
ঈশপের গল্পে মিথ্যেবাদী রাখাল বালকের কথা সবাই জানেন। যে মজা নিতে ‘বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে’ বলে সবাইকে ভয় দেখাত। আমাদের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন সেই মিথ্যেবাদী রাখাল বালক। যিনি নিজের স্বার্থ হাসিলে অজস্র মিথ্যাচার করেন। যেমন, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে জোবরা গ্রামের দরিদ্র সুফিয়া বেগম সাবলম্বী হয়ে দালান বানিয়ে ফেলেছেন- দেশি-বিদেশি সংবাদকর্মীদের সামনে এমন গল্প ফেঁদে বিশ্বব্যাপী তারকা বনে যান ইউনূস।
যদিও পরে সুফিয়ার মেয়ের বরাতে জানা যায়, বিদেশিদের সামনে ইংরেজিতে ইউনূস যা বলেছেন- সবই মিথ্যাচার। সুফিয়ার দালান বলে যে বাড়ি দেখানো হয়েছিল, সেটা তার নিজের নয়। গ্রামেরই এক প্রবাসীর বাড়ি। প্রকৃতপক্ষে সেই সুফিয়া ও তার মত গ্রামের দরিদ্র নারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। চরম দারিদ্রে বিনা চিকিৎসায় মারা যান সুফিয়া। যে জোবরা গ্রামের মডেল বেচে ইউনূস আজ বিলিয়নিয়ার হয়েছেন, সেই গ্রামে ইউনূসকে অবাঞ্ছিত করেছেন স্থানীয়রা অনেক বছর ধরে।
শুধু জোবরা গ্রামের দুস্থ নারীদের নিয়ে নয়, আরও বহু মিথ্যাচার করেছেন ইউনূস। যেমন, তিনি দাবি করেছিলেন গ্রামীণফোনের সাথে তার ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ জানা যায়, গ্রামীণফোনে ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের নামে।
দেশের কোনো দুর্যোগ, সংকটে ইউনূসকে পাওয়া যায় না। কোনো দুর্যোগে তার পকেট থেকে ১ টাকাও বেরোয় না অসহায় মানুষদের জন্য। অথচ হিলারির নির্বাচনি ফাণ্ডে ইউনূস দান করেছিলেন ১৩ মিলিয়ন ডলার। কেন? কোন সেই স্বার্থ? ইউনূস সেন্টারের প্রেস রিলিজে বরাবর অস্বীকার করা হয়েছে আর্থিক অনিয়ম, কর ফাঁকি, শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত সব তথ্য মিথ্যা, ইউনূস এমন কোনো অন্যায় করেনইনি! অথচ পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ঢাকা লজিস্টিকস নামক এক প্রতিষ্ঠানের সাথে ১৪ কোটি টাকার চুক্তি সাক্ষর করেন ইউনূস।
চুক্তি মতে, ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের মামলার রায় প্রভাবিত করতে এবং এজন্য যেখানে যা কিছু করা লাগে, প্রতিপক্ষ আইনজীবী, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তাদের যাকে যেভাবে ম্যানেজ করা লাগে, প্রয়োজনে উৎকোচ প্রদানসহ সব করার দায়িত্ব পায় ঢাকা লজিস্টিকস। ইউনূস সাক্ষরিত সেই চুক্তিপত্র ফাঁস হয়ে গেলে জানা যায় মামলার রায় প্রভাবিত করতে এই বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। এই ঘটনাও তিনি অস্বীকার করেন চুক্তিপত্র ফাঁসের আগে। শেষ পর্যন্ত একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য হন মিথ্যাবাদী রাখাল বালক ইউনূস।
ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণ টেলিকমের ৬৪টি, গ্রামীণ কল্যাণের ৬৯টি, গ্রামীণ কমিউনিকেশনের ২৫টি, গ্রামীণ ফিশারিজের ৮টি, ইনকাম ট্যাক্সের ৮টি ও ফৌজদারী ২টি। দুটি ফৌজদারী মামলা ছাড়া বাকিগুলো শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে কর গড়মিলের মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। ইউনূসের এসব মামলা স্থগিত করতে অনেকদিন ধরেই সক্রিয় ইউনূস সেন্টার। বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিদেশি লবিস্টদের মাধ্যমে বিবৃতি সংগ্রহ, বিদেশি পত্রিকায় স্পেস ভাড়া নিয়ে চিঠি ছাপানোসহ ইউনূসের মার্কিন বন্ধুরা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন : ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকির দায় থেকে মুক্তি পেতে বিদেশি বন্ধুদের দিয়ে সরকারকে চাপ দিচ্ছেন ড. ইউনুস
এর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ইউনূসকে অপসারণের ঘটনায় হিলারিকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করিয়ে হুমকি দেয়ানো হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা উল্টো হিলারিকে এক বাউন্সারে পরাস্ত করেন। এবার ইউনূস গং হাজির করল নয়া জুজু। তাদের দাবি, ইউনূসের মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য হিলারি ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানান কয়েকদিন আগে। ইউনূস গংয়ের লক্ষ্য, হিলারি আর ওবামার কথায় সরকারের ভেতরে ‘থরহরি কম্প’ দেখা দেবে, সরকার ভয় পাবে, তাতে ইউনূসের মামলা স্থগিত হয়ে যাবে।
তবে প্রশ্ন হলো, হিলারি-ওবামা কি আদৌ বাংলাদেশ সফরে আসছেন? খোঁজ নিয়ে তাদের এমন সফরের কোনো তথ্য মেলেনি। জানা গেছে, ওবামা ও হিলারি দুজনই নিজ নিজ টুইটার অ্যাকাউন্টে অত্যন্ত সক্রিয়। তাদের বিপুল সংখ্যক ফলোয়ারও রয়েছে। টুইটারের সার্বক্ষণিকভাবে তাদের কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রকাশ হয়। যেমন- হিলারি কিছুদিন আগে ইউনূসের পক্ষে যে ১৬০ বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতি ছিল তা টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ইউনূসের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। যদিও সেই পোস্টে খোদ আমেরিকানরাই হিলারির কর্মকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করেন।
হিলারি একই পোস্ট ফেসবুকে পোস্ট করায় হাসির খোরাকে পরিণত হন। তবে ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুনের দাবি অনুসারে হিলারি ও ওবামা বাংলাদেশে ইউনূসের বিচার পর্যবেক্ষণে আসতে আগ্রহী- এই দাবির পক্ষে এই দুজনের টুইটার বা অন্য কোনো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ইঙ্গিত বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বাংলাদেশে তারা আসছেন, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইউনূস বিভিন্ন সময় নানারকম চমক দেখান, স্টান্টবাজি করেন। যেমন- ২০০৬ সালে শান্তিতে যৌথভাবে ইউনূস নোবেল পুরস্কার পান গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে। পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, বিশ্ব থেকে দারিদ্র বিদায় হবে, দারিদ্র জাদুঘরে চলে যাবে। কিন্তু বিশ্বে দারিদ্র্যের হার আরও বেড়েছে। ইউনূসের গাঁজাখুরি ও অসত্য পূর্বাভাসে কেউ চ্যালেঞ্জ না জানালেও তার স্টান্টবাজিতে মানুষ যে বিরক্ত, তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেখা যায়। মূলত ইউনূস তার ব্যক্তিগত প্রচারণা ও ইমেজ বৃদ্ধির জন্য অসত্য তথ্য প্রচার ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। এখন হিলারি ও ওবামার বাংলাদেশ সফর নিয়ে একই কৌশল নিয়েছেন তিনি।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ওবামা ও হিলারি যদি বাংলাদেশে আসতে চান, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মার্কিন আইনজীবীদের কোনো প্যানেল সাথে নিয়েই মামলা পর্যবেক্ষণ করতে তাদের আসার কথা। কিন্তু কোথাও এমন আভাস মেলেনি। চাইলেই কোনো দেশের চলমান মামলা পর্যবেক্ষণ করতে ঘোষণা ছাড়াই হুট করে হাজির হতে পারেনা অন্য দেশ থেকে, বিশেষ করে কোনো দেশের ভিভিআইপি ব্যক্তি অন্যদেশে এভাবে মামলা পর্যবেক্ষণ করতে যান না। বড়জোর তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেন। আর তারা নিজেরাই উপস্থিত থাকতে আগ্রহী হলে তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র কিংবা আইন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও হিলারি-ওবামার সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ব্যারিস্টার মামুন স্রেফ ব্লাফ দিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
বারাক ওবামার টুইটার অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের মূল্য নিয়ে টুইট করেছেন। এর আগে তিনি মিশেল ওবামার একটি টুইট রিটুইট করেছেন। তার আগে মার্টিন লুথার কিংয়ের ওপর একটি মন্তব্য করেছেন। ইউনূসকে নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তিনি বাংলাদেশে আসবেন, মামলা পর্যবেক্ষণ করবেন এমন কোনো আভাস মেলেনি। এদিকে হিলারির একটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি, কার্যক্রম ও প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন। সেখানেও তার বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে কোনো আভাস নেই। হিলারির টুইটারেও ওষুধ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যানদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তার আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টুইট করেছেন। সেদিনই তিনি ইউনূসের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য টুইট করেন। যদিও তাতে বাংলাদেশে গিয়ে মামলা পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছেন, এমন কোনো বার্তা ছিল না।
[মিথ্যেবাদী রাখাল বালক ইউনূস এবং তার হিলারি-ওবামা জুজুর ভাঁওতাবাজি!]
তাই এখন প্রশ্ন হলো, হিলারি ও ওবামা বাংলাদেশ সফরে আসছেন- ইউনূসের আইনজীবী ব্যরিস্টার মামুন এমন তথ্য কোত্থেকে পেলেন? তারা ব্যক্তিগতভাবে মামুনকে এসব তথ্য দিয়েছেন? নাকি মামলা প্রভাবিত করতে ইউনূস আবারও এই স্টান্টবাজি করছেন মামুনের মাধ্যমে? বারবার মিথ্যা বলে ধরা খাওয়া মিথ্যাবাদী রাখাল বালক ইউনূসকে এবার তার নিজের সৃষ্ট কাল্পনিক বাঘ এসে খেয়ে দেয় কিনা- সেটাই দেখার অপেক্ষায় জনতা।
আরও পড়ুন :
- ইউনুসের নোবেল কেন রাজনৈতিক? কেন অর্থনীতিতে নয় শান্তিতে?
- দোষী সাব্যস্ত হবেন জেনেই বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন ড. ইউনূস
- একজন বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক মানুষ কেন ড. ইউনূসকে সমর্থন করবে?