রাজনৈতিক হাতিয়ার র‍্যাব

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও চরমপন্থী দমনের জন্য র‍্যাবকে মাঠে নামানোর কথা বলা হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা করা হয়েছে খুব অল্পই। শুরুতে প্রায় অর্ধশত চরমপন্থী নেতাকে দমনের পর ধীরে ধীরে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা ও আটকের জন্য ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ বাহিনীকে। খালেদা জিয়া সরকারের নির্দেশে এই এলিট ফোর্সকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে হওয়ায় ইমেজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সঙ্কটে পড়ে সংস্থাটি। তবে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর র‍্যাবকে একটি সুপ্রশিক্ষিত পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলে। ফলে আওয়ামী সরকারের আমলে জনস্বার্থে উগ্রবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং সন্ত্রাস দমনে সরকারকে বিশেষভাবে সহায়তা করে সংস্থাটি।

এরপরেও কোনো ভুল-ত্রুটি করলে, আইন অনুযায়ী র‍্যাব সদস্যদের চাকরিচ্যুত করে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এখন। নারায়ণঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনায় যুক্ত র‍্যাব সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকার ও জনগণের কাছে সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এই বাহিনীকে গঠনের পর ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেভাবে বিশেষ ভবনের ইশারায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই অপেশাদার ও প্রতিহিংসাপরায়ণ সময়গুলো অতিক্রম করে এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে র‍্যাবকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।

আরও পড়ুনঃ খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের নমুনাঃ আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর প্রকাশ্যে হত্যার মিশন চালানো হতো

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কর্তৃক র‍্যাব গঠন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে সংস্থাটিতে বিতর্কিত করে তোলাঃ

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশজুড়ে সীমাহীন সন্ত্রাস ও লুটপাটে মত্ত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। এমনকি ক্ষমতার শেষ দিকে এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের মিশন চালায় তারা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় র‍্যাবকে ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচিত হয় খালেদা জিয়ার সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দল দমনে ব্যবহারের পর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বিএনপি-জামায়াত সরকারের সরাসরি নির্দেশে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মহিম এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবু জাফরকে দশ দিনের ব্যবধানে ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে বিরোধীদলের নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়।

এমনকি গাজীপুরের টঙ্গীর জনপ্রিয় ও নির্বাচিত সংসদ সদস্য জননেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকেও প্রকাশ্য জনসভায় গুলি করে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা। এরপর সেই হত্যাযজ্ঞের বিচারের জন্য সাক্ষী দিতে রাজি হয় ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সুমন। এই তথ্য জানার পর খুনিদের রক্ষা করতে তারেক রহমানের নির্দেশে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সুমনকে হত্যার অ্যাসাইমনমেন্ট দেন র‍্যাবকে। এরপর র‍্যাব তাকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাশবিক নির্যাতন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এভাবেই প্রতিপক্ষ দমনে র‍্যাবের মতো একটি বিশেষ বাহিনীকে ব্যবহার করে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন খালেদা জিয়া।

এসব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি নোটিশ করলে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এসব হত্যাযজ্ঞকে বৈধ বলে দাবি করেন। এমনকি ২০০৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করেন যে- র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে কেউ মারা গেলে তা আইনের আওতায় পড়ে না।

ফলে ২০০৪ সালে ক্রসফায়ারেই মারা যায় ১৮২ জন, এরমধ্যে র‍্যাবের হাতে প্রাণ হারায় ৮৮ জন। এদের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীর পাশাপাশি প্রায় অর্ধেকই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী। এমনকি ২০০৫ সালের ২৮ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানী বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসও এর অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়গুলোতে আকস্মিক অভিযান চালায় র‍্যাব। এর কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র‍্যাব জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। এই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই হলো হাওয়াভবনে বসে বিকল্প সরকার পরিচালনাকারী বিএনপি নেতা তারেক রহমান, যে কয়েকজন সংসদ সদস্যের মধ্যে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছিল। এভাবেই একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিএনপি-জামায়াত নেতারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে বাহিনীটিকে বিতর্কিত করে তোলে।

হাওয়াভবন ও তারেক রহমান যেভাবে ব্যক্তিগত মিশনে ব্যবহার করে র‍্যাবকে বিতর্কিত করেছিলঃ

তারেক রহমান যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে প্রতিপক্ষ দমন করতো, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানকে ক্রসফায়ারে হত্যার মাধ্যমে। শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান নিহতের পর ২০০৪ সালের ৮ আগষ্ট তার মেয়ে আইরিন সাংবাদিকদের জানায়, একজন এমপির নির্দেশে তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। ইনকিলাবের সেই প্রতিবেদনে আইরিন আরো জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তার বাবা এমপির পক্ষে অনেক কাজ করেছে।

কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ফলে র‍্যাব কর্তৃক পিচ্চি হান্নানকে গ্রেফতারের পর বিএনপির হাই কমান্ডের নির্দেশে অস্ত্র উদ্ধারের নামে হত্যা করে মূল গডফাদারদের অপকর্মকে আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠিক যেভাবে আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের সাক্ষীকে গ্রেফতার করে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই হত্যা করে খুনিদের পরিচয় আড়াল করানো হয় র‍্যাবের মাধ্যমে।

