
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এক গোপন ও ভয়ানক কৌশলে মেতে উঠেছিলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার। এমনকি পাকিস্তানকে বাঁচাতে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলো তারা। তা ছাড়া জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশ প্রশ্নেও আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির অন্যতম ছিলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার। নিক্সন নিজেও প্রথম থেকেই সে নীতির প্রতি জোর সমর্থন দিয়ে এসেছেন।
৬ মার্চ সকাল ১১: ৪০ থেকে দুপুর ১২: ২০ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের আন্তঃবিভাগীয় কমিটি ‘সিনিয়র রিভিউ গ্রুপ’ এর সভা ডেকেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি এই গ্রুপের সভাপতি। সে বৈঠকে কিসিঞ্জার স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশে সামরিক হামলা শুরু হলে নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানের সমালোচনা করবে না।
পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম হোক তা চায়নি মার্কিন প্রশাসন। বিশেষ করে হেনরি কিসিঞ্জার। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে ভাষণের কয়েক ঘন্টা আগে ৩২ নাম্বারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেন মার্কিন দূতবাসের কর্মকর্তা ফারল্যান্ড। ফারল্যান্ড আমেরিকার পক্ষে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন হোক এটা যুক্তরাষ্ট্র চায় না।“
কিন্তু মার্কিন হুশিয়ারি উপেক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু।
[অনুসন্ধানঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমেরিকার ভূমিকা! যে ইতিহাস সবসময় আড়ালে থেকে যায়।]
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দূতালিতে চীনের সঙ্গে গোপন আঁতাত নির্মাণে ব্যস্ত মার্কিন প্রশাসন সে সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্বিকার গণহত্যার কোনো নিন্দা জ্ঞাপন করেনি। এমনকি বিশ্ব ফোরামে আলোচনাও করতে দেয়নি। পাকিস্তান যাতে ভেঙে না যায় সেজন্য তারা মুজিবনগর সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিল। ভারতকেও চাপের মুখে রেখেছিল বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। জাতিসংঘে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে এসে তারা পাকিস্তানের ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়ন একাধিকবার ভেটো প্রয়োগ করে সেই চেষ্টা প্রতিরোধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে যে শেষ পর্যন্ত সামরিক শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করেছিল । বঙ্গপোসাগর অভিমুখে মার্কিন সপ্তম নৌবহর হয়েছিলো, যা মালাক্কা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল সভিয়েত ইউনিয়নের নৌবহর। কিন্তু বাঙালি যোদ্ধাদের বীরত্বে ততদিনে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়াটা কিসিঞ্জার হজম করতে পারেনি। তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করে এই রাষ্ট্র টিকবে না এমন ভবিষ্যদ্বাণীও করেন। কিসিঞ্জারের সহকারী রজার মরিস লিখেছেন, “কিসিঞ্জার শেখ মুজিবকে ঘৃণা করতেন। বিদেশী শত্রুর তালিকায় শেখ মুজিবকে রেখেছিলেন তিনি।” স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মকে নিজের পরাজয় হিসেবে দেখতেন। এজন্য শুরু থেকেই বাংলাদেশ-বিরোধী দৃঢ় অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
[অনুসন্ধানঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমেরিকার ভূমিকা! যে ইতিহাস সবসময় আড়ালে থেকে যায়।]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের যেকোনো দল বা শক্তির বিপক্ষে সেই একই নীতিতে অটল আছে মার্কিন প্রশাসন। ১৯৭১ এর পরাজয়কে এখনও মেনে নিতে পারেনা যুক্তরাষ্ট্র, সুযোগ পেলেই বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায় তারা।
আরও পড়ুনঃ
- প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দিয়ে প্লান ‘বি’ বাস্তবায়নে বিএনপি
- যুক্তরাষ্ট্র: ‘সভ্য’ দেশের পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড
- বাংলাদেশকে চাপ দিলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবেঃ যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সতর্কতা
- INVESTIGATION: America’s role in Bangladesh’s independence EXPOSED