বিএনপির

বলা হয়, অপরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সে গর্তে নিজেকেই পড়তে হয় কিংবা কাঁটা বিছিয়ে কারো চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটালে সেই কাঁটায় নিজেকেই আঘাত পেতে হয়। ঠিক সেটাই ঘটছে। দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিএনপি যেসব অপকর্ম এবং নাশকতা চালিয়েছে, চালাচ্ছে, সেসবই ব্যবহার করা হবে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে; তাদের আসল চেহারা সবার সামনে তুলে ধরার কাজে।

রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ যেমনি বিএনপিকে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনি কূটনৈতিকভাবেওal_bnp মোকাবেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত ২৪শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে যে নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে তার আলোকে বিএনপিকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই ভিসা নীতিতে বলা হচ্ছে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা স্যাংশন দেয়া হবে। তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাবে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতি বিএনপির ক্ষেত্রে আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, নির্বাচন বানচালে সচেষ্ট বিরোধীদেরকে আদৌ স্যাংশন দেওয়া হয় কি না তা আগেই পরখ করে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমাবেশ করছে, সমাবেশে নেতারা বক্তব্য রাখছেন। আর এসব বক্তব্যের ধারণকৃত ফুটেজ আওয়ামী লীগের সাইবার টিম নিরীক্ষা করছে, যাচাই-বাছাই করছে। গত দুদিনে এমন ১৪টি লোকেশনের বক্তব্য ধারণ করা হয়েছে।

এক বক্তব্যে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করা হবে। বিএনপির এ ধরণের ভাষ্য সম্বলিত অন্তত ১৪ জন নেতার বক্তব্যের ফুটেজ আওয়ামী লীগের সাইবার টিম পরখ করেছে। এসব বক্তব্যের ভিডিও পাঠানো হবে মার্কিন দূতাবাসে।

দেশের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বিবেচনায় সংবিধান থেকে বহু আগেই আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। বিএনপি পেছনের রাস্তা দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য সেই ব্যবস্থাকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ এছাড়া তাদের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি মীমাংসিত।

সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক। আর এ কারণেই ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচন হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, নির্বাচন হতে হবে সংবিধানের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনই তা পরিচালনা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত নির্বাচন কীভাবে হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু বলেনি। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থনও জানায়নি। তবে তারা চায় সাংবিধানিক এবং আইন অনুসারেই যেন তা হয়।

তারা বলেছে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। আর সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোনো দলকে নির্বাচনে আনা না আনার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির মধ্যে মধ্যে পড়ে না। যদি কোনো ব্যক্তি নির্বাচনবিরোধী কথা বলেন তা গণতন্ত্রবিরোধী কথা বলে চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনবিরোধী এ ধরনের বক্তব্য মার্কিন ভিসা নীতি লঙ্ঘন হবে বলে ইতিমধ্যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু স্পষ্ট করেছেন।

[ বিএনপির রোপিত কাঁটা দিয়েই কাঁটা তোলা হবে, নথিপত্র যাচ্ছে মার্কিন দূতাবাসে ]

তাই আওয়ামী লীগের সাইবার টিম বিএনপির এসব গণতন্ত্রবিরোধী বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপগুলো মার্কিন দূতাবাসে পাঠাচ্ছে। কারণ নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপি শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বাধা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগও বুঝতে চায়, এই ভিসা নীতি প্রকৃতপক্ষে কেন দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যি সত্যি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য এই ঘোষণা দিয়েছে নাকি এর পেছনেও অন্য কোনো কারণ আছে।

আর যারা নির্বাচনবিরোধী কথা বলছে তাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। এসব কারণে এই ভিডিও ক্লিপগুলো মার্কিন দূতাবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন দেখার বিষয় ভিডিও ক্লিপগুলো পাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

 

আরও পড়ুন: