতে বা আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে রাজি হননি। তিনি আরও বলেন, ‘সন্দেহ নেই যে কিছু বিদেশি জেএমবিকে সহযোগিতা করছে। অস্বস্তিকর একটা সন্দেহ আছে যে, এটা ‘বিগ ব্রাদারের কাজ’।

* [বিএনপির এই বিগ ব্রাদার হলো পাকিস্থান]

৪. (সি) চার্জ সিদ্দিকীকে বলেন, জেএমবির সঙ্গে ভারতের বা আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা দাবি করে সরকারের চালানো প্রচারের ফলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান বিষয়ক বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে দেখা হবে তার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ভিত্তিতে, যেমন- তারা জেএমবির উর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে কি না, ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করতে পারছে কি না এবং ক্ষমতাসীন জোটের ব্যক্তিদের সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগসূত্রের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারছে কি না। তিনি উল্লেখ করেন, জেএমবির ব্যাপারে তদন্তকাজে টেকনিক্যাল সহযোগিতার জন্য আমাদের দেওয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের নিরুৎসাহে আমরা হতাশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী উদ্যোগে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

আরও পড়ুন : এক্সক্লুসিভ: জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক, লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

৫. (সি) সিদ্দিকী জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে বিএনপির সখ্য নিয়ে বিএনপির ভেতরে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদ আছেন, যারা জামায়াতে ইসলামিকে জোটের শরিক হিসেবে রাখার পক্ষপাতী নন।’ তিনি জানান, বাংলাদেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামিকে বিএনপির জন্য একটা বিড়ম্বনা হিসেবে দেখে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি তার উদ্বেগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানের পক্ষে জামায়াতে ইসলামির ন্যাক্কারজনক সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি আমার সারাজীবন ধরে যার পক্ষে দাঁড়িয়ে আছি; জামায়াতে ইসলামি তা অস্বীকার করে।

৬. (সি) সিদ্দিকী বলেন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বাংলা ভাইয়ের বিখ্যাত সহযোগী কামরুলকে (প্রকৃত নাম খামারু) গ্রেপ্তার করেছিল, কিন্তু উত্তেজিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর অভিযোগ করেন যে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি দ্রুতই তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন; প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও উত্তরসুরি কাজ করছেন ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর কথামতো। তিনি তারেক সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ‘উইন্ড টানেল’ শব্দদুটি ব্যবহার করেন, এটা তার অফিস ‘হাওয়া ভবন’-এর একটা অনুবাদ। সিদ্দিকী আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘উইন্ড টানেলের কিছু বাতিকগ্রস্ত বন্ধুবান্ধব আছে।’ অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে তিনি তাদের কথা শোনেন।

[মার্কিন গোপন তারবার্তা : জঙ্গিবাদে মদদ ও জামায়াতের সাথে জোট ইস্যুতে তারেকের বিরুদ্ধে বিএনপির ৫০ এমপির অবস্থান]

৭. (সি) মন্তব্য: কামাল সিদ্দিকী তারেক রহমান সম্পর্কে আমাদের কাছে বহুবার অভিযোগ করেছেন। তিনি মনে করেন, তারেক অভদ্র ও বিপজ্জনক; কিন্তু তিনি (সিদ্দিকী) প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির অনুগত।

জুডিথ শামাস

তথ্যসূত্র- https://wikileaks.jcvignoli.com/cable_05DHAKA6190 

আরও পড়ুন :