গ্রামীণ-ড. ইউনূস

সম্প্রতি ইকোনোমিস্টের এক প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে যে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার নিপীড়ন চালাচ্ছে। আরো বলা হয় যে তিনি যখন ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তখন বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় উদযাপন করেছিল। ড. ইউনূস ৮০’র দশকে দরিদ্রদের জন্য উচ্চ-সুদে “মাইক্রো-লোন” এর মডেল আনেন, যা সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছিল।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু কেন ?

ক্ষুদ্রঋণ এ দেশে নতুন নয়, অনেক আগে থেকেই চলমান। যদিও এই ঋণের প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বব্যাপী মহানায়ক হিসেবে চিহ্নিত অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুস। তবে গবেষকরা বলেন, পাবনা – নাটোর এলাকার ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে এ ধরনের ঋণের সূচনা খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছিলেন অনেক আগেই।

খুব সংক্ষেপে বললে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন দাতা এবং মিশনারী সংস্থার সহায়তায় বে-সরকারি পর্যায়ে দেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের মাঝে চাহিদা মোতাবেক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সত্তর দশকে বিভিন্ন জায়গাতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে কিছু এনজিও। আশির দশকে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতা লক্ষ্য করা যায়।কিন্তু নব্বই দশক এবং পরবর্তীতে এটি এক ধরনের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।

দু’একটি ঘটনা বাদ দিলে ক্ষুদ্রঋণ পুরোদস্তুর ব্যবসা, এছাড়া আর কিছুই নয়। এই ব্যবসা থেকে ভালো মুনাফা আসে। আর দরিদ্ররা হলো এই মুনাফার মূল যোগান দাতা। এই ব্যবসায় এনজিওদের জন্যে কোনো ঝুঁকি নেই। ঝুঁকির সবটুকুই গ্রহীতার জন্যে। অনেকে বলছেন ঋণের কিস্তি শোধ করতে করতে তাদের জীবন অতিষ্ঠ। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে ঘরের চালের টিন খুলে নিয়ে যাওয়ারও বহু দৃষ্টান্ত আছে। আবার কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণের দায় মেটাতে নিজের কিডনি বিক্রির মত চরম পথও বেছে নিয়েছেন অনেকে।

ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের নামে যে উচ্চহারে সুদ আদায় করছে, তা মহাজনদেরকেও হার মানায়। আর্থসামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ কেমন অবদান রাখছে? ঋণ গ্রহীতাদের বেশির ভাগই মনে করেন এক্ষেএে ক্ষুদ্রঋণ তেমন অবদান রাখছে না। ঋণ গ্রহণের পরও অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ অবস্থানে রয়েছেন তাদের কেউ কেউ। এনজিওদের প্রচলিত ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে জমজমাট ব্যবসা দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যর্থ হয়েছে।

স্বামীর কাছ থেকে কিস্তি নিয়ে এনজিওতে প্রদান করতে না পারার কারণে অনেক মহিলা সদস্য আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। দরিদ্র মানুষদের সংগঠিত করে ঋণ দিয়ে তার কিস্তি আদায়ের জন্য তাদের বাড়িঘর সহায় সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করার ন্যায় হৃদয় বিদারক ঘটনারও ঘটেছে। অনেক সদস্যের পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যায়। ফলস্বরূপ এদের ছেলে মেয়েরা যাযাবরের মত বড় হতে থাকে এবং অনেকেই পরবর্তীতে সন্ত্রাসী অথবা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ঋণের বিপরীতে অধিক হারে সুদ আদায়ের ফলে গ্রামের গরিব মানুষগুলো নানা রকম ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : 

ইকোনোমিস্টে দাবী করা হয় যে, এই মাসে মুহাম্মাদ ইউনূসকে তার ব্যবসা সম্পর্কে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে হাজির করা হবে। তার সহযোগীদের তালিকা করা হচ্ছে এবং তিনি যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেই ঝুঁকিও রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে এক দশকব্যাপী প্রচারণা চালাচ্ছেন। শেখ হাসিনা “গরিবের রক্তচোষা” হিসাবে অভিযুক্ত করে ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণদানের ব্যবসার পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত অর্থায়নের তদন্ত শুরু করেন।

আসলেই কি তাই ?

dপত্র-পত্রিকার কল্যাণে সবাই জানেন, দেশের প্রতিটি দুর্যোগ বা ক্রাইসিস মোমেন্টে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ শোনেনি, দেশের কোনো দুর্যোগে ড. ইউনূস জনগণের পাশে ছিলেন কি না! অথচ সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’কে তিনি ২০১১ সালে ১৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছেন

