ইউরোপ

প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রেখে ইউরোপে চড়া দামে বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিস্থিতি এখন অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। সরবরাহ কম ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে নিশ্চিতভাবেই গ্যাসের চাহিদা বাড়বে। এমন অবস্থায় দাম কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুরো অর্থনীতিতে। শীত আসার আগেই মজুদ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত সফল। অনেকেই প্রায় পুরো মজুদ পুরো করে ফেলেছে।

তবে অনেক সরবরাহকারীই এখন সেই মজুদ আটকে রাখতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য সুযোগ বুঝে চড়া দামে বিক্রি করা।এমন পদক্ষেপে বাজারে বেড়ে যেতে পারে জ্বালানির দাম। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইউরোপীয় অর্থনীতি। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসন ও পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় ধুঁকছে ইউরোপের অর্থনীতি।

গ্রীষ্মে গ্যাসের দাম কম থাকে। সে সময়ই মজুদ করতে শুরু করে সবগুলো দেশ। শীতে যখন গ্যাসের চাহিদা বাড়ে, তখনই আবার এর দাম বেড়ে যায়। চলতি বছর চুক্তিগুলোর ধরন পাল্টেছে। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহারকারী দেশ জার্মানিকে গুণতে হতে পারে বাড়তি অর্থ।

আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটে ধুঁকছে ইউরোপের অর্থনীতি

চলতি গ্রীষ্মে প্রতি মেগাওয়াট-ঘণ্টার দাম উঠেছিল ৩৪০ ইউরো পর্যন্ত। আর এখন শীতে তা নেমে এসেছে ১৪০ ইউরোতে। লন্ডনের ইউরেশিয়া গ্রুপের জ্বালানি ও জলবায়ু বিষয়ক পরিচালক হেনিং গ্লোস্টিং বলেন, ‘এটাই বড় সমস্যা। লোকসান দিয়ে কেনা গ্যাস যদি কম দামে কেউ বিক্রি করতে চায় তবেই এই সমস্যার কিছুটা সমাধান সম্ভব।’ রিজার্ভগুলো যদি আটকে রাখা হয়, গ্যাসের উৎস হয়ে পড়বে একটি।

 

যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কাতার থেকে লিকুইড গ্যাস আমদানি করতে হবে। নাহয় নরওয়ে কিংবা উত্তর আফ্রিকা থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানি করতে হবে ইউরোপীয় দেশগুলোকে। কিন্তু এই মহাদেশের দেশগুলো ইতোমধ্যে তাদের ওপর নির্ভরশীল। আবার তাদের ওপর চাপ পড়লে দাম বেড়ে যাওয়া শঙ্কা রয়েছে। জ্বালানির দাম এখনই সহ্য সীমার চূড়ান্তে পৌঁছে গেছে।

এনার্জি অ্যাসপেক্টস এর বিশ্লেষক লিওন ইজবিকি বলেন, ‘লাভ বাড়ানোর জন্য কোম্পানিগুলো প্রতিদিনের ভিত্তিতে গ্যাস কিনতে পারে। একবারে মজুদে হয়তো হাত দেবে না।’

ইউরোপের গ্যাস রিজার্ভে শত কোটি ইউরো খরচ হচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য দ্রুত এগুলো বিক্রি করে দেওয়া। তারপরও দামের পার্থক্যে লস গুণতে হতে পারে তাদের। দীর্ঘমেয়াদী তারা রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল। গত শীতেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০ শতাংশ চাহিদা ছিল দেশটিতে।

জার্মানির দুঃখ

ব্লুমবার্গের তথ্য মতে, ইউরোপ তার মজুদ বাড়িয়েছে। যদিও এখনো ১০ শতাংশ গ্যাস সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সহায়তায় গ্রীষ্মকালের জন্য কিছু জ্বালানি কেনা হয়েছিল।

জ্বালানি সংরক্ষণের জন্য জার্মানির গ্যাসের বাজার পর্যবেক্ষণকারী কোম্পানি ট্রেডিং হাব ইউরোপকে সরকার ১৫০০ কোটি ডলার দেন। কোম্পানিটি ৬০ টেরাওয়াট (ঘণ্টা) গ্যাস কিনেন যা দেশটির সঞ্চয় ক্ষমতার ২৫ শতাংশের সমান।

তবে সরবরাহ ঝুঁকি এড়াতে জার্মানি সরকার জরুরি অবস্থায় সাহায্য চাইতে পারবে। এ রকম পরিস্থিতিতে জার্মানিসহ অন্যান্য দেশ রিজার্ভকৃত গ্যাস সরবরাহের আদেশ দিতে পারবে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী এবং যুগান্তকারী যে সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক এই ক্রাইসিস মোমেন্টে পথ দেখাচ্ছে

ইতোমধ্যে গ্যাস সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে জার্মানি। নভেম্বরের ১ তারিখে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ টার্গেট পূরণ হয়েছে তারা। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ৪০ শতাংশ করা পূরণ করছে।

ঝড়ের পূর্বের নিস্তব্ধতা

অক্টোবর মাস উষ্ণ হওয়ায় বেঞ্চমার্ক আগস্টের তুলনায় ৭০ শতাংশ মূল্য কমে গেছে। তবে এদিকে এলএনজি গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহও আছে। তবে ইউরোপকে অস্থায়ী সরবরাহের মুখোমুখি হতে পারে। এলএনজি কার্গো জেতার জন্য মহাদেশটিকে এশিয়ার তুলনায় দাম বেশি রাখতে হবে।

[জ্বালানী সংকটে ধুঁকছে ইউরোপ, দুর্যোগের দ্বারপ্রান্তে]

সকল ইন্ডাস্ট্রি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, গ্যাসের দাম আবার কখন বাড়বে এটা এখন সবার প্রশ্ন। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি তাপমাত্রা কমে যাবে। এনইএফের বিশেষজ্ঞ স্টিফেন উলরিচ বলেন, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে এলএনজি গ্যাসের চাহিদা কমছে।

পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় গ্যাস কেনার জন্য সরকারি সহায়তা নেওয়া উচ্চমূল্যে সংরক্ষণ করা গ্যাসের চেয়েও কম ক্ষতিকর। কেনার জন্য, উচ্চ মূল্যের পয়েন্টে তাদের সংরক্ষণ করা কিছু গ্যাসের ক্ষতি স্বীকার করার চেয়ে এটি আরও খারাপ বলে মনে হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: