আদিলুর

বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বেশ কিছু লোককে মুরগির মত লালন-পালন করে। এসপিওনাজের ভাষায় এই মুরগিদের ‘এসেট’ বলা হয়। সরাসরি মার্কিন সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এজেন্ট না হলেও কোনো কর্মকর্তার সরাসরি অধীনে রিক্রুটেড হয়ে বছরের পর বছর সার্ভিস দেয় তারা। সবদেশেই সিআইএ’র এমন মুরগি বা এসেট আছে। বাংলাদেশেও নানা চেহারায়, নানা পর্যায়ে তারা সক্রিয়। তেমনই এক এসেট আদিলুর রহমান।

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধ এনজিও ‘অধিকার’ এর প্রধান নির্বাহী আদিলুর বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী। যিনি যুক্তরাজ্যে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের এতই আপন যে, অধিক যোগ্য লোকদের ডিঙিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আদিলুরকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল করা হয়। যিনি পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় ষড়যন্ত্রে সরাসরি লিপ্ত হন। তার সবচেয়ে বড় অবদান ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতের তাণ্ডবকে কেন্দ্র করে গুজব রটনা করা। এছাড়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন স্যাংশন আরোপেও তিনি সরাসরি জড়িত।

বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ অর্থায়নে ও মার্কিন দূতাবাসের পরোক্ষ ইন্ধনে ঢাকা দখল ও শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। এরপর শুরু করে তাণ্ডব। এই ঘটনায় সরাসরি নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়ার একান্ত আস্থাভাজন জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। আহমদ শফী এবং তার পুত্র আনাস মাদানী যা পরবর্তীতে ফাঁস করে দেন কীভাবে বিএনপি নেতাদের হাত দিয়ে জামায়াত নেতার উপস্থিতিতে বাবুনগরীকে এই তাণ্ডব চালানোর জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ দেয়া হয়েছিল।

সেসময় বাবুনগরীকে রাষ্ট্রপতি ও খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করে সম্ভাব্য মন্ত্রীসভার তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। সেই ক্যু-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় অবস্থানের পাশাপাশি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচক্ষণতায়। উত্তেজিত না হয়ে হেফাজতের কর্মীদেরকে ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ সত্ত্বেও তারা অতর্কিতে পুলিশের ওপর হামলা করে। রাস্তার ওপর গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, লুটপাট করা হয় এটিএম বুথ। এমনকি বায়তুল মোকাররমের বই বিক্রেতাদের স্টলগুলো পুড়িয়ে কোরআন-হাদিসসহ ধর্মীয় বই নালায় ফেলার ঘটনার ছবি ও ভিডিও এখনো অনলাইনে দেখা যায়।

বানোয়াট প্রতিবেদনঃ

হেফাজত কর্মীদের ঠেকাতে পুলিশ ‘নন-লিথ্যাল’ (প্রাণঘাতী নয়) এমন অস্ত্র ব্যবহার করে। রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করা হয়। লাখ লাখ হেফাজত কর্মীর হুড়োহুড়িতে হতাহত হন কয়েকজন। সেসময় পুলিশের সাথে উপস্থিত ছিলেন শত শত সংবাদকর্মী। সেই রাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনেকে মৃতের মত শুয়ে রয়েছে কিন্তু পুলিশের লাঠির গুঁতোয় উঠে দৌড় লাগাচ্ছে। পরে জানা যায়, মৃত সেজে শুয়ে থাকার এই নাটক পুরোটাই পরিকল্পিত। উঠে দৌড় লাগানোর আগ পর্যন্ত মৃতের মত শুয়ে থাকা ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে আল-জাজিরা। তারা বানোয়াট এক প্রতিবেদনে হেফাজত, বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের ভাষ্যে দাবি করে পুলিশি অ্যাকশনে হাজার হাজার হেফাজত কর্মীকে মেরে রাতারাতি সেসব লাশ দাফন করে কিংবা অদ্ভূত কোনো উপায়ে নাকি গায়েব করে ফেলেছে সরকার‍!

সেই অলৌকিক হাজার হাজার লাশের তথ্য চাওয়া হলে কেউই আর সুস্পষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। সরকারের তদন্ত শুরু করে ধীরে ধীরে অভিযোগকারীদের সুর নরম হতে থাকে। একপর্যায়ে হাজার হাজার থেকে কয়েকশ এবং শেষপর্যন্ত তা ৬১ জনে এসে ঠেকে। ৬১ জনের দাবি করে সিআইএ’র এসেট তথা পুরনো ওয়াফাদার মুরগি আদিলুর রহমানের মালিকানাধীন এনজিও- অধিকার।

২০১৩ সালের ১০ই জুন অধিকার শাপলা চত্বরের ৫ ও ৬ই মে’র ঘটনা নিয়ে এক ফ্যাক্টস এন্ড ফাইন্ডিং রিপোর্ট তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। সেখানে দাবি করা হয় উক্ত সংঘর্ষে হেফাজতের ৬১ জন কর্মী সমর্থক নিহত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তখন তাদের দেয়া তালিকা অনুসারে তদন্তে নামে। প্রাথমিক তদন্তে অধিকার-এর রিপোর্টে অনেক গুরুতর অসঙ্গতি দেখা যায়, যেমন- ৫ জন ব্যক্তির নাম একাধিকবার, ১১টি অস্তিত্বহীন নাম, শারীরিক অসুস্থতায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীর নাম ছাড়াও ঢাকার বাইরে মৃত্যুবরণ করা ৬ জনের নাম সেই গোঁজামিলপূর্ণ তালিকায় দেখা যায়।

প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উদ্ভূত বিভ্রান্তি দূর করতে তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ১০ই জুলাই তথ্য অধিকার আইনের অধীনে অধিকার-এর নিকট তালিকার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশনা দিলে অধিকার তা সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করে। এছাড়া এনজিও ব্যুরোকেও তারা গোপনীয়তার অজুহাতে উক্ত প্রতিবেদনের মূল তথ্যাদি প্রেরণ করেনি। ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ১০ই আগস্ট আদিলুর রহমান ও অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয় (মামলা নং-০১/২০১৩), যে মামলায় আদিলুর গ্রেপ্তার হয়ে পরে জামিন পান।

আদিলুরের সেই গোঁজামিলপূর্ণ রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ক্রমাগত গুজব ছড়াতে থাকে। এদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল একাত্তরও নিজস্ব সোর্স নিয়ে তদন্তে নেমে দেখতে পায় যাদের মৃত বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দাবি করা হচ্ছিল, তারা সবাই জীবিত। একাত্তর টিভি তালিকা ধরে সেই মৃতদের একে একে হাজির করলে ধরা পড়ে আদিলুর-অধিকার-আল-জাজিরা-প্রথম আলো-ডেইলি স্টারসহ পুরো চক্রের ষড়যন্ত্র।

আদিলুরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে উন্মোচিত হতে থাকে সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে মানবাধিকার কর্মীর ছদ্মবেশে সুপ্ত অবস্থায় থাকা সিআইএ’র অপর এসেটরাও জেগে ওঠে। তারা বিভিন্ন জোট ও ফোরামের নামে বিবৃতিতে সাক্ষর করে আদিলুরের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের মামুর বাড়ির আব্দার জানাতে থাকে! তাদের বক্তব্যের মর্মার্থ হলো, গুজব ছড়ানোর অধিকার দিতে হবে, গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা সৃষ্টির সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না! সুস্পষ্ট অপরাধ করা অপরাধীদের অধিকারের পক্ষে এদের এমন অবস্থান!

শেষ পর্যন্ত নানা চড়াই-উৎরাই এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মামলার রায় হলো। রায়ে আদিলুর ও নাসিরের ২ বছরের সাজা হলো। এটা অপ্রত্যাশিত ছিল মার্কিন প্রশাসনের কাছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের তোয়াক্কা না করে মার্কিন প্রশাসন এবং দূতাবাস উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়ে আদিলুর যে তাদের অধীনস্ত চাকর এবং তার সাজা হওয়ায় মালিকপক্ষ বেজায় ক্ষুব্ধ- তা প্রকাশে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা দেখায়নি। দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে বিজ্ঞাপন আকারে এসব উদ্বেগ জানানো হচ্ছে। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এবং আইন ও বিচার বিভাগ নিয়ে মার্কিনিদের এহেন নষ্টামির অর্থ তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করছে।