আরও পড়ুন : EXCLUSIVE: Disgraced Clinton Donor Got $13M In State Dept Grants Under Hillary

গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। যাদের জন্য বাংলাদেশের নিয়মনীতি, আইন-কানুন অন্যদের মতোই প্রযোজ্য। নিজেদের খেয়াল খুশিমতো চাইলেই তারা চলতে পারবেনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি দেশের সব ব্যাংকের মতো তারাও মানতে বাধ্য।  তারা জনগণের টাকা ইচ্ছেমত নিজেদের কাছে গচ্ছিত রাখবে কিন্তু পরিচালিত হবে নিজেদের বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী এটা হতে পারেনা।

দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিলো এক নোটিশেই ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম। পাওনা চেয়ে মামলা করায় এমনটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা।

গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা জানান, কোনো নোটিশ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএ’র সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়েছে।

বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে বকেয়া পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান কর্মীরা। ঢাকার শ্রম আদালতে সবমিলে ১০৭টি মামলা করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৪ কর্মী আরও ১৪টি মামলা করেন পাওনা টাকার জন্য।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ার আছে গ্রামীণ টেলিকমের।

প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কর্মীদের মাঝে বণ্টন করে দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের মুনাফা হয়েছে ৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ নিট মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীদের, প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ তহবিল ও সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও ৮০ঃ১০ঃ১০ অনুপাতে পরিশোধ করার বিধান থাকলেও তা পরিশোধ করা হয়নি।

সেইসঙ্গে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও শ্রম অধিদফতরের কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর থেকে সরকারের পাওনা টাকা চেয়ে বারবার চিঠি দিয়ে তাগাদা দিলেও কোনো কর্ণপাত করেনি গ্রামীণ টেলিকম। উল্টো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ জন কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়।

এছাড়া গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি।

e

শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন : গ্রামীণ টেলিকম অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে শ্রমিক ইউনিয়ন

এখানে শেখ হাসিনার ভূমিকা কোথায়? রাষ্ট্রীয় সংগঠন হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।এটা তাদের দায়িত্ব।

এরপর সেই মামলা থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকদের ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ‘সমঝোতা’করেন ড. ইউনূস। শ্রমিকদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানান ৪০০ কোটি টাকা পাওয়ায় গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শ্রমিকেরা। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।

আদেশে আদালত বলে, ‘বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, উভয়পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আদালতের বাইরে সমস্যাটি সমাধান করে ফেলেছে। এ অবস্থায় এটি মামলা হিসেবে ধরে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সুতরাং মামলাটি ডিসমিস করা হলো।

আরও পড়ুন : শ্রমিকদের ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ড. ইউনূসের ‘সমঝোতা’

ইকোনোমিস্টে আরো দাবী করা হয় যে, শেখ হাসিনা ইউনূসকে গ্রামীণ থেকে অপসারণ করেছিলেন এবং তিন বছর পরে সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করার পর বিশ্বব্যাংক ১.২ বিলিয়ন ডলার প্রত্যাহার করে নেয়, বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির উল্লেখ করে। প্রধানমন্ত্রী পরে দাবি করেন যে গ্রামীণ থেকে তার অপসারণের বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনূস বিশ্বব্যাংককে প্রজেক্ট থেকে প্রত্যাহার করার জন্য আমেরিকাকে লবিং করেছিলেন।পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর সরকার ঘোষণা দেয়, বিশ্বব্যাংক কেন প্রকল্প থেকে সরে এসেছে তা তদন্ত করবে । এরপর থেকে সরকার ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে।

প্রশ্ন হলো সরকার কেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূসকে অপসারণ করলো এবং পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূসের ভূমিকাই বা কি?

দেশের প্রচলিত আইনের মধ্যেই দেশীয় প্রতিষ্ঠান চলবে। ব্যাংকের এমডি থাকতে ৬০ বছর বয়সসীমার নিয়মনীতি নাকি গ্রামীণের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, তাদের পরিচালকরা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. ইউনূসই বারবার এমডি থাকিবেন। গ্রামীণ ব্যাংক চালানোর জন্য নাকি আর কোনো যোগ্য লোক নাই! আইনি লড়াই করেও হারলেন ইউনূস।

