
গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রংপুর সফর করেছেন। এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছি, পুরো শহরে সাজ সাজ অবস্থা। সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ-উদ্দীপনার ঢেউ। মানুষের প্রতিক্রিয়ায় সামগ্রিক আবহ বোঝা যায়। তবে আরাম আয়েশে থাকা লোকজন কী বলেন, তার তুলনায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কী বলছেন সেটাই মূখ্য বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এভাবে ৬৪ জেলায় না হোক সব বিভাগীয় শহরগুলোতে পা রাখেন তবে সাধারণ মানুষের মাঝে যে গণজোয়ার তৈরি হবে, তাতে তিনি প্রবল প্রতাপে আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হবেন আনায়াসে। বাংলাদেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার কথা স্বীকার করবেন সবাই, যদি সৎ হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ যারা হ্যাশট্যাগ বিপ্লব করছে, সেই অল্পবয়সী তরুণরা ১৫ বছর আগে স্কুলেই ভর্তি হয়নি। তারা বলতে পারবে না, আজ ১৫ বছর পূর্বে কিংবা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এই রংপুর শহর কেমন ছিল? কত কি ই না পরিবর্তন! তবুও একটা কথা বলি, বিশাল শহরের শুরু থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত রোড ডিভাইডার দিয়ে প্রশস্ত টু ওয়ে রাস্তা নির্মাণের ফলে যানজট দূর হয়েছে। আগে শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা এখনকার রাস্তার এক লেনেরও সমান ছিল না। যাদের বিবেচনা বোধ আছে, তারা ঠিকই স্বীকার করবেন।
আর মির্জা ফখরুল ইসলামের মত যারা নিজেদের লজ্জাজনক ইতিহাস ধামাচাপা দিয়ে উল্টো আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল বলে দাবি করছেন, তারা এই উন্নয়নগুলোর বিরোধিতা করবেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই। আমাদের চারপাশে অনেক সুশীল লোকজন বিএনপি নেতাদের সাথে গলা মিলিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে ঠিক, তবে উন্নয়নই সবকিছু না। আমিও বলি- ঠিক। তবে একটা দরিদ্র দেশে অর্থনৈতিক মুক্তিটাই অগ্রাধিকারের দাবিদার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ খাতে দেশ এতটাই উন্নতি হয়েছে ফলে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরও নানা ধরণের আয়-রোজগারের সুযোগ হয়েছে।
গতকাল মির্জা ফখরুল মন্তব্য করেছেন- “আওয়ামী লীগ সেই দল যারা সন্ত্রাসী করেই টিকে আছে।” তিনি যখন এ কথা বললেন, তখন কানাডার আদালত আবারও তাদের দলকে লাগাতার ৫ বার সন্ত্রাসী দল হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। সেইসাথে দলের কোনো সদস্যকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে না বলে খবরে এসেছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ এক ঐতিহাসিক, আদর্শিক, দেশপ্রমিক, পরিক্ষীত, সম্মৃদ্ধ, সুশৃঙ্খল দল হিসাবে পরিচিত। এ দল সৃষ্টি থেকে ২৩ বছর ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটা স্বাধীন দেশ ও জাতি উপহার দিয়েছে। একাত্তরে পাকিস্থানিদের পরাজিত করে একটি দেশের জন্ম দিতে- বাঙ্গালীর স্বাধীনতার নানা ধরণের সুফল পেতে- হার না মানা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নেতৃত্ব যদি সন্ত্রাস হয়- তবে রাজাকারপুত্র ফখরুলকে কী বলা যায়?
ফখরুল আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল বললেন, তাহলে ৭১-এ তার ও তার পরিবারের ভূমিকা কী ছিল? তিনি নিজে কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? ৭২-এ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্থানি সহযোগী এত মানুষকে সাধারণ ক্ষমা করলেও ফখরুলের পিতাকে কেন সাধারণ ক্ষমা করেননি? ৭৫-এ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হলে ফখরুলের দল ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেত? তার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কি ধারাবাহিক কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন? তার দলের নেতা ক্ষমতা না নিলে ৭১-এর কৃতকর্মের জন্য তার পিতা রুহুল আমি চখা রাজাকার কি মুক্তি পেতেন? বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা পরবর্তী তার দল বিএনপি ১৫ বছর, এরশাদ সরকার ৯ বছর, তত্ববাধায়ক সকারের ২ বছর মোট মোট ২৬ বছরে তারা কী কী পরিবর্তন এনেছেন?
