পরিকল্পনা

অসাংবিধানিক উপায়ে হঠকারিতার মাধ্যমে দেশের সরকার দখলের পরিকল্পনায় দুটি নীলনকশা করেছিল তারেক রহমান। ইতোমধ্যে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে দ্রুত ‘প্লান বি’ বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে সে। আর ‘প্লান বি’ হলো ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মতো সহিংসতা সৃষ্টি করা, জামায়াতের সাহায্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করা। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় তারা যেমন জোটবদ্ধভাবে মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিল, সেভাবেই আক্রমণে নামবে তারা কিন্তু এবার পোশাকটা একটু আলাদা, স্টাইলেও থাকছে ভিন্নতা। মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ প্লান তৈরি করেছে তারেক রহমান।

জনমনে উস্কানি ও গুজব ছড়িয়ে মাঠ দখলের ‘প্লান এ’ ব্যর্থ যেকারণেঃ

প্রথম পরিকল্পনায় তারেক রহমান আশা করেছিল যে, বিএনপিতে থাকা তুলনামূলকভাবে ক্লিন ইমেজের নেতাদের সামনে রেখে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ করাবে। এরপর ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে ঢাকায় সমাবেশ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মানবজটলা সৃষ্টি করবে। সমাবেশের আগে ও পরে সড়কে টানা অবস্থান নিয়ে নাগরিক জীবন স্থবির করে দেবে। ফলে বিপাকে পড়বে সরকার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক লবিস্টদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশানের তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেবে বাংলাদেশের। ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এই নিষেধাজ্ঞা দিলে, বিএনপির নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠবে এবং বেপরোয়া হঠকারিতা ও নাশকতায় লিপ্ত হয়ে ঢাকা অচল করে দেবে। এটাই ছিল প্লান ‘এ’ বা তারেক রহমানের প্রথম পরিকল্পনা।

কিন্তু ১০ তারিখে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে তিনবেলা খাওয়ার সুবিধা ও নগদ টাকা দিয়েও খুব বেশি লোক আনতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। পরে মাত্র ত্রিশ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে তারা। কিন্তু সমাবেশের একমাস আগে থেকে বিএনপি নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছিলো, যে- ১০ তারিখে সরকারের পতন হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে। এর কোনো কিছুই না হওয়ায় কর্মসূচি শেষ হওয়ায় আগেই সমাবেশস্থল ত্যাগ করে বিএনপির কর্মীরা। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারা স্পষ্ট জানায় যে, হতাশ হয়ে তারা বাড়ি ফিরেছে।

[প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দিয়ে প্লান ‘বি’ বাস্তবায়নে বিএনপি]

তারেক রহমানের প্রথম পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপির বর্বরোচিত নাশকতা, গণমানুষের ঘরবাড়ি জ্বালানো, চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকারে থাকার সময় মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও সীমাহীন নির্যাতন। গণমানুষ এই দলটিকে এখন রীতিমতো ভয় পায়। তাই মুষ্ঠিমেয় দলীয় কর্মী এবং পূর্বে বিএনপির ছাতার নিচে থেকে অপরাধ কর্ম সম্পাদনকারীরা ছাড়া কোনো সাধারণ মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। বিএনপি তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ইমেজের কয়েকজন নেতাকে সামনে রেখেও তারেক রহমান গণমানুষকে বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। তারমধ্যে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী হুমকি ধামকি দেওয়ার পর ফলাফল শূন্য দেখে কর্মীদের একটি অংশও এখন হতাশ।

নতুন স্টাইলে পুরনো নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘প্লান বি’ সক্রিয়:

বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতা ও জনমনে তাদের কোনো অবস্থান না থাকার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ‘প্লান বি’ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে তারেক রহমান। এই পরিকল্পনা অনুসারে বিএনপি-জামায়াত আবারো আগের মতো একসাথে রাজপথে নামবে, তবে একটু অন্যভাবে। এর আগে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের জন্য বার্হিকভাবে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কারণ জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট একে ভয়ানক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে অভিহিত করে। ফলে অফিসিয়ালি জামায়াতের সাথে থাকলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিএনপির পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানায়।

একারণে জামায়াতের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকার ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সমর্থন আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিএনপি। এরপর জামায়াতকে পর্দার পেছনে রেখে নিজেরা কিছু আইওয়াশ কর্মসূচি করে দলটি। জনগণের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে, তারেক রহমানের নির্দেশে এখন সহিংসতা সৃষ্টির জন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর আবারো মাঠে নামছে তারা। যদিও তারা দাবি করছে, আন্দোলন হবে পৃথকভাবে। কিন্তু এটি সবার কাছেই স্পষ্ট যে, শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দেওয়ার জন্য তারা এক টেবিলে বসে তাদের দশ দফা ঘোষণা করেনি। ঘোষণা করেছে আলাদাভাবে। কিন্তু তাদের কর্মসূচি পালন করবে একসঙ্গে।

[প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধোঁকা দিয়ে প্লান ‘বি’ বাস্তবায়নে বিএনপি]

কারণ- ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ থেকে বিএনপি যে দশ দফা ঘোষণা করে, তার সঙ্গে সঙ্গেই জামায়াতও দশ দফা ঘোষণা করে। দুই দলের দাবিগুলো সবই এক। তারা ২৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভও করবে একইসঙ্গে। হয়তো বিদেশিদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য মিছিলগুলো আলাদাভাবে করবে। এলাকা ভাগ করে নিবে তারা। এরপর নিজ নিজ এলাকায় নিজ নিজ দলের ব্যানারে মাঠে নামবে এই নাশকতাকারীরা। জামায়াতের পেশি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, ক্ষমতার ভাগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, আবারো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগের মতো হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতায় মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

আরও পড়ুনঃ