২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তথ্য প্রমাণ ও সন্ত্রাসীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিএনপির হাই-কমান্ডের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের নির্বাচনকালীন চুক্তি এবং পরবর্তীতে চাঁদাবাজি-দখলদারির হিস্যার সংবাদ প্রকাশ হয়। হিস্যায় বনিবনা না হওয়ায় পিচ্চি হান্নানের নাম তারেক রহমান গংদের গুড-বুক থেকে কাটা পড়ে। এই বিষয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন কালা জাহাঙ্গীরের শিষ্য তাজ, ইব্রাহিম ও লম্বু সেলিম গ্রেফতার হওয়ার পর সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তেজগাঁও ছাত্রদলের এজিএস ইমাম ও লম্বু সেলিমের মাধ্যমে হাওয়া ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার গুরু কালা জাহাঙ্গীরের। সেসময় নির্বাচনে জিততে যা কিছু করার, সব করার জন্য কালা জাহাঙ্গীরকে অনুরোধ করেছিল তারেক রহমান। বিনিময়ে পরবর্তীতে কালা জাহাঙ্গীরের গ্রুপকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল হাওয়া ভবন থেকে।

আরও পড়ুনঃ বিএনপি-জামায়াত শাসনামল: সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কারণে উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় ২৬ দাতা রাষ্ট্রের ক্ষোভ প্রকাশ

কুখ্যাত খুনি ও সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল সরাসরি তারেক রহমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং হারিস চৌধুরীর। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং হাওয়াভবনের অন্যতম ক্রীড়নক লুৎফুজ্জামান বাবরের ডান হাত ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগরকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছিল তারেকের নির্দেশে। সিরিয়াল কিলার সুব্রত বাইনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তারেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের। এমনকি মামুনের ব্যবসাতেও সুব্রতর কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা ছিল। মিরপুর-পল্লবীর এমপি এস এ খালেক জমিদখল এবং টেন্ডারবাজির জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত ও খুরশিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো। এসব টাকার ভাগ পৌঁছে যেতো হাওয়া ভবনে।

এ ব্যাপারে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজ আরো জানায়, অভিযান শুরুর পর নিজে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আগে আরমানকেও পালানোর পরামর্শ দিয়েছিল সে। কিন্তু আরমান বলেছিল- তাকে বাঁচানোর লোক আছে। পরে আরমান আত্মসমর্পণ করে। সেই রাতেই ক্রসফায়ারের জন্য র‍্যাব তাকে সাভারের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী বাবরের ফোন পাওয়ার পর তাকে আবার ফিরিয়ে এনে নিরাপদে রাখা হয়। বাবর নিজে রক্ষা করে আরমানকে।

সন্ত্রাস দমনের ছদ্মবেশে বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হত্যাযজ্ঞঃ

২০০৪ সালের ১৫ জুলাই গাজীপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করা হয় সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষী আওয়ামী লীগ কর্মী সুমন আহম্মদ মজুমদারকে। পরিবারের সদস্যরা জানান, এরপর র‍্যাব-১ এর ক্যাম্পে নিয়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে তার হাত-পা খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। পাশবিক নির্যাতনে মধ্যরাতে প্রাণ হারায় সে। মূলত, সংসদ সদস্যর খুনিদের বাঁচাতে বিএনপির হাই-কমান্ডের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিল র‍্যাব। কিন্তু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তখন প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বলেন, সুমন নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই!

একই বছর ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া এলাকা থেকে মাসুম চৌধুরী নামের একজনকে গ্রেফতার করে ব্যাপক নির্যাতন চালায় র‍্যাব। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা না থাকা এবং এলাকার জনগণ তাকে ভালো ছেলে হিসেবে সার্টিফাই করার পরেও মাসুমকে আটকের কারণ হিসেবে র‍্যাব জানায়, সে ছাত্রলীগ করে।

২৮ নভেম্বর ২০০৪ সালের সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক মহিম উদ্দিনকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরপর গভীর রাতে চন্দনাইশে ক্রসফায়ারে মারা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। এরপর ৩০ নভেম্বর পুলিশ প্রহরায় মহিমের লাশ দাফন করা হয় সরকারের নির্দেশে।

২০০৪ সালের ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী নজরুল ইসলাম সুইটকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরিবারের অভিযোগ, এরপর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানের নামে ২৯ নভেম্বর মধ্যরাতে হাটহাজারীর ফতেহাবাদে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয় তাকে।

আরও পড়ুনঃ খালেদা জিয়ার শাসনামল: বিএনপি নেতাদের নাম থাকায় হত্যা মামলা খারিজ করে দিতো আদালত!