ফখরুলের ভাষায় সন্ত্রাসী সেই আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে কী কী পরিবর্তন এনেছে, তা কি স্বীকার করবেন? বিরোধীতা করা মানে কি সবকিছু উল্টো করে দেখা? বিএনপির সময় ঢাকা থেকে ফখরুলের গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা কেমন ছিল? এখন কেমন? ফখরুল তো বিমানে যাতায়াত করেন। বিএনপির সময়ে ঢাকা-সৈয়দপুর সপ্তাহে কয়টা বিমান চলতো? এখন দিনে কয়টা বিমান চলে খবর রাখেন? আপনার দলের লোকই আপনার এলাকার লোকদের মফিজ আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই মফিজ এলাকা থেকে কতগুলো স্ক্যানিয়া, ভলভো, আরএম গাড়ি চলে এখন? প্রতি উপজেলা থেকে কতগুলো এসি/ ননএসি বাস ঢাকা যাতায়াত করে জানেন?
ভীড়ের ভেতরে গাদাগাদি করা যাদের অভ্যাস, তাদের খোলামেলা রাস্তা অপছন্দ। ১৫ বছর আগে বিএনপি আমলে জাতীয় বাজেট কত ছিল? আজ কত? হিসাব করলে দেখবেন বাজেট ১৬ গুণ বেড়েছে। রাষ্ট্রকে টাকা আয়ের কৌশল জানতে হয়। আমার মতো অতি সাধারণ মানুষকে কত টাকা আয়কর দিতে হয়, তাতে অবাক হই, সরকার কীভাবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা,প্রতিবন্ধী ভাতা, ওএমএস, টিসিবির পণ্য সামগ্রী এতো সস্তায় দিতে পারে! লক্ষ লক্ষ বাস্তুহারা মানুষকে ঘরবাড়ি বানিয়ে দিতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশপ্রেম দরকার। আর তা আছে আওয়ামী লীগ সরকারেরই। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর দেশবাসী এটা ঠিকই বুঝতে পারছে।
বাজেটের আকার থেকে বিশ্লষণ করলে বলা যায়, তাত্ত্বিকভাবে দেশ ১৬ গুণ এগিয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমাতে সরকারের নানা উদ্যোগে কমেছে। এখন বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে নামমাত্র ব্যায় হয়। বিএনপি আমলে একজন শ্রমিককে বিদেশে পাঠাতে কত ব্যয় হতো? প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে। যার ১০০টি ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। ফখরুলের জেলাতেও এমন ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, দেখে আসবেন। হঠাৎ ভুল হতে পারে ভেবে, বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছেন কি না। এমন সুপরিসর, অত্যাধুনিক ভৌত অবকাঠামোপুর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ছোট জেলা শহরে করা সম্ভব- বিএনপি থাকলে কি সম্ভব হতো? ১৫ বছরে দেশ ও সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন কতটা হয়েছে, তা গ্রামেগঞ্জে গিয়ে দেখে আসুন। চেষ্টা করে দেখুন তো, পারবেন আরেক বাসন্তী নাটক মঞ্চায়ন করতে?
মানুষের অন্তর স্পর্শের ক্ষমতা কি বিএনপির আছে? এ দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর ৭১-এর পর মত নরক নেমে এসেছিল ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত আমলে। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিএনপি জোট। নিজেদেরকে দুধে ধোয়া তুলসিপাতা সাজাতে দলে তাই গয়েশ্বর-নিতাইদের বড় বড় পদে বসানো হয়। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের তোষণ করতে কুৎসিত স্লোগান তৈরি করে বিএনপি-জামাতিরা। তা হলো- “শেখ হাসিনার বাপের নাম- হরে কৃষ্ণ হরে রাম।” দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে নাকি দেশে ইসলাম থাকবে না, দিল্লির হুকুমে চলবে সব, মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে… ইত্যাদি। কিছুদিন আগেও গুজব ছড়ানো হয়েছিল দেশের প্রশাসনে যারা কাজ করছে, অধিকাংশই নাকি ভারতীয় নাগরিক!
