
দীর্ঘ ১৯ বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা। নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ২৮৩ জন সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ বলে দাবি করা ৩ নেতাকে রাখা হয়েছেন সহ-সভাপতি পদে। শুক্রবার (২৮শে অক্টোবর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে শাখা ছাত্রদলের তিন ‘নিখোঁজ’ দাবিকৃত কর্মী- আসাদুজ্জামান রানা, মাজাহারুল ইসলাম রাসেল ও আল-আমিনকে। তারা বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দলের লোকজনের দাবি। নিখোঁজ হলেও বড় অদ্ভূত কারণে তাদের নাম উঠল কমিটির তালিকায়।
আরও পড়ুন: গুম হওয়া বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে
নিখোঁজ তিন জনকে কমিটিতে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলামের এক অদ্ভূত দাবি, তারা বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার হয়েছেন। যেহেতু তারা আমাদের পার্টির সদস্য, তাই তাদের সম্মানজনক সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে।
চলতি বছর ১লা জুলাই আসাদুজ্জামান আসলামকে সভাপতি ও সুজন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ বছর পর জবি ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর ৩ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো। নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৫৫, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৬৭, সহ-সাধারণ সম্পাদক ৫৬ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১ জন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ৫৭ জন, সম্পাদকীয় পদে ২৭ ও সদস্য পদে ১৮ জন স্থান পেয়েছেন।
যেহেতু জবিতে ছাত্রদলের যথেষ্ট নেতা-কর্মী রয়েছে, তবুও নিখোঁজদের নাম তালিকায় যুক্ত করার পক্ষে আসলামের দাবিকে হাস্যকর বলে মনে করছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, টাকার বিনিময়ে এই কমিটি করা হয়েছে। স্তর ভেদে ন্যূনতম ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জায়গা পেতে। এছাড়া যুগ্ম ও সহা-সাধারণ সম্পাদক পদে ৭-৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানান তারা। তবে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে ১০-১৫ লাখ টাকার পাশাপাশি দিতে হয়েছে অনেক কিছুই, এমনটা জানান পদবঞ্চিতরা।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের কাঠগড়ায় স্বৈরশাসক জিয়ার গুম ও হত্যার রাজনীতির উপাখ্যান
রওনক হাসান নামের ছাত্রদলের একজন ত্যাগী নেতা সরাসরি বলেন, যাদেরকে নিখোঁজ বা গুম বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা কেউই নিখোঁজ নন। তারা লন্ডনের নির্দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় বড় মামলা আছে বলে জানি। নির্বাচনের আগে তারা বেরিয়ে আসতে পারে। দলে তাদের পদ ধরে রাখা হয়েছে বিশেষ নির্দেশে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা সবই জানেন। আমাদের মত যারা ঢাকা শহরে পড়তে এসেছি, বিএনপির রাজনীতিকে ভালোবেসে শ্রম দিচ্ছি, কোনো প্রাপ্তির আশা ছাড়াই দলের জন্য খেটে মরছি, নেতাদের কথায় আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদেরকে উজাড় করে দিচ্ছি। তারা এভাবে বঞ্চিত হচ্ছি টাকার কাছে।
[বিএনপির গুম তালিকায় থাকা নেতাদের নাম কমিটিতে! তবে কি তাদের সন্ধান জানে দল? ]
রওনক জানান, তার মতো এমন অনেকেই আছেন, যারা ক্রমাগত অর্থের কাছে পরাজিত হচ্ছেন। রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে বিসিএস-এর জন্য চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
- বাংলাদেশে গুম, খুন ও মানবাধিকার : তালিকাভুক্তরা কে, কোথায়
- ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে খালেদার গুম নাটক ফাঁস!
- গুম ছাত্রদল কর্মীর হদিস ১২ বছর পর