ফখরুল

কোটি কোটি টাকা খরচ, শত আঁটঘাট বেঁধে আন্দোলন-কর্মসূচির প্রস্তুতি নেয়ার পরেও সব ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে- বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা এজন্য দোষ দেন একজনেরই; তিনি খোদ মহাসচিব মির্জা ফখরুল। বিএনপির কর্মীদের একটাই অভিযোগ, মির্জা ফখরুল তলে তলে সরকারি টেম্পু চালায়; অর্থাৎ ফখরুল সরকারের এজেন্ট হিসেবে নেপথ্যে কাজ করছেন। নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে দিয়ে তিনি কখনই সামনে থাকেন না। তাকে পাওয়া যায় না সময়মত। অপর সিনিয়র নেতারা রাজপথে থাকলেও ফখরুলকে কখনই কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যায় না।

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী কিংবা স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ যখন রাজপথে কর্মীদের পাশে থেকে সাহস যোগান, ফখরুলকে দেখা যায় তখন এসি ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে কিংবা নিজ বাসভবনে বসে টিভিতে নিউজ দেখছেন। তাই ফখরুলকে সরকারের এজেন্ট বলেই মনে করেন কর্মীরা। এবার আবার সেই প্রমাণ মিললো। বিএনপি যখন কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে, ঠিক সেসময়- আজ বৃহস্পতিবার তিনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন সস্ত্রীক।

কর্মীদেরকে রাজপথে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ফখরুলের এই সফর নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাকে নিয়ে অবিশ্বাসের দোলাচল শুরু হয়েছে। শুরুতে কাউকে না বললেও হঠাৎ বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে জানাজানি হয় ফখরুল সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। এরপরই দলের তৃণমূলের কর্মীরা পল্টনে হাজির। তারা বলেছেন, ফখাদা বারবার এরকম করেন কেন? যখনই আন্দোলন গতি পায়, তখনই তিনি সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককে চলে যান। যখনই কর্মসূচি নিয়ে নেতা-কর্মীরা জোশ নিয়ে রাজপথে নামতে শুরু করে, তখনই ফখরুল বিদেশে পালিয়ে যান।

উল্লেখ্য, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

[আবারও কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে দিয়ে ফখরুলের পলায়ন!]

এদিকে বিএনপির চলমান একদফা আন্দোলনের মধ্যে ফখরুলের সিঙ্গাপুর ট্যুর নিয়ে কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তারেক রহমান লন্ডনে। দল চলছে মুলত মির্জা ফখরুলের একক কর্তৃত্বে। দলে যোগ্যতর নেতা থাকলেও শুধুমাত্র পদাধিকার বলে মির্জা ফখরুলের ওপরেই সব দায়ভার ন্যস্ত। আন্দোলনের কর্মসূচিতে ফখরুলের উপস্থিতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যার নেতৃত্বে আন্দোলন, কর্মসূচিতে তার অনুপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনকে ব্যর্থ করবে।

এরকম একটি সময়ে তার সিঙ্গাপুর ট্যুর তাই কর্মীদের মধ্যে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফখরুল কিছুদিন পরপরই সিঙ্গাপুরে যান হেলথ চেকআপের নামে। তাই ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে চিকিৎসা করাতে পারলে তার অধীনস্ত হয়ে ফখরুলকে কেন সিঙ্গাপুরে যেতে হয়? মির্জা ফখরুলের এই বিপুল অর্থের উৎস কী? এর আগেও তার সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য সরকার সহযোগিতা করেছিল বলে শোনা গিয়েছিল। সরকার কেন ফখরুলের প্রতি এত সদয়? ফখরুল কি সরকারের পুতুল?

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক সিনিয়র নেতা বলেছেন, নেতা-কর্মীদের গাছে তুলে ফখরুল পালিয়ে যান। কেন তিনি বারবার এই কাজটা করেন, জানি না। তবে এটা আন্দোলনকে নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ করবে এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে সন্দেহের অবকাশ তৈরি করছে। কারণ এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার তিনি আন্দোলন চলাকালে এমন করেছেন। এ বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলন চলা অবস্থায় তিনি হঠাৎ মধ্যরাতে সিঙ্গাপুরে চলে যান। এরকম তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও করেছেন। এখন আবার ঠিক নির্বাচনের আগে তিনি একই কাজ করলেন। তার এত সিঙ্গাপুরপ্রীতির পেছনে রহস্য কী? সরকারের কোনো আস্থাভাজন কারো সাথে গোপনে সিঙ্গাপুরে দেখা কিংবা দেন-দরবার করছেন কি না ফখরুল, এটা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ আন্দোলন ব্যর্থ হলে তা সরকারেরই লাভ। ফখরুল কি ডাবল এজেন্ট? এমন প্রশ্ন তুলেছেন এই নেতা।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, একসময় ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে এমন সমালোচনায় পড়তে হতো। যখনই দেশে কোনো আন্দোলন হতো ড. কামাল তখনই তিনি বিদেশে চলে যেতেন। পরে জানা গেছে মূলত তিনি আওয়ামী লীগের সাথে বেঈমানি করেছেন। সেই খেসারতও দিয়েছেন ড. কামাল। তাকে দল থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। ড. কামালের মত একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ফখরুলও। এবারই প্রথম নয়, বিএনপি যতবার আন্দোলন গুছিয়ে নিয়েছে, বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে, আন্দোলনে কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, ততবারই ফখরুল রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফখরুলের এভাবে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ফলে আন্দোলনের গতিপথ নষ্ট হয়েছে, কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিএনপি বারবার পিছিয়ে পড়ছে। দলে একতা বিনষ্ট হচ্ছে। আর এসব থেকে লাভবান হচ্ছে সরকার। ফখরুলকে দুইমুখা সাপ ভাবছেন কর্মীরা।

কর্মীদের একাংশের মতে, মির্জা ফখরুল সরকারের হাতের পুতুল। তাকে ইচ্ছেমত নাচাচ্ছে সরকার। আন্দোলন নস্যাৎ করার কাজে ফখরুলকে ব্যবহার করছে সরকার। এভাবে বিএনপি তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে। আর সেই সুযোগে সরকার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে দেবে। অন্যদিকে ফখরুলকে দিয়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করবে।

[আবারও কর্মীদের রাজপথে নামিয়ে দিয়ে ফখরুলের পলায়ন!]

তবে ফখরুলের বিদেশযাত্রা বা এই পলায়ন বিষয়ে বিএনপি কার্যালয়ের একজন সিনিয়র স্টাফ বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকার সেই দাবিতে কর্ণপাত করেনি। আমাদের নেত্রীর দিক বিবেচনা করে আমাদের দলের নেতাদেরও নৈতিকভাবে উচিত চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী না যাওয়া। খালেদা জিয়াকে দেশি হাসপাতালে রেখে ফখরুলের মত দায়িত্বশীল নেতা কীভাবে উন্নত দেশে সামান্য হেলথ চেকআপের জন্য যাচ্ছেন, এটা বোধগম্য নয়। এদিকে কর্মীরা সকাল থেকে ফখরুল সাহেবের বিরুদ্ধে নানারকম কথা বলছেন। এত জোরদার প্রস্তুতি নেয়ার পরেও আমাদের আন্দোলনটা নস্যাৎ হয়ে গেল উনার কারণেই।

আরও পড়ুনঃ