বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং  স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশজুড়ে উৎসব চলছিল। এই সুবর্ণ সময়টি আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপনের জন্য সরকার ছিল কিছুটা ব্যস্ত।  ১০ দিনব্যাপী এই উৎসবে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা আসছিলেন বাংলাদেশে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২৬ মার্চ ঢাকায় আসেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগমনকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা করে একটা চক্র। বিক্ষোভ ও হরতালের ডাক দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও যুব অধিকার পরিষদ এবং কট্টর ইসলামি সংগঠন হেফাজত ইসলাম।

২৫ মার্চ, রাজধানীর শাপলাচত্বরে মোদীবিরোধী মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালায় যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। দেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার দায়ে, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে আটক হন যুব জমিয়তের নেতা ও ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী। বিএনপি-জামায়াতের জোটের শরিক দল জমিয়তের এই নেতাকে পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়েও দেয় পুলিশ। কিন্তু তাদের হামলায় সেদিন আহত হয় বেশকয়েকজন পুলিশসদস্য। কিন্তু পরিস্থিতি যাতে শান্ত না হয়, সেজন্য উগ্র বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন হেফাজত নেতারা। তাদের আহ্বানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ইসলাম রক্ষার জন্য জেহাদি ডাক দিয়ে, কওমি মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের রাস্তায় নামিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে হেফাজতের কয়েকজন নেতা। মূলত ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, মাদ্রাসাছাত্র ও হেফাজত কর্মীদের উত্তেজিত করে, আদিম কায়দায় সীমাহীন ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে এই চক্রটি। থানা-হাসপাতাল-সরকারি অফিস, এমনকি রাষ্ট্রীয় গ্যাসফিল্ড পর্যন্ত রক্ষা পায়নি এদের নাশকতা থেকে। কেউ প্রতিবাদ করলে, তাদের বাড়িঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে এরা। মেরে রক্তাক্ত করেছে শিশু থেকে বৃদ্ধা, সবাইকে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা ও আগুনসন্ত্রাস চালায়; ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অপচেষ্টা করে এই দেশবিরোধী ও মানবতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, ইসলামের হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ছদ্মবেশে মাঠে নামে রাজাকারদের বংশধররা। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে দেশকে অস্থির প্রচেষ্টা করছে এরা। সম্প্রতি এদের সমর্থনে যোগ দেয় আদর্শচ্যুত হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া বামজোটের কয়েকজন নেতা। মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও বামদের এই বিচ্যুত অংশটি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পর্যন্ত কটুক্তি করেছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়, এবং এই অপশক্তিদের পরাজয় ঘটে। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে বেছে নিয়েছে এরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের মাধ্যমে এদের সাম্প্রতিক মানবতাবিরোধী অপকর্মগুলোর অল্প কিছু নমুনা তুলে ধরা হচ্ছে নিচে…
রেফারেন্স লিংক: https://bit.ly/3mSKrub

এছাড়াও ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতের শোক ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব না করে, মোদীবিরোধী মিছিল করে উগ্র-বামজোট। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০-বছর পালনের উৎসবকে ম্লান করে দিতেই স্বাধীনতাবিরোধী-রাজাকার-চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে এই কাজ করে তারা।
ভিডিও লিংক: http://qwa.la/k7p9m8

২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস। দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের মোনাজাত শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হট্টগোল শুরু করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। মানুষকে বিভ্রান্ত করে দাঙ্গা সৃষ্টির লক্ষ্যে ধর্মীয় পোশাক পরে মোদীবিরোধী স্লোগানসহ মিছিল করার চেষ্টা করে। এসময় বাধা দিলে মসজিদ প্রাঙ্গনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠি নিয়ে আক্রমণ করে এই ধর্মব্যবসায়ীরা।
রেফারেন্স লিংক: http://qwa.la/m2x9y4
http://qwa.la/a6f6r2 

ভিডিও লিংক:
https://bit.ly/3x3aIKU
https://bit.ly/2OXrIkD

এরপরও ক্ষ্যান্ত হয়নি এই উগ্রবাদীরা। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে রাজধানীসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষের বাড়িঘরে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও হাটহাজারিতে হামলা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এই হামলার দৃশ্য নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। দেখা গেছে, হামলাকারীদের বেশ কয়েকজন জামায়াত-শিবিরের পদধারী নেতা। ফলে স্পষ্টই প্রমাণ হয়ে পড়ে যে, সামনে হেফাজত ও পেছনে জামায়াত, উভয়ে মিলেমিশে মোদীবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী নাশকতায় লিপ্ত ছিল।

