পিলখানা ট্রাজেডি

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি শোকবহ অধ্যায়ের নাম পিলখানা ট্রাজেডি। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ছদ্মবেশে ৫৭ জন দক্ষ সেনাকর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ৭৪ জন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গুছিয়ে ওঠার আগেই এরকম ভয়াবহ নাশকতার মাধ্যমে দেশকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিল দেশবিরোধী অপশক্তি। ঘটনার আকস্মিকতায় তাই স্তম্ভিত হয়ে যায় সবাই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরও পড়ুন : নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে না পারার ক্ষোভ থেকে বিএনপি-জামায়াত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট রচনা করে

এরপর গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্রুত এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু করলে, তখন রাজনৈতিকভাবে অপপ্রচার ছড়িয়ে এবং খুনিদের রক্ষায় আদালতে দলীয় আইনজীবীদের নিয়োগ দিয়ে বারবার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে থাকে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী চক্র।

একইসঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বানোয়াট বক্তব্য দেওয়া হতে থাকে। বহুমুখী প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জনগণের দৃষ্টিকে প্রকৃত ঘটনা থেকে অন্যদিকে ফেরাতে চেয়েছে তারা। অথচ, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতে প্রমাণিত হয় যে- খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা নাসিরুদ্দিন পিন্টু নিজে এই হত্যাযজ্ঞের খুনীদের ইন্ধনদাতা হিসেবে সরাসরি সম্পৃক্ত।

আরো অবাক করার বিষয় হলো, বিডিআর বিদ্রোহের আগের রাতেই খালেদা জিয়া তার সেনানিবাসের বাসা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। খালেদা জিয়ার আত্মগোপন, এবং বাসা ছাড়ার আগে লন্ডন পলাতক তারেক রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘ ফোনালাপ, এসব বিষয়ের তথ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের মাথায় ঘুরতে থাকে অনেক প্রশ্ন! তাই এসব বিষয়কে আড়ালে ঠেলে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য দ্রুত মাঠে নামানো হয় বিএনপির রাজনীতিক এবং তাদের দলীয় আইনজীবীদের।

খালেদা_জিয়াএই পাশবিক হত্যাযজ্ঞের বিচার বানচালের লক্ষ্যে নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী এইচটি খান, আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন, খালেদা জিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ হাসান আরিফ প্রমুখ।

এদিকে, ভবিষ্যতে এরকম বিদ্রোহের নামে রোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ যেন আর কখনো না ঘটে, সেজন্য সরকার বিদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে ‘বিজিবি অ্যাক্ট ২০১০’ পাস করে জাতীয় সংসদে। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে এই আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়ে খুনিদের উস্কানি দিতে থাকে বিএনপি।

আরও পড়ুন : মুখোশধারী জিয়ার স্বরূপ, এজেন্ডা ও গোপন মিশন: ফ্যাক্টস বিশ্লেষণ

শুধু তাই নয়, সারাদেশের মানুষ যখন এই বর্বর হত্যাযজ্ঞকে ধিক্কার দিয়ে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছিল, তখন চিহ্নিত খুনিদের পক্ষে আদালতে কাজ করার জন্য নিজ দলের সেরা আইনজীবীদের নিয়োগ দেয় বিএনপির হাই কমান্ড।

পিলখানা ট্রাজেডির বর্বর খুনিদের পক্ষে দাঁড়ানো সেই আইনজীবীদের তালিকা দেখলেই বিএনপির রাজনৈতিক স্টান্ডবাজির মুখোশ খুলে যাবে আপনার সামনে। এদের প্রধানতম একজন হলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, যিনি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিনের শিষ্য এবং নিজে তারেক বলয়ের একজন সক্রিয় নেতা। 8yjn8k2k

আরেকজন আইনজীবী হলেন বিএনপি-জামায়াত আমলের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।

এছাড়াও যারা খুনিদের বাঁচাতে এবং বিচারকে প্রলম্বিত করতে আদালতে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞার শিষ্য এবং বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম সরকার, অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান প্রমুখ।

জামায়াত-বিএনপিশুধু এই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টাই নয়, মূলত এই নাশকতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল বিএনপির হাইকমান্ড। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে গো-হারা হারার পর, দেশের মধ্যে কর্মরত বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নবগঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল এই দেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র। তা ব্যর্থ হওয়ায়, পরে এই হত্যাযজ্ঞের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে সরকারের প্রতি দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যদের উস্কে দেওয়ার আরেকটি ষড়যন্ত্র করেছিল তারা।

আরও পড়ুন : বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যে কারা? সেনা অফিসার হত্যার মিশনে কার লাভ কার ক্ষতি? তথ্য, সূত্র সহ প্রমাণ দেখুন

এটাই বিএনপির নাশকতা এবং প্রোপাগান্ডা স্টাইল। দল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই মডেলে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছে বিএনপি নেতারা।

[পিলখানা ট্রাজেডির বিচার বানচাল করতে চেয়েছিল বিএনপি, খুনিদের রক্ষায় নিয়োগ দিয়েছিল দলীয় আইনজীবী]

তাই- এই দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়ে, সতর্ক থাকুন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ুন।

আরও পড়ুন :