
বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ৭ই মার্চ। রেসকোর্সের ময়দানে ১৯৭১ সালের এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্থানের নির্যাতন জুলুম অবিচার ও শোষণের অবসান ঘটাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সেদিন সাড়ে ৭ কোটি মানুষ একটা মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অসহযোগ গড়ে তোলে। যার প্রেক্ষিতে পাকিস্থানের তৎকালীন সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালিকে পাকিস্থানি সেনাদের ভয় উপেক্ষা করার সাহস যুগিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে পাকিস্থানের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটানোর। একটা জাতি কীভাবে একটা ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলতে পারে মাত্র ৯ মাসে- স্বাধীনতার ৫ দশক পরেও বিশ্ববাসীর কাছে এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে সবসময়। রাজনীতিবিদ, গবেষক, ঐতিহাসিকরা এই ভাষণের দৃষ্টান্ত দেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন তো বটেই জাতিসংঘও এই ভাষণকে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদার আসন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীকে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে এবং দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনকারী জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় ৭ই মার্চকে স্বাধীনতার গ্রিন সিগন্যাল বলে আখ্যা দিলেও ১৫ই আগস্টের পর স্বরূপে আবির্ভূত হন। পাঠ্যপুস্তক এবং গণমাধ্যম থেকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মুছে বিকৃত ইতিহাস এবং পাকিস্থান প্রেম ছড়ানো শুরু করেন। যুদ্ধাপরাধীদেরকে প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতিও বানানো হয়। জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করছে আজও বিএনপি। দলের মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব- দুজনই চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান। এছাড়াও দেশবিরোধীদের পরিবারের লোকজন তো বিএনপিতে ভরপুর। রাজাকার, আলবদর, আলশামস তথা যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাও পর্যন্ত করেছিল বিএনপি। বিচার ঠেকাতে গিয়ে সারাদেশে বিএনপি-জামাতের চালানো তাণ্ডবে মারা যান শত শত মানুষ। সেই বিএনপি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ঐতিহাসিক ৭ই মার্চই নয় শুধু, বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোও পালন করে না।
[ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে কলঙ্কিত করতে কর্মসূচির নামে বিএনপির নাশকতা পরিকল্পনা]
আর তারই ধারাবাহিকতায় এবার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে কলঙ্কিত করতে বিএনপি দিবসটিতে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাজপথে নামছে। এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে তারা দলীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সাধারণা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবলে বলা যায়, এমন কর্মসূচির বিরোধিতার কিছু নাই, রাজনৈতিক অধিকার আছে তাদের। কিন্তু এই সমাবেশ কেন ৬ই মার্চ কিংবা ৮ই মার্চ করতে পারছে না বিএনপি? কেন ৭ই মার্চকে বেছে নিতে হয়েছে? তারা তো সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলা, তাঁর অবদানকে অস্বীকার করার রাজনীতিটাই করছে সৃষ্টির পর থেকে।
সবাই জানে, ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় কারা খুশি হয়েছিল। কারা সেদিনটিকে জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন মনে করে, সবাই জানে। চরম দেশদ্রোহী ও স্বাধীনতাবিরোধী কেউ ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসরত সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো সভ্য মানুষ দিবসটিকে উদযাপন করার কথা ভাবতেও পারেনা। কিন্তু সেই ১৫ই আগস্টকে উদযাপনের উপলক্ষ্য বানিয়ে ফেলেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যেহেতু আনন্দের আতিশয্যে কেক কাটা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, তাই সেই দিনটিকে নিজের ৬টি ভুয়া জন্মদিনের আরেকটি হিসেবে দাবি করে কেক কাটার নষ্ট রাজনীতি শুরু করেছিলেন তিনি। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে কলঙ্কিত করতে বিএনপি এমন কর্মসূচি দিয়েছে। তবে এখানে ঘটনা অতটা সরল নয়।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেছেন, ৭ই মার্চ দলের সমাবেশে মাইক ব্যবহারের অনুমতি ও নিরাপত্তা এবং সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে শনিবার (৪ঠা মার্চ) পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতা-কর্মীরা আসবেন। তবে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপন করবেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলবে সেদিন। বিপুল জনসমাগম হবে। পরদিন আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্ট উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে বহু মানুষ। অর্থাৎ আগামী কয়েকদিন ঢাকা শহর হয়ে উঠবে লোকে লোকারণ্য। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের জন্য এটাই মোক্ষম সুযোগ।
[ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে কলঙ্কিত করতে কর্মসূচির নামে বিএনপির নাশকতা পরিকল্পনা]
আর এই সুযোগটাই খুঁজছিল ওরা অনেকদিন ধরে। সমাবেশে অংশগ্রহণের নাম করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে দলের সন্ত্রাসীদের ঢাকায় আনছে বিএনপি-জামায়াত। বড়সড় নাশকতা ঘটানোর একটা পরিকল্পনাও আছে তাদের। ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকার একটি ভবনে আজ বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যদিও কারণ এখনও অজানা। এমন অনেক রহস্যজনক ঘটনা ঘটছে বিগত কয়েকদিন ধরে। যার সাথে বিএনপির সম্পৃক্তা উড়িয়ে দিতে পারছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ৭ই মার্চকে কেন্দ্র করে বিএনপি আবারও গুরুতর কোনো ঘটনা ঘটানোর পাঁয়তারা করছে, এমনটাই মত নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। জনাকীর্ণ স্থানে যদি বড় মাপের নাশকতা ঘটানো হয়, তবে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটবে যেমন, একইসাথে বাংলাদেশকে পুনরায় অস্থিতিশীল এবং সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হবে বিএনপি।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার এ সময়ে যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে পূর্ণ গতিতে, যখন বাংলাদেশে খাদ্য মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত, যখন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠে উৎপাদন হচ্ছে জোরেশোরে, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, বিদেশি বিনিয়োগসহ সকল দিকে বাংলাদেশ যখন সমান অর্থনীতির দেশগুলো থেকে অনেকখানি এগিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রশংসায় ভাসছে, ঠিক তখন দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের জন্য পেছন দিকে একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিএনপি। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে এখনই।
আরও পড়ুনঃ
- রমজানের আগে ঢাকায় বড় নাশকতার পরিকল্পনা বিএনপির, পুরনো রুপে ফিরছে বিএনপি!
- ১৫ কোটি টাকায় সংস্কারকৃত মাঠে বিএনপির ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষমতায় গেলে দেশের কী হাল করবে!
- পদযাত্রার আড়ালে বিএনপির নাশকতা, হাতে হাতে রড, ককটেল !