২৮ মার্চ, হরতালের নামে সারাদেশে তাণ্ডব চালায় ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে অভ্যস্ত হেফাজতে ইসলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, হাটহাজারি, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী ও সিলেটে হরতালের সময় রাম দাঁ, ঢাল, তলোয়ার, ছুড়ি, লাঠি নিয়ে নাশকতা চালায় তারা। কিছু কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে হেফাজত নেতাকর্মীরা ভেঙে ফেলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ভাংচুর চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। জ্বালিয়ে দেয় রেললাইন, ভূমি অফিস, সরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ নেতার পেট্রোল পাম্প, ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি।
রেফারেন্স লিংক:
https://bit.ly/3e5wpBk
https://bit.ly/3szQtRL

ভিডিও লিংক:
https://bit.ly/3tsMdVk
https://bit.ly/3dnKyuC
https://bit.ly/3e98lxl
https://bit.ly/2Rxio7N
https://bit.ly/2QBcXEg
https://bit.ly/2OXrIkD

এদিকে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি করে, রাজাকারপুত্র ও হেফাজতের ইসলামের উগ্রবাদী নেতা মামুনুল হক গোপন প্রেমিকাকে নিয়ে সময় কাটাতে যায় নারায়ণগঞ্জের ব্যয়বহুল রিসোর্টে। হেফাজতে ইসলামের এই কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক এসময় স্থানীয় জনতার কাছে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে।

এসময় আল্লাহকে নিয়ে কসম কেটে মিথ্যা কথা বলে সে। সঙ্গে থাকা বোরখা পরিহিত নারীকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। রিসোর্টের লগবুকেও সে ওই নারীর নাম লেখেনি, ওই নারীর নাম বদলে সেখানেও লিখেছিল নিজের আসল স্ত্রীর নাম (আমিনা তৈয়বা)। কিন্ত পরে তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথাকথিত মাওলানা ও ভণ্ড ধর্মগুরু মামুনুল হক দাবি করে যে, সঙ্গে থাকা নারীটির নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী।

এরপর নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের কর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা হামলা চালিয়ে ওই রিসোর্ট গুড়িয়ে দেয় এবং মামুনুলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে এর পরপরই সঙ্গে থাকা নারী ও নিজের আসল স্ত্রীর সাথে পৃথকভাবে ফোনে কথা বলে মামুনুল। সেসব ফোনালাপ ফাঁস হয়ে পড়ে। সেখান থেকে জানা যায়, সঙ্গে করে রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া ওই নারী (জান্নাত আরা ঝর্ণা) আসলে তার দলীয় কর্মী শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

ফেসবুকে এসব নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ওই নারীর ছেলে দাবি করেন, তাদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার মাকে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন মামুনুল। মামুনুলের রিসোর্টসঙ্গী ওই নারীর গত তিন বছরের তিনটি ব্যক্তিগত ডায়েরির লেখাও প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সেখানেও ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই নারী (জান্নাত আরা ঝর্ণা) বারবার লিখেছে যে, ধর্মগুরু পরিচয়ের ছদ্মবেশে মামুনুল আসলে একজন অমানুষ। সে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তার শরীরটা কিনে নিয়েছে। রেফারেন্স লিংক: http://qwa.la/n9f4m2 & https://bit.ly/3wYilSZ

ভিডিও লিংক:
https://bit.ly/3v0kega
https://bit.ly/32p7rr2
https://bit.ly/3aiFjdK
https://bit.ly/3dmJ6bL
https://bit.ly/3x3b980

যাইহোক, কোনো কারণ ছাড়াই শুধু ইসলামকে হেফাজতের ধোয়া তুলে এই চক্রটি এর আগেও দুয়েকবার নাশকতা চালিয়েছে দেশজুড়ে।এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরবিরোধী আন্দোলন করে ১৭ জনের প্রাণহানির পরও, তাদের ঔদ্ধত্য কমেনি। দেশকে অস্থির করে দিয়ে, রিসোর্টে গিয়ে নারী নিয়ে উদ্দাম ফুর্তি করতে পারে এই তথাকথিত ধর্মগুরু ও হেফাজত নেতা। কতোটা বিকৃত ও পাশবিক চিত্তের মানুষ হলে এসব করা সম্ভব!

আবার নিজের কুকর্ম ঢাকার জন্যে অবলীলায় শত শত হেফাজত কর্মীকে নিয়ে এলাকায় ভাংচুর চালিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল এই ধম্যব্যবসায়ী, ভণ্ডপীর ও রাজাকারপুত্র মামুনুল।    

রেফারেন্স লিংক: https://bit.ly/2OX0Wc5