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করা হলে তিনি আদালত পর্যন্ত যান। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট সব আদালতে তিনি হেরেছেন। সরকারি ব্যাংক সংক্রান্ত আইনেই আছে এমডির বয়স ৬০ বছরে বেশি হবেনা। ড. ইউনূসের বয়স তখন ৭০-এর বেশি। এরপরও তিনি বন্ধু হিলারি ক্লিনটনসহ অনেককে দিয়ে চেষ্টা করেন

আরও পড়ুন : Hillary Clinton Email Archive

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক ৷ ব্যাংক আইনের ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ড. ইউনুসকে অপসারণের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সূত্রমতে, ওই সাক্ষাতকালে তিনি তাকে স্বেচ্ছায় গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে দিতে বলেন। এরপরও ড. ইউনূস সময়ক্ষেপন করায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

এপ্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। তখন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডির পদে সে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, আসলে আইনগতভাবে সে থাকতে পারে না। আমরা বলেছিলাম, আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হোন। অ্যাডভাইজার ইমেরিটাস হিসেবে একটা মর্যাদা দিয়ে তাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সেই এমডি পদটা ছাড়তে  চাননি।

শুরু থেকেই অনেক উচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে পদ্মা সেতু তৈরির বিরোধিতা করে গেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেল বিজয়ী হওয়ায় নিজের ইমেজ ব্যবহার করেছেন তিনি । পদ্মা সেতু প্রকল্পে যখন বিশ্বব্যাংক কোনো অর্থ ছাড় করেনি, সেই সময় থেকেই দুর্নীতির এক আজগুবি অভিযোগ তোলা হয়। অর্থ ছাড় না হলে কীভাবে সেখানে আর্থিক দুর্নীতি হয়- সেটা পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করবে?

এদিকে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। একে একে উদ্ঘাটিত হবে অনেক ষড়যন্ত্রের খবর। উন্মোচিত হবে অনেকের মুখোশ।

ড. ইউনূসকে সুযোগ দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অথচ গ্রামীণ ব্যাংক চালাতে পারে না। ১৯৯৮ সালে যখন ভয়াবহ বন্যা, সে সময় এই ব্যাংকে প্রথমে একশ কোটি, তারপর দুইশ কোটি, তারপর চারশ কোটি টাকা আমি গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়েছিলাম। ব্যাংকটা যেন চালু থাকে। কারণ গরিব মানুষের সেবা, গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে। কিন্তু গরিবের কাছ থেকে প্রায় ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত সে ইন্টারেস্ট নিতো—এটি হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’

[ডঃ ইউনূস এর কর ফাঁকি ও গ্রামীণের কর্মচারীদের দায়ের করা মামলা নিয়ে ইকোনমিস্ট এর মিডিয়া ট্রায়ালের অপচেষ্টা]

দ্বিতীয় দফায় আবারও সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয় ছিল যখন আমি ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে আসলাম সমস্ত টেলিকমিউনিকেশনে, আগে সব এনালগ ছিল এবং মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়ে দিলাম প্রাইভেট সেক্টরে, তাকেও একটা ব্যবসা দেওয়া হলো। আরও যে দুটো দিয়েছিলাম তাদের বেশি সুযোগ দেইনি। গ্রামীণ ফোনের জন্য রেলওয়ে ফাইবার অপটিক্স ব্যবহারের সুযোগ আমরা দিয়েছিলাম। ১০০ কোটি টাকার একটা ডিপোজিট দিতে সেটা থেকে তাকে মওকুফ করেছিলাম। তাকে অন্যান্য সুবিধা দিয়েছিলাম। সব ধরনের সুবিধা তাকে এত বেশি দেওয়া হয়েছিল।

gকিন্তু সেই লোকই এমডি পদে থাকতে পারবে না। অথচ এটা আইনগত ব্যাপার। এটা জানার পরও সে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর থেকে শুরু করে সরকারের সকলকে আসামি করে দুইটা মামলা করে। কিন্তু প্রত্যেকটা মামলা হেরে যায়। হেরে গিয়ে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন : ‘সবচেয়ে বেশি সুযোগ দিয়েছিলাম ইউনূসকে, সেই বেইমানি করলো’

নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ দেশ গঠনে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে বা রেখে যাচ্ছে আশা করি আপনারা তা বুঝতে পেরেছেন। সরকারের উপর দোষ চাপালেই আসলে বেঁচে যাওয়া যায় এপথ এখন বন্ধ! কারন দেশের মানুষ এখন সত্যটা জানে। এখনো সময় আছে আপনি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন, তা নাহলে ইতিহাসে আপনি রক্তচোষা দেশদ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন।

আরও পড়ুন :