দুর্নীতি

বিএনপি ও দুর্নীতি যেন একে অপরের সমার্থক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ করার জন্য চরম সমালোচিত বিএনপি। জিয়ার জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল থেকে সুক্ষ্ণ কারচুপির মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ, সবকিছুই বিএনপির রাজনীতির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে। ২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পরপর ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের সুনাম নষ্ট করে বিএনপি। বিএনপির দুর্নীতি-দুঃশাসনের স্মৃতির কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠে দেশের মানুষ।

বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে ছিল চ্যাম্পিয়ন। বিএনপির ভাষ্যমতে বিষয়টা কাকতালীয়, এ সময় অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশ থেকে বেশি দুর্নীতি করেনি। সে কারণেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন! অবশ্য বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পায় বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে ছিল নিমজ্জিত। দুর্নীতিপরায়ণ এই সরকারের শাসনামলে বিশ্ব গণমাধ্যমে এবং স্থানীয় দুই-একটি পত্রিকায় দুর্নীতির কথা প্রকাশ হলেও অধিকাংশ গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে রাখা হয়েছিল। এ সময় সাংবাদিক খুন ছিল নিয়মিত ঘটনা।

Corruption তথ্য বিশ্লেষণঃ বিএনপি'র দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নশিপ! আওয়ামী লীগের প্রোপাগাণ্ডার না বিএনপির কৃতকর্মের ফলাফল? বিএনপি-দুর্নীতি

 

 

 

 

তথ্যসূত্র বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সময় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামল। সে সময়ে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এসব দুর্নীতির মূল কারিগর ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান।

সবেচেয়ে বেশি দুর্নীতি হওয়া দেশের তালিকায় টানা পাঁচ বছর শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই-এর প্রকাশ করা দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০১৮-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

“পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শূন্য থেকে ১০ স্কেলে স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই স্কেলে ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার এক নম্বরে ছিল বাংলাদেশ। পাঁচ বছরে বাংলাদেশে স্কোর ছিল যথাক্রমে ০.৪, ১.২, ১.৩, ১.৫ ও ১.৭।”

[তথ্য বিশ্লেষণঃ বিএনপি’র দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নশিপ! আওয়ামী লীগের প্রোপাগাণ্ডার না বিএনপির কৃতকর্মের ফলাফল? ]

বিএনপি যখন ক্ষমতায়, জিয়া পরিবার তখন হাজার হাজার কোটি টাকা সম্পদের মালিক। লঞ্চ, টেক্সটাইল মিলস, বিদেশে বাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স- এগুলো হঠাৎ কোথা থেকে এলো? হঠাৎ করে বেগম জিয়া ও তার সন্তানরা কিভাবে এত টাকার মালিক হলো? পুরো জিয়া পরিবার, অর্থাৎ খালেদা জিয়া, তারেক, কোকো সবাই শুধু অসৎ নয়, তারা চরম দুর্নীতিবাজ, জিঘাংসাপরায়ণ, ক্ষমতালোভী। আদালতে খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে এবং সাজা হয়েছে। তারা শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার মালিক হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেই টাকা বিদেশে পাচারও করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তারেক রহমানের ১২ কোটি টাকা আটক করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১২ সালে সেই টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসে। বাংলাদেশের কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর আট কোটি টাকা ফেরত দেয়। তারেক ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। আমেরিকার এফবিআই এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে।

এ ব্যাপারে ২০১২ সালে এফবিআইর প্রতিনিধি ঢাকার বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা ও ২১ কোটি টাকা জরিমানা হয়। একইভাবে তারেক রহমানের নামে লন্ডনের একটি ব্যাংকে প্রায় ছয় কোটি টাকা পাওয়া গেছে এবং তা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া তারেক রহমান বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছিলেন। দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি (বাড়ির ঠিকানা: স্প্রিং ১৪, ভিলা: ১২, এমিরেটস হিলস, দুবাই)। এগুলো সব তারেক রহমানের দুর্নীতির একাংশ মাত্র।

[তথ্য বিশ্লেষণঃ বিএনপি’র দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নশিপ! আওয়ামী লীগের প্রোপাগাণ্ডার না বিএনপির কৃতকর্মের ফলাফল? ]

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মাধ্যমে গরীব-এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ করেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ হলো, এতিমদের জন্য সহায়তা হিসেবে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওই টাকা দিয়েছিল কুয়েতের আমির। সৌদি আরবের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যম ওই টাকা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন বিজ্ঞ আদালত।

ক্ষমতায় থাকাকালীন বেগম জিয়া ও তারেক রহমানসহ অন্যান্য দুর্নীতিবাজরা দেশকে দুর্নীতি স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন। জিয়া পরিবারের দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ ও দেশের জনগণ। চুরি, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ, সীমাহীন লুটপাট করে দেশকে পিছিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াত সরকার। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অপরাজনীতির স্মৃতি মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন দেশের মানুষ।

আরও পড়ুনঃ