জঙ্গি

বিএনপি এখন নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই। দাবি করছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম নেতার নাকি ঈমান-আকিদায় সমস্যা! সুন্নী মতাদর্শী এই নেতাদেরকে জঙ্গি বলেও দাবি করছে বিএনপি। প্রকারন্তরে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী এই নেতাদেরকে আহলে হাদিস এবং সালাফিস্ট দাবি করে তাদেরকে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর মতাদর্শী দাবি করা হচ্ছে।

ইসলামে বা সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেই কেউ জঙ্গি হয়ে যাবে- এটা কোনো যুক্তির কথা নয়। বিশ্বের শত কোটি মুসলিমকে জঙ্গি বলা যাবে? বিএনপি তাদের পেজ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সালাফি, আহলে হাদিস ও সুন্নী বিষয়ে যে জগাখিচুড়ি প্রকাশ করেছে, তা অনেকের মাথায় ঢুকবে না। বরং বিভ্রান্ত হবে। সেজন্য এ বিষয়ে হাক্কানি আলেমদের বক্তব্য জেনে নেয়া যাক।

সালাফি কারা? আহলে হাদিস কী?

Salifiসালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ। আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ, যাদের ব্যাপারে রাসূল (স.) বলে গিয়েছেন, তারা হলেন উম্মতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত। আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়। সালাফিরা হাম্বলি মাযহাবকে বেশি অনুসরণ করলেও কখনো নির্দিষ্ট কোনো মাযহাব আঁকড়ে থাকেন না, আবার কোনো মাযহাবকে ফেলেও দেন না। সালাফিবাদে হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি – এই চার মাযহাবকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আহলে হাদিস-এর অর্থ হাদিসের অনুসারী। যারা যে কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্তের জন্য ফিকাহ শাস্ত্র আর প্রচলিত মতবাদের বদলে সহীহ হাদিসের ওপর নির্ভর করেন, তাদেরকে আহলে হাদিস বলা হয়। সালাফি, আহলে হাদিস এবং ওয়াহাবিদের মধ্যে পার্থক্য অল্প। যেমন, সৌদি আরবের সালাফি আর বাংলাদেশের আহলে হাদিস অনুসারীদের মাসআলাগত পার্থক্য তেমন নেই। তারা অবশ্যই সুন্নী। প্রকৃতপক্ষে তারাই সুন্নাহ এর সবচেয়ে কঠোর ধারক এবং বিদআত এর বিরোধী।

তাহলে আহলে হাদিস কিংবা সুন্নী মতাদর্শী বা সালাফিবাদের অনুসারী হলেই কি তাদের জঙ্গি বলা যাবে? বিএনপি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা করছে। বিএনপির এই কর্মকাণ্ড অনেক পুরনো। তাদের রক্তেই মিশে আছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি, উগ্রবাদীদের সাথে মিলে রাজনীতি করা, দেশে গুজব-অপপ্রচার চালিয়ে সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। আসুন সেই ইতিহাসও জেনে নেয়া যাক।

আরও পড়ুন : জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন খালেদা!

দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া এবং পৃষ্ঠপোষক বিএনপি :

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ ধর্মীয় রাজনীতির বিষবাষ্পে ডুবে গিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করা বিষাক্ত রাজনীতি বন্ধ করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারণ ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশ ভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষত এই উপমহাদেশকে অশান্ত করে তুলেছিল। একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে ৬-৮ লাখ নারীর সম্ভ্রম নষ্টে পাকিস্থানিদের পাশে গোলামের দায়িত্ব পালন করেছিল ভণ্ড মওদুদীবাদের আদর্শের অনুসারী জামায়াতে ইসলামী। সেই দলটির পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে, নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে ধর্মভিত্তিক দল গড়ে পুনরায় এদেশে বিষাক্ত রাজনীতির সুযোগ করে দেন জিয়া। তার হাত ধরে এদেশে আবারও ধর্মীয় সংঘাতের যাত্রা শুরু হয়।

আরও পড়ুন : বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সহিংসতা ভোলেনি দেশবাসী; আতঙ্কিত থাকতো পুরো দেশ

1236201_161336374061916_1606656892_nএকদিকে জুয়া আর মদ বিক্রির লাইসেন্স দিয়েছিরেন, আরেকদিকে ধর্মীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এদেশকে উগ্র মতাদর্শীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন তিনি। সেই দলটি জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করেছিল এই দেশে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন হয়েছিল দুর্বিষহ। শত শত পরিবারকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। অসংখ্য মানুষকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা, হাত-পায়ের রগ কেটে বা জবাই করে হত্যা, নারী-শিশু ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভিটেমাটি দখল থেকে শুরু করে এই মানুষগুলোর ওপর নির্যাতনের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

বিদেশিদের মন যোগাতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র :

যে বিএনপি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার পৃষ্ঠপোষক। তারাই এখন উল্টো বিদেশিদের মন যোগাতে আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে সালাফিস্ট, আহলে হাদিস, সুন্নী, জঙ্গি- ইত্যাদি নানারকম তকমা লাগাচ্ছে, বিভ্রান্ত করছে সাধারণ মানুষকে। যে বিএনপি সবসময় ধর্মীয় অপরাজনীতিকে সাথে নিয়ে পথ চলেছে, তারা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের দুধে ধোয়া তুলসিপাতা দাবি করে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে, যা রীতিমত হাস্যকর। প্রবাদ আছে, কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না। বিএনপিকে যতই ধবল ধোলাই করা হোক না কেন, তাদের শরীর থেকে জঙ্গিবাদের গন্ধ যাবে না।

আরও পড়ুন : এক্সক্লুসিভ: জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক, লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

JMBবাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভয়াবহ রুপ দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সেই আমলেই সৃষ্টি হয়েছিল জেএমবিসহ অনেকগুলো জঙ্গি সংগঠন। যাদের সাথে পাকিস্থানি গোয়েন্দা সংস্থা ও সেদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলোর সরাসরি যোগাযোগ ছিল। সারাদেশে একযোগে ৫০০টির বেশি বোমা হামলা, সিনেমা হল ও আদালতে বোমা হামলা, বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যার একাধিক চেষ্টা, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্য ঘটনায় এই জঙ্গিদের ব্যবহার করেছিল বিএনপি-জামায়াত।

[বিদেশিদের মন পেতে নিজেদেরকে লিবারেল দল বলে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জঙ্গি বলছে বিএনপি]

এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ব সার কারখানার লক্ষ লক্ষ টন কাঁচামাল বোমা বানানোর উপকরণ হিসেবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি সরকারের নির্দেশনায় জঙ্গি সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম সরবরাহে নিয়োজিত ছিল রাষ্ট্রের কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা, যারা ছিলেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের একান্ত আস্থাভাজন। বিএনপি-জামায়াতে পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্থান বানানোর প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। সেই ঘটনাগুলোয় উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন দূতাবাস থেকে তৎকালীন রাষ্ট্রদূতরা ওয়াশিংটনে যেসব গোপন তারবার্তা পাঠাতেন, তা উইকিলিকস-এ ফাঁস হয়ে গেছে। ফলে বিএনপি-জামায়াত জোটের জঙ্গি সম্পৃক্ততা প্রকাশিত সত্য।

আরও পড়ুন :