
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ডক্টর কামাল হোসেন এবং তার মেয়ে কর ফাঁকির মামলা নিয়ে নতুন করে হোঁচট খেতে যাচ্ছে। সম্প্রতি তাদের বিদেশে আইনি সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হওয়া আয় নিয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, বিদেশে কাজ করে পাওয়া এ সকল আয় দেখানো হয়নি তার আয়কর রিটার্ন প্রতিবেদন বা হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে।
ড. কামাল তার জীবনবৃত্তান্তে যেই তথ্য প্রদান করেছেন এবং তার ২০১৯ সালে লাভ করা আন্তর্জাতিক সালিশ বিষয়ক অ্যাওয়ার্ডের তথ্য থেকে এই অপ্রকাশিত আয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা দখলের জন্য বেপরোয়া ড. কামাল, চার স্তরের আগ্রাসী পরিকল্পনা
২০১৮/১৯ সালে আয়কর রিটার্নে কম আয় প্রদর্শন করে ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ করা হয় ড. কামাল ও তার মেয়ের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে চলমান যার পরবর্তী শুনানি হবে ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু এরই মধ্যে ড. কামালের ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৮ মার্কিন ডলার আয়ের তথ্য নতুন করে পাওয়া গেছে যেই আয়ের বিষয়ে তার আয়কর রিটার্ন পেপার বা হাইকোর্ট নথিতে কিছুই বলা নেই।
ইউনাইটেড রিপাবলিক অব তানজানিয়া এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (হংকং) এর মধ্যকার আইনি সমস্যা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে দেন ড. কামাল সহ আরও দুই আইনজীবীর সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল। সেখান থেকেই এই আয় করেন তিনি।
এ ছাড়াও ড. কামাল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মধ্যকার দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল, মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের সমুদ্রসীমা এবং গায়ানা ও সুরিনামের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের বিষয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তার নিজের জীবন বৃত্তান্তে এমন অন্তত আঠারোটি মামলার তালিকা রয়েছে, যার জন্য তিনি নিশ্চয়ই বেশ ভালো আয় করেছেন।
তার বিরুদ্ধে তদন্তের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো এই আয়গুলো তিনি তার আয়কর প্রতিবেদনে দাখিল করিয়েছে কিনা এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক তদন্তে দেখা যায়, ড. কামাল তার আইনি সেবা প্রতিষ্ঠানের ৬ কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই ‘ল ফার্মে’ তিনি ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং তার মেয়ে ২০ শতাংশের।
আরও পড়ুন: গনফোরামের কামাল হতে যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন
২০২২ সালের ছুটির তালিকা ৬২৭০ নং রিট পিটিশন অনুসারে, ড. কামাল আইনি সহায়তা প্রদান করে দেশের বাহির থেকে তার আয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনকে ‘ভুল পথে পরিচালিত করার’ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই হাইকোর্টেই তিনি সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে কর্মরত।
নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে ড. কামাল ও তার মেয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ থেকে একটি রায় গ্রহণ করেন যেখানে সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, ‘কেন তাদের ফার্মের বিরুদ্ধে আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে না।’
আরও পড়ুন: ফুলবাড়ি ট্র্যাজেডি ও একজন দালাল ড.কামাল হোসেন
ট্রাইব্যুনালের মামলার মূল বিষয় ছিলো, ২০১৮/১৯ অর্থ বছরে এনবিআর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে এই ল ফার্মের দুইটি অ্যাকাউন্টে অনিয়ম খুঁজে পায় যার নম্বর ০১-১৮২৫৪৪৫-০৩ এবং ০১-১৮২৫৪৪৫-০৪। এই অ্যাকাউন্ট দুটি পরিচালনা করেন ড. কামাল হোসেন এবং তার মেয়ে।
[ডঃ কামালের কর ফাঁকিঃ এ যেন কেঁচো খুঁড়তে অজগর সাপ!]
কিন্তু হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যেই রায় দিয়েছে তা এই ল ফার্মের আয় গোপনের অভিযোগে বিচারাধীন ট্রাইব্যুনালের মামলার ওপর স্থিতি আদেশ জারি করেছে। এর মাধ্যমে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ এমন এক উদাহরণ স্থাপন করেছে যেখানে আয় গোপন করার জন্য কর ট্রাইব্যুনালের কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে হাইকোর্ট। যারা আসলেই কর ফাঁকি দিয়েছে এমন মানুষদের পক্ষে এ রায় প্রদান করা হয়েছে।
দেশের অন্যান্য নাগরিক এবং ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া মানুষের ক্ষেত্রে এমন হাস্যকর ভাবে ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি কখনও। বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তুলছে দেশের সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, এ ধরণের কার্যক্রম কামালের মত ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া লোকদের বাড়তি সুবিধা দেবে, যা অনুসরণ করবে আরও অনেকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ।
আরও পড়ুন:
- বাৎসরিক ২০ গুন কম আয় কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে সুশীল সমাজের প্রিয় মুখ ড.কামাল
- রহস্যময় বৈপরীত্য: উগ্রবাদীদের সঙ্গে ড. কামাল, সমকামীদের সঙ্গে তার মেয়ে
- মানবাধিকার যেখানে যেমন !