আরও পড়ুন : দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এবং কিছু পত্রিকা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে
অথচ প্রতি উপজেলায় সুরম্য সুদৃশ্য মডেল মসজিদ নির্মাণ, মাদ্রাসার ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমান, ডিগ্রি কলেজের বেতনে সমতা করেও শেখ হাসিনা সেই বিএনপির চ্যালাচামুন্ডাদের কাছে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” রয়ে গেলেন! হরে কৃষ্ণ তথা হিন্দুদের নিয়ে বিএনপির এত চুলকানি! তাহলে ক্ষমতায় গেলে হিন্দুদের কী অবস্থা হবে, সহজেই অনুমান করা যায়। বিএনপি নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল দাবি করতে না পারলেও একটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠকের দল দাবি করে। অথচ নির্যাতিত-নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি আজ পর্যন্ত।
[আমজনতার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে বিএনপির রাজনীতির পার্থক্য]
রাজনীতিতে যে মেধা দরকার তেমন মেধাবী লোক বিএনপিতে নেই, এটা দেশের মানুষ জানে। হিরো আলম মার্কা মেধা দিয়ে কি দেশ চলবে? বিএনপির সময় তাদের পেয়ারে পাকিস্থানের ১ রুপি বাংলাদেশে কত টাকা ছিল মনে আছে? এই ১৫ বছর পর আমাদের ১ টাকা = পাকিস্থানের ৩ রুপি। বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে বিএনপি কাকে দাঁড় করাতে চায়? শেখ হাসিনার বিপরীতেই বা কাকে দাঁড় করাতে চায়? আছে তেমন কেউ? দেশে এতগুলো সারকারবিরোধী মিডিয়া, হাজার হাজার ইউটিউবার, অগুণিত নিউজ পোর্টাল, কেউ আজ পর্যন্ত ব্যক্তি শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতির ন্যূনতম একটি দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছেন? অথচ বিএনপি দুর্নীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশ্বের সেরা নির্বাচিত হয়েছে ৫ বার। মির্জা ফখরুল, আপনাদের সময়ের জিয়া পরিবারের পরিবারিক দূর্নীতির ঘটনাগুলো তো প্রমাণিত সত্য।
বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ হিন্দু নেতা গয়েশ্বরের সামান্য একমুঠো ভাত খাওয়া নিয়ে ফখরুলরা যা করলেন, তাতে কি তিনি সম্মানিত হয়েছেন? তাকে আপ্যায়ন করিয়ে তো সরকারের কোনো বিবৃতি ছিল না, যা নোংরামি করার আপনারাই করেছেন। ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা- প্রমাণ করতে গিয়ে বারবার বিষয়টি সামনে আনছেন আর চুলকিয়ে চুলকিয়ে ঘা করেছেন ঘটনাটি নিয়ে। রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে গিয়ে গুগলি বক্তব্য দিচ্ছেন, গয়েশ্বরকে সমবেদনা দেয়ার ছলে উল্টো তাকেই হেয় করলেন। কী ঘোড়ার ডিমের রাজনীতি করেন আপনারা? প্রবীণ বিচক্ষণ নেতাদেরকে অকার্যকর করে দল থেকে দূরে ঠেলে রেখেছেন যেন তারা তারেক রহমানের ওপর কথা বলতে না পারেন। আবার তরুণ নেতৃত্বও গড়ে ওঠার সুযোগ দিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন : বিএনপির গণশত্রুতে পরিণত হলেন গয়েশ্বর ও আমান
মনে রাখবেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করার সৎ ভাবনা থেকে যদি দলের জন্ম না হয়, তবে ওই লালু-ভুলু-ফালু-ফুলু-দুদু-দুলু দিয়ে কিছুই হবে না। আদর্শিক রাজনীতির পথে না হাঁটলে কেউ রাজনীতি শেখে না। বিএনপির রাজনীতির একমাত্র শক্তির উৎস মেধাশুন্য গান্ডুশ্রেণি, আওয়ামী বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী। এদের ওপর ভরসা করে পথচেয়ে বসে আছেন ফখরুলরা কবে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেই সুযোগে ক্ষমতা দখল করতে পারবেন- এটার নাম রাজনীতি নয়।
আরও পড়ুন :
- নেতৃত্বহীন ছন্নছাড়া দল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিপুল অর্থের যোগান আসছে যেভাবে
- দেশের ব্যাংকিং খাত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল বিএনপি আমলে, জিয়া পরিবারের হাতে
- ভাঙা স্যুটকেস-ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে শত কোটি টাকার মালিক জিয়া পরিবার