২০০৪ সালের ১ নভেম্বর ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া থেকে যুবলীগ কর্মী শফিকুল ইসলামকে আটক করে র‍্যাব। ২ নভেম্বর আইলপাড়ার সিমেন্ট ফাক্টরির কাছে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানায় তার মা। তাদের দাবি, শফিকুলকে গ্রেফতারের সময় তার পায়ে গুলি করেছিল র‍্যাব। সে হাঁটতে পারছিল না। এই অবস্থায় কেউ পালানোর চেষ্টা করবে তা বিশ্বাসযোগ্য না। বরং তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২ লাক টাকা চেয়েছিল র‍্যাব, কিন্তু তা না দেওয়ায় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

৮ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু জাফর খানকে র‍্যাব গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। তিনি জানান, রাজনীতি করে জন্য তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

২০০৫ সালের ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক শ্যামল সরকার র‍্যাবের হাতে আটকের পর কারাবন্দি অবস্থায় প্রাণ হারান।

এমনকি থানায় কোনো মামলা না থাকার পরেও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ২০০৫ সালের ৬ এপ্রিলের এই সংবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বলেন, মেয়র নির্বাচনে জোট সরকার নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে র‍্যাবকে ব্যবহার করছে এবং নেতাকর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য কোনো কারণ ছাড়া র‍্যাব দিয়ে নেতাদের করানো হচ্ছে।

২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েই বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিধনের মিশন হাতে নেয় বিএনপি-জামায়াতঃ

২০০১ সালের অক্টোবরে সরকার গঠনের পরেই প্রতিপক্ষ দমনের পরিকল্পনা হাতে নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। হাওয়াভবনে বসে তারেক রহমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে সন্ত্রাস দমনের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের নীলনকশা তৈরি করে। ২০০২ সালে পুলিশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স গঠন করে দেশজুড়ে গণগ্রেফতার চালিয়ে সমালোচিত হয় সরকার। বিশেষ অভিযান চালিয়ে একমাসে রাজধানীতে দশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হলেও, তাদের আট হাজারেরর বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ ছিল না। পরে এদের ডিএমপি অ্যাক্টে গ্রেফতার দেখায় সরকার এবং মারা যায় ২৯ জন। এরপর তিন মাস ধরে অপারেশন ক্লিনহার্ট বা যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে আটক করা হয় এগার হাজার মানুষকে এবং হেফাজতে নিয়ে ৫৬ জন ব্যক্তিকে মেরে ফেলা হয়।

অভিযোগ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় এবং নির্যাতনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে কৌশলে এসব অভিযানের জন্য পুলিশের একটি অংশকে নিয়ে ২০০৩ সালের শুরুতে র্র্যাট গঠন করে বিএনপি-জামায়াত সরকার। ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারিতে র্র্যাট গঠনের পর, ১৫ ফেব্রুয়ারি ঈদের দিন রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় ১২ জন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না।

আরও পড়ুনঃ খালেদা জিয়ার নির্দেশে আওয়ামী লীগের ওপর দেশজুড়ে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা

কোনো সন্ত্রাসীকে না ধরলেও, এভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরে ধরে আটকের পর সমালোচিত হয় র্র্যাট। ফলে ৭ জুলাই ২০০৩ সালে র‍্যাব আইন পাশ এবং ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত হরতাল কর্মসূচি নস্যাৎ করার জন্য মাঠে নামানো হয় র‍্যাবকে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যা এবং আটকের মাধ্যমে দেশ থেকে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।

এমনকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যার পরও র‍্যাবকে দিয়ে গণগ্রেফতারের আতঙ্ক ছড়ায় খালেদা জিয়ার সরকার। দেশের যে স্থানগুলোতে বেশী প্রতিবাদ হয়েছে, সেসব স্থানের ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের নামের তালিকা করে ধরপাকড় অভিযান চালায় র‍্যাব। বিশেষ একটি ভবনের নির্দেশে (তারেক রহমানের হাওয়াভবন) র‍্যাবকে এসব কাজ করতে হয়েছে বলে সমসাময়িক পত্রিকাগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়। ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের যুগান্তর পত্রিকা জানায়, চট্টগ্রামে ৩০০ ছাত্রলীগ নেতার তালিকা করে বাসায় বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব। ছাত্রলীগকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে র‍্যাবের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০০৫ সালের ২ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদে জানা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ের মার্কিন রিপোর্টে র‍্যাবকে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সংসদসদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষী আওয়ামী লীগ কর্মী সুমনকে গ্রেফতার করেই হত্যা করার ঘটনায় বিশেষ শঙ্কাও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এমনকি সেই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, র‍্যাব রাজনৈতিক প্রভাবে বেআইনিভাবে বিচারবহির্ভূত অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষা ও লঙ্ঘন রোধে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

পরবর্তীতে র‍্যাবের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কর্তৃক র‍্যাবকে ব্যবহারের তথ্যগুলো দেশের সমকালীন প্রথম সারির গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর, প্রথম আলো. ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, ইনকিলাব, সংগ্রাম, বাংলাবাজার, ইত্তেফাক, সংবাদ প্রমুখ পত্রিকা থেকে নিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিশেষ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।

আরও পড়ুনঃ