
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালেই। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে রাজাকার সাঈদীর নাম বিশেষ তালিকাভুক্ত হয়। এমনকি মার্কিন সেই তালিকা অনুসারে কয়েকটি বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাও রাজাকার সাঈদীর নাম তাদের ডাটাবেজে তুলে রাখে বলেও জানা যায়।
মূলত ২০০৪ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি কবে ঢাকাস্থ দূতাবাস। পররাষ্ট্র দপ্তরকে পাঠানো সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে জঙ্গিবাদ ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করা হয়। সেসময়েই মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরকে বিশ্বের ৩য় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসাথে বাংলাদেশে জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে ও নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
[মার্কিন তালিকায় তারেকের মত রাজাকার সাঈদীর নামও ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসেবে]
সেই প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল- বিএনপি-জামায়াত জোটের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তাদের মধ্যে রাজাকার সাঈদী ছিল অন্যতম। সেই একইসময়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান সম্পর্কেও আলাদা আলাদা কয়েকটি গোপন তারবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের হোম অফিসে পাঠান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তারেক রহমানের দুর্নীতি, তার ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ড, অস্ত্র চোরাচালান, অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ উত্থানে সহায়তাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে ‘নটোরিয়াস’ বা জঘন্য ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এমনকি এও উল্লেখ করা হয় যে, তারেকের পক্ষে যে কোনো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড ঘটানো সম্ভব। যার প্রমাণ মেলে এর কিছুদিন পরেই, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে। এসব তারবার্তা ফাঁস হয় উইকিলিকসের মাধ্যমে।
২০০৫ সালে প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপর একটি প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনা, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সরাদেশে সিরিজ বোমা হামলাসহ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে বলে উত্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনেও জামায়াত নেতা রাজাকার সাঈদীর উস্কানিমূলক বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য জঙ্গিবাদকে মদদ দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোনো প্রতিবাদ করেনি। অথচ স্বার্থগত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে সেই বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন সকাল-বিকাল মার্কিন দূতাবাসে বৈঠক করছেন।
[মার্কিন তালিকায় তারেকের মত রাজাকার সাঈদীর নামও ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসেবে]
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসে আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় বলেছেন, বিএনপি এখন মার্কিনিদের চোখের মণি। বঙ্গোপসাগরের জন্য বাংলাদেশে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্র গঠন করতে চায় পশ্চিমারা। সে কারণেই তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট, মার্কিনিদের কাছে এখন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কোনো ইস্যু নয় আর। এখন যেকোনো মূল্যে তাদের এই অঞ্চলে একটা পুতুল সরকার প্রয়োজন। যাদের দিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। যাদের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের ব্লু ইকোনমি নিজেদের কব্জায় নিতে পারবে। পাশাপাশি চীনসহ অন্যান্য মার্কিনবিরোধী পরাশক্তিগুলোর নাকের ডগায় নিজেদের একটা সামরিক ঘাঁটি গড়তে পারবে। এজন্য প্রয়োজনে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে উপেক্ষা করতেও তারা দ্বিধা করবে না।
যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছেন, তাকে হঠাতে মার্কিনিরা বিএনপি-জামায়াতের পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ জানে, পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পারেন একজনই, তিনি শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুনঃ
- মার্কিন গোপন তারবার্তা: বিএনপি আমলের হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেন খালেদার মুখ্য সচিব
- বঙ্গোপসাগর কব্জা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র – প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টস
- তারেক রহমানের দুষ্টচক্রে বন্দী বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, ফেরার পথ বন্ধ