এই আদিলুর রহমান মার্কিনিদের সাথে কত গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ, তা তাদের আচরণেই প্রকাশ পাচ্ছে। সিআইএ’র অনেক পুরনো চর এই আদিলুর। মার্কিন স্বার্থে বহুবার তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভূত সম্পদ গড়েছেন আদিলুর। কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি এবং ফার্মহাউজসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি সেখানে। সিআইএ’র জন্য কাজ করার এটাই মজা।

আদিলুরের ষড়যন্ত্রঃ

মামলা চলমান অবস্থার মধ্যেও থেমে ছিল না আদিলুরের ষড়যন্ত্র। সময় ফুরিয়ে আসছে জেনে মার্কিন নীলনকশা অনুসারে মরণ কামড় দেন আদিলুর। যা চেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ বাংলাদেশের জন্য এক অপ্রত্যাশিত খারাপ খবর আসে। যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য বড়সড় ধাক্কা ছিল। বাংলাদেশে এলিট ফোর্স র‌্যাবের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মানবাধিকারসহ বিভিন্ন এজেন্ডায় বিদেশি অপশক্তির হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ধরে দূরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত, এমন ৩টি এনজিওর সরবরাহকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর করে মার্কিন প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই এনজিওগুলো হলো- অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ব্লাস্ট। এর মধ্যে ব্লাস্ট শুধু সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তথ্যের সত্যতা নিরুপণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবেদন দিয়েছে। সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে প্রকাশিত কিছু ভিত্তিহীন সংবাদকে।

বাংলাদেশ সরকারকে চীন ও রাশিয়ার বলয় থেকে বের করার জন্য চাপ সৃষ্টিকারী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনার নেপথ্য চক্রান্ত সম্পর্কে জানতে হলে এনজিওগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে র‌্যাবের ওপর অভিযোগের কয়েকটি ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অযাচিত নাক গলানোর লক্ষ্যে উ্ক্ত ৩টি এনজিওকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে সেদেশেরই কোনো বেসরকারি সংস্থা বিদেশিদের পক্ষ থেকে তদন্ত করতে পারে কি না- এই প্রশ্ন অবশ্যই রয়েছে। যেমন, বাংলাদেশ সরকার কি চাইলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এজেন্ট কর্তৃক শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে কোনো তৃতীয় পক্ষের সংস্থাকে এফবিআই-এর বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারবে? মার্কিন প্রশাসন কি সেটা আদৌ মেনে নেবে? নিশ্চয় নয়। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন সুগভীর চক্রান্তের মানসে এই কাজে বাংলাদেশি ৩টি এনজিওকে কাজে লাগায়।

বিএনপি-জামায়াতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমানের মালিকানাধীন অধিকার র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিজস্ব উদ্যোগে অনুসন্ধান করে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত দাবি করে। অধিকারই ৭ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মার্কিন প্রশাসনে অভিযোগ দেয়। প্রশ্ন হলো, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনাটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল, অর্থাৎ কক্সবাজারের পৌর কাউন্সিলর একরামুের মৃত্যুর ঘটনাটি, সেসময় র‍্যাবের ডিজি ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ। তাকে যদি এ ঘটনায় দায়ী করা হয়, তাহলে র‍্যাবের পরবর্তী ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কীভাবে অভিযুক্ত হন? একসঙ্গে তো দুজন র‍্যাবের ডিজি ছিলেন না। অর্থাৎ পুরো বিষয়টি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একরামের ঘটনার পর কিন্তু র‍্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা আসক, অধিকার বা ব্লাস্টের প্রতিবেদনে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এতেই স্পষ্ট, পুরো বিষয়টি ছিল গভীর চক্রান্তের অংশ।

অধিকার, আসক ও ব্লাস্ট- এই ৩টি এনজিও মূলত একই উদ্দেশ্যে পরিচালিত। জন্মসূত্রে পাকিস্থানি নাগরিক হামিদা হোসেন আসক-এর প্রতিষ্ঠাতা। তার আরেক পরিচয়, তিনি ড. কামাল হোসেনের স্ত্রী এবং গুজববাজ ডেভিড বার্গম্যানের শাশুড়ি। মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, গুম, হত্যা- ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত পরিবেশিত রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডামূলক পরিসংখ্যানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এই সংস্থার কাজ। আসক, ব্লাস্ট ও অধিকার-এর সেসব মনগড়া তথ্য তাদের সূত্রেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ছাপে। অর্থাৎ আবুলের সাক্ষী বাবুল, বাবুলের সাক্ষী আবুল। আর আবুল-বাবুলকে চন্দ্র-সূর্যের মত ধ্রুব মেনে নেয় মার্কিন প্রশাসন।

আদিলুরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার অন্যায্য আচরণ করছেন বলে যারা প্রতিবাদ করেছিলেন, তারা যে বিষয়টি এড়িয়ে যান তা হলো, আদিলুর গুজব ছড়িয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি ও ক্যু-এর মত রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এতটাই সুস্পষ্ট ছিল যে, ২০১৭ সালের ২০শে জুলাই মানবাধিকার বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মালয়েশিয়ায় আমন্ত্রিত হয়ে যাবার পরেও দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে রাখে। কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পর তাকে আর ঢুকতে দেয়া হয়নি।

মালয়েশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে লকআপে ঢোকায়। সেখানে তার জুতো খুলে পুরো শরীর ভালোভাবে তল্লাশির পর সাথে থাকা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপস ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসও সিজ ককে। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে পরদিন তাকে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশগামী একটি বিমানে তুলে ফেরত পাঠানো হয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফোরামে তার পরিচিতি এবং আমন্ত্রণপত্র থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া সরকার তাকে সেদেশে প্রবেশাধিকার দেয়নি তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ থাকায়। মূলত তিনি সিআ্ইএ’র হয়ে গোপনে কাজ করেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া সরকার তাকে বিপজ্জনক বলে ধরে নিয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারঃ

অধিকার নিজেদের মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও’র পরিচিতি দিলেও প্রকৃতপক্ষে সংস্থাটি সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে দীর্ঘদিন থেকেই লিপ্ত। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় অধিকার। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করলেও অধিকারকে কখনই দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াত আমলে (২০০১-২০০৬) ২৬ হাজার নিহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কিংবা কয়েক লাখ নির্যাতিত সংখ্যালঘুর পক্ষে কাজ করতে। সেসময় অধিকার সম্পূর্ণ নীরব ছিল। বরং সেই আমলেই অ্যাটর্নি জেনারেল হন আদিলুর। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অধিকার পরিণত হয় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বিএনপি-জামায়াতের একটি বড় হাতিয়ারে। এনজিওটির কাজ হচ্ছে সিআইএ’র ফ্রন্ট এনইডির নির্দেশনায় মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো। সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডায় নেতৃত্ব দেয়া।

অধিকার-এর দাবি, তারা বাংলাদেশ-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন (এফআইডিএইচ) এর সদস্য। ২০০৩ সাল থেকে তারা তাদের বার্ষিক কর্মসূচির প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। অধিকারের উল্লেখযোগ্য কাজ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ২০১১ সালের বাংলাদেশ বিশ্ব প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। কিন্তু ১১ই নভেম্বর, ২০১৮ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকায় বিভাস বাড়ইয়ের লেখা এক নিবন্ধে অধিকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় এবং নিন্দনীয় বলে অভিহিত করা হয়। ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে অধিকার-কে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

২০২২ সালের ৫ই জুন উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় রাষ্ট্রবিরোধেী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততাসহ গুরুতর অভিযোগে অধিকার-এর নিবন্ধন বাতিল করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। দেশবিরোধী বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম, খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যায় অধিকার যেসব তথ্য উপস্থাপন করেছে, তার সত্যতা যাচাইয়ে ভিক্টিমদের নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা চেয়েও পায়নি সরকার। এছাড়া এনজিও নিবন্ধনে প্রয়োজনীয় তথ্য, নতুন আইন অনুযায়ী আরোপিত বর্ধিত ফি ও ভ্যাট না দেওয়া, বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৮টি আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর আপত্তির জবাব বা ব্যাখ্যা না দেওয়া এবং ৩টি প্রকল্পে আর্থিক লেনদেন অসঙ্গতি বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বিষয়ে যথাযথ জবাব না দেওয়ায় অধিকার-এর নিবন্ধন নবায়নের আবেদন নামঞ্জুরের অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুনঃ