
সাড়ে ৪ একর আয়তনের গোলাপবাগ মাঠটি প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কথা ছিল আগামী বুধবার (১৪ই ডিসেম্বর) মাঠটি উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু তার আগেই এই মাঠে সমাবেশ করে বেহাল দশা করেছে বিএনপি। সমাবেশের কারণে মাঠের সব ঘাস উঠে মাটি সরে গেছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপে সবুজ ঘাস মরে বিবর্ণ হয়ে গেছে পুরো মাঠ। শুধু তা-ই নয়, মাঠের চারপাশের বড় বড় গাছ, সীমানাপ্রাচীরের পৃথক চারটি অংশও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন মাঠটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব তৈরি করছে ডিএসসিসি।
স্থানীয় জনগণ এবং ক্রীড়ামোদী কিশোর-তরুণরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ‘একটা সামান্য খেলার মাঠের এমন বেহাল দশা করতে পারে যারা, তারা ক্ষমতায় গেলে দেশটার যে কী করবে, ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে’, উদীয়মান ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন, যিনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলছেন, প্রতিবেদককে জানালেন তার এই ক্ষোভের কথা। এছাড়াও এলাকার প্রবীণ ফুটবলার জামশেদ খান জানান, এমনিতে ঢাকায় খেলার মাঠের অভাব। আমাদরে দীর্ঘদিনের দাবির মুখে এই মাঠটি সংস্কার করেছে সরকার। যখন শিশু-কিশোররা প্রস্তুতি নিচ্ছিল এই মাঠে খেলার জন্য, তখন এমন একটা ম্যাসাকার হয়ে গেল!
গত শনিবার (১০ই ডিসেম্বর) গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মাঠের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক সমবেত হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স গোলাপবাগ খেলার মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে ‘গোলাপবাগ খেলার মাঠের কোনো ধরনের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তে’ বিএনপিকে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় ডিএসসিসি।
[১৫ কোটি টাকায় সংস্কারকৃত মাঠে বিএনপির ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষমতায় গেলে দেশের কী হাল করবে!]
ডিএসসিসির এই মাঠটি অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন। এই অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার (১১ই ডিসেম্বর) সকালেই আমরা মাঠটি পরিদর্শন করেছি। মাঠটির কী কী ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতো তা হিসাব করা হচ্ছে। তারপর শর্ত অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
রোববার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মাঠে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। তা পরিষ্কারে কাজ করছে ডিএসসিসির ২৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। মাঠের দক্ষিণ পাশে সীমানাপ্রাচীরের পৃথক চারটি অংশ (গ্রিল) ভাঙা। মাঠের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে ৪টি নিমগাছ ও বকুল গাছ ভেঙে রয়েছে। মাঠের ঘাস উঠে গেছে সর্বত্র, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মাটি উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া মাঠের গ্যালারি, গ্রন্থাগার, ব্যামায়াগার, অফিস ঘরের দেয়াল পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সমাবেশের মঞ্চ তৈরিতে যেসব বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা এখনো মাঠের দক্ষিণ পাশে পড়ে আছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাজাহান আলী জানান, তারা ভোররাত থেকে মাঠের চারপাশের রাস্তা পরিষ্কার করেছেন। সমাবেশের কারণে সায়েদাবাদ থেকে গোলাপবাগ, মানিকনগর এলাকার সব রাস্তায়ই ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিল। এগুলো শেষ করে তারপর মাঠ পরিষ্কারে নেমেছেন তারা। মাঠের সম্পূর্ণ আবর্জনা পরিষ্কার করতে বিকেল ৩টা বাজবে।
[১৫ কোটি টাকায় সংস্কারকৃত মাঠে বিএনপির ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষমতায় গেলে দেশের কী হাল করবে!]
ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত এ মাঠ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নির্মাণকাজে ব্যবহার হয়। স্থানীয়দের খেলাধুলার জায়গা বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। পরে জনগণের দাবি মাথায় রেখে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গোলাপবাগ মাঠের সংস্কার শুরু করে ডিএসসিসি। প্রায় সাড়ে ৪ একর আয়তনের মাঠে রয়েছে বাণিজ্যিক ভবন, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, বাস্কেটবল কোর্ট ও স্কেটিংয়ের জায়গা। এ ছাড়া মাঠের এক কোণে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার, গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে সব কাজ শেষ।
গোলাপবাগ মাঠ সংলগ্ন বাসিন্দা আকাশ কুমার সাহা। তিনি বলেন, উদ্বোধনের ঠিক আগ মুর্হূতে সমাবেশ করে মাঠটির ১২টা বাজিয়েছে বিএনপি। অথচ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে গোলাপবাগ মাঠ খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে ছিল। পরে স্থানীয়দের দাবির মুখে মাঠটি আধুনিকায়ন করলেও এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। একটা খেলার মাঠের সঠিক ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এরা ক্ষমতায় গেলে দেশটা দুদিনেই ধ্বংস করে ফেলবে। এই মাঠের সংস্কারের পুরো টাকাটা বিএনপির কাছ থেকে আদায় করে দ্রুত মাঠটি মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি।
[১৫ কোটি টাকায় সংস্কারকৃত মাঠে বিএনপির ধ্বংসযজ্ঞ, ক্ষমতায় গেলে দেশের কী হাল করবে!]
গোলাপবাগ মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন ধলপুরের বাসিন্দা আসাদ মোল্লা। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৯ই ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা থেকেই গোলাপবাগ মাঠে অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। ওইদিন রাতেও তারা কাঁথা-বালিশ নিয়ে মাঠেই অবস্থান করে। গতকাল সরাদিন হাজার হাজার মানুষ মাঠে গেছে। আজ (রোববার) সকালে মাঠ এলাকায় হাঁটতে গিয়ে দেখলাম, মাঠের বিভিন্ন অংশে সীমানাপ্রাচীর, গাছপালা ভেঙে রয়েছে। মাঠে ঘাস বলতে কিছুই নেই। অথচ মাঠে খেলাধুলার জন্য গোলাপবাগ, ধলপুরের মানুষ আশায় বসে আছে। বিএনপির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক।
আরও পড়ুনঃ
- এটাই কি বিএনপির “Take Back Bangladesh”!
- ইতিহাসঃ জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপিকে দুর্নীতিবাজ বলে সাব্যস্ত করেছিলেন মির্জা ফখরুল
- ষড়যন্ত্র করতেই গোপনে বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছে বিএনপি