লাখ

বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্যে বিএনপি নেতারা একটা কমন মিথ্যাচার করেন, আর তা হলো তাদের ৪০-৫০ লাখ কর্মীর নামে রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে মির্জা ফখরুলও দাবি করলেন তার এক বক্তব্যে, দলের ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এমন অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করছেন তারা। কোনো কোনো নেতা এই সংখ্যা ৫০ লাখ বলেও দাবি করেন। গোয়েবলসীয় অপপ্রচারের প্রভাবে এবার নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বিএনপির ২৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন : গুম ছাত্রদল কর্মীর হদিস ১২ বছর পর, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হয়রানির দায় নেবে কে?

এমন ভিত্তিহীন বা সূত্রবিহীন হাস্যকর অভিযোগ তোলার আগে এর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ভাবা দরকার। বিএনপির দাবিকৃত ৪০/৫০ লাখ বাদ দিলাম, সংখ্যাটি ন্যূনতম ২৫ লাখ ধরেই ফ্যাক্ট যাচাই করা যাক।

bnp১. বাংলাদেশের প্রাশাসনিক পরিকাঠামোর ক্ষুদ্রতর পর্যায় হচ্ছে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড। দেশে মোট ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। বিএনপির মামলা হওয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যা ২৫ লাখকে ভিত্তি ধরলে প্রতিটি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে ন্যূনতম ২০৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকার কথা। ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড প্রতি তাদের নেতা-কর্মীর সংখ্যা কি আদৌ ২০৮ জন হবে? ২৫ লাখ হতে কয়টি শূন্য বসাতে তা মির্জা ফখরুলরা আদৌ জানেন কি না সন্দেহ। কমপক্ষে ৫ লাখ নেতা-কর্মী রাজপথে নামলে পুরো ঢাকাই অচল হয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে ৪০-৫০ লাখ দূরের কথা, ২৫ লাখ তো অকল্পনীয়!

আরও পড়ুন : আন্দোলনে আগ্রহ নেই বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের, সাড়া নেই জনগণেরও

২. নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় দাবি করা হয়েছে, প্রতিদিন হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে আদালতে উপস্থিত হতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৩০শে জুন, ২০২৩ খ্রিঃ পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশের নিম্ন আদালতগুলোয় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭৮। যাতে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ২০ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৬৪। উচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা (রিট পিটিশন বাদে) ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৯। ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ১২ হাজার ৮৫৪। অর্থাৎ দেশে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যাই ২৫ লাখ নয়। সেখানে ৪০-৫০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে রাজনৈতিক মামলার দাবি হাস্যকর নিশ্চয়।

৩. পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ রাজনৈতিক মামলা দীর্ঘদিন ধরে বা ৪-৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলে। আর দেশে ৫ বছরের পুরনো মামলার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। যা মোট মামলার ১৯.১৮ শতাংশ। রাজনৈতিক মামলাগুলো এই ৫ লাখের মধ্যেই রয়েছে। এরমধ্যে তাহলে বিএনপির নেতা-কর্মীর সংখ্যা কত হতে পারে? দেশে কি আর কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো সংগঠনের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা নেই? বিএনপি হয়ত যুক্তি দেখাতে পারে যে, একেকটি মামলায় একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, তাই মামলার সংখ্যা কম হলেও অভিযুক্তের সংখ্যা অনেক। কিন্তু প্রকাশিত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে “সক্রিয় নেতা-কর্মীদের” বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি করে মামলা রয়েছে। সুতরাং মামলার সংখ্যা কম বলেও তাদের এই দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সন্ত্রাসী বিএনপি৪. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে, মামলার সংখ্যা ২৫ লাখের অর্ধেক ধরলেও স্বীকার করতে হবে যে, চোর, ডাকাত, মাদক কারবারি, ধর্ষক থেকে শুরু করে দেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বড় অংশই বিএনপির নেতা-কর্মী। এখন অপরাধের সব কোটা যদি বিএনপি এককভাবে দখল করে নেয়, তাহলে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্য আর বাকি থাকবে কী!

আরও পড়ুন : তারেক রহমান দুর্নীতিবাজদের জাতির পিতা, বিএনপির নেতা-কর্মীদের চোর-বাটপার সন্ত্রাসী হিসেবে মনে করে দেশবাসী

ফ্রুটিকাআরেকটি ভাইটাল প্রশ্ন ওঠা উচিত- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হয়ত কমনসেন্স এবং জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তারা কী বলতে কী বলেন, দিনে এক কথা, রাতে আরেক কথা বলেন, ‘ফ্রুটিকা’ সেবন করে বেফাঁস কথা বলে ফেলে পরক্ষণেই পল্টি দেন, তাই তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম; কিন্তু দলে কি বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত- এমন একজন মেধাবী ব্যক্তিও কি নেই, যারা যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারেন? যারা নিজেদের দাবির পক্ষে ফ্যাক্ট এবং ডাটা উপস্থাপন করতে পারেন?

[ফ্যাক্ট যাচাই – নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ৪০-৫০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে মামলা সংক্রান্ত বিএনপির মিথ্যাচার]

তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উচিত দেশে-বিদেশে বিএনপি-জামাতের প্রচারিত গুজব ও মিথ্যাচার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমগুলোকে অবহিত করা। বিশেষত তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত- মিথ্যা যাদের সম্বল, তারা কী করে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করবে?

আরও পড়ুন :