
সফলভাবে করোনা মোকাবেলা করার কারণে বিশ্বের অপর দেশগুলোর কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে করোনা মোকাবেলা করায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে শীর্ষস্থানে এবং বিশ্বের মধ্যে ২০তম বলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। করোনার প্রতিষেধক গবেষণার সময়েই তিনি এই খাতে আগাম অর্থ দিয়েছিলেন বলে অন্য অনেক দেশের আগেই বাংলাদেশ ভ্যাক্সিন হাতে পেয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া উন্নয়নের রোলমডেল হিসবেও বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে উদাহরণ।
শক্ত অর্থনীতির কারণে এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বলা হয় বাংলাদেশকে। তবুও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে লেগেছে। যদিও উন্নত বিশ্বের দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের শীতপ্রধান দেশগুলোর মত দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে যায়নি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কগুলোর বদৌলতে বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। তাই শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী আগাম পদক্ষেপ নিয়েছেন, সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০২৩ সালে সারাবিশ্ব সঙ্কটে পড়লেও বাংলাদেশ খুব বেশি বাজে পরিস্থিতিতে পড়বে না। বরং সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আরও উদ্ভাসিত হবে।
Table of Contents
[দুর্জনের মুখে ঝামা ঘষে যেভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করছেন শেখ হাসিনা]
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে সকল সঙ্কট মোকাবেলায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে বলে মত অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাঁর কিছু পরিকল্পনা এক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। যার মধ্যে রয়েছে-
১. সরকারের কৃচ্ছতাসাধন নীতি:
অনেকদিন থেকেই সরকার কৃচ্ছতাসাধন নীতি গ্রহণ করেছে। একনেকের বৈঠকগুলোতে অনেক প্রকল্পে কাটছাঁট করা হচ্ছে। যেকোনো প্রকল্প পাস হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। নির্মাণ ব্যয় কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়গুলো তদারকি করছেন। ফলে সরকারের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রীদের সরকারি খরচে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র উল্লেখপূর্বক নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কৃচ্ছতাসাধনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।
২. আইএমএফ থেকে ঋণ:
সরকারের জন্য বড় স্বস্তির কারণ হলো আইএমএফ থেকে ঋণ প্রাপ্তি। ৪২ মাসে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা পাবে। এই ঋণ সহায়তা নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে ডলার সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠবে।
দ্বিতীয়ত, আইএমএফ-এর ঋণ পাওয়ার কারণে বাংলাদেশ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে সহজেই ঋণ পাবে। যা সঙ্কটকালীন সময়ে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রখবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ঋণ গ্রহণের অর্থ বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে- এমন কোনো কারণে নয়। দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা যায় এবং সেসব প্রকল্প থেকেই অর্জিত অর্থে ঋণ পরিশোধ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
৩. খাদ্য উৎপাদনে সুখবর:
বিশ্বব্যাপী যখন খাদ্য সঙ্কটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় আগে থেকেই বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে, সে ব্যাপারে বারবার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এতে ইতিবাচক ফলাফল মিলছে। অনেকের মাঝেই সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে যারা শহরে আছেন, তাদের অনেকেই বাসার ছাদে সীমিত পরিসরে হলেও শাক-সব্জি চাষে মনোনিবেশ করেছেন।
এছাড়া ইতিমধ্যেই আমনের ফলনে সুখবর মিলেছে। বোরোর ফলনও ভালো হবে বলে পূর্বাভাস মিলেছে। শাকসবজি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়েছে। যা দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলেও বাংলাদেশে খাদ্যের মৌলিক চাহিদাগুলো নিয়ে সঙ্কট হবে না। যা বাংলাদেশকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
[দুর্জনের মুখে ঝামা ঘষে যেভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করছেন শেখ হাসিনা]
৪. অর্থনৈতিক সংস্কার:
অর্থনীতির সংস্কারের বিষয়ে সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে, তার সাথে সমন্বয় করে আইএমএফও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে, যা বাস্তবায়ন করলে দেশের অর্থনীতি একটা সুরক্ষিত অবস্থানেই থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। অধিক রাজস্ব আদায় হবে, ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যাবে। এসব ছাড়াও অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে প্রস্তাবনাগুলোতে। যা সরকারের পরিকল্পনাতেই ছিল। সরকারও অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইএমএফ-এর প্রস্তাবনাগুলোর সাথে সরকারও একমত। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। যা আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে।
৫. পাচারকৃত টাকা উদ্ধার:
বিএনপি-জামায়াত আমলে নয় শুধু, বিগত বছরগুলোতে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে এবং নানা কৌশলে দুর্বৃত্তরা দেশের বাইরে যেসব চ্যানেলে অর্থ পাচার করেছে, সেগুলো ঠেকানো এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কয়েকটি সংস্থা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ৮টি দেশের সাথে এই ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে ইতিমধ্যে। একইসাথে এসব পাচারের সাথে জড়িত বলে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ক্রোক করার কাজও চলছে। ইতিমধ্যে অনেকের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকারের কঠোরতা এবং অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা আংশিক সফল হলেও তা অর্থনীতিতে অনেক বড় ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
সব মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশে সরকার আসন্ন সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। যা নির্বাচনের আগে সরকারের জন্য একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে দূরদর্শী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার সুনাম রয়েছে অনেকদিন ধরেই। বাংলাদেশের জন্য যে কোনো সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে মনে হলে তিনি আগাম ব্যবস্থা নেন। করোনার সময় যা দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং নানারকম পদক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলো বা ইউরোপের মতো গভীর সঙ্কটে পড়বে না বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মনে করছে।
আরও পড়ুনঃ
- পাকিস্তান, কুয়েত ও সৌদি ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছিলো বিএনপিকে: জিজ্ঞাসাবাদে বাবর – টাকা রাখার জন্য জিম্মাদার খোঁজেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া
- স্বাধীনতার ৫০ বছরে খুনি ও সন্ত্রাসীদের দল বিএনপি’র ১০০ অর্জন
- লন্ডনে তারেক জিয়া ও ভোঁতা মালেকের মাফিয়া সাম্রাজ্য এবং দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের গোমর ফাঁস