ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত সরব এবং ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে থাকা এক রাজাকার পুত্র। তালিকার ৭১০ নং-এ থাকা রুহুল আমিন ওরফে চখা রাজাকারের এই গুণধর পুত্র প্রায়শ বক্তব্যে ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে অমুক অর্জন করেছিলাম’ ধরনের কথা বলেন। তিনি এবং তার পরিবার যে পাকিস্থানের পক্ষে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জনরোষের ভয়ে ভারতে পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন, সে তথ্য আজকালকার তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না। রাজাকারপুত্র ফখরুল ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে জঘন্য মিথ্যাচার এবং তথ্যবিকৃতি ঘটান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিতে ছাড়েন না তিনি।

যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করা এই মির্জা ফখরুল তার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার মৃত্যুর কয়েকমাস পর বিএনপির সেই আমলকে দুর্নীতিগ্রস্ত সময় বলে উল্লেখ করেন। জিয়াকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দেন। জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে যে ভাষণ দেন, সেখানে বিএনপি এবং জিয়াকে দুর্নীতিবাজ বলে উল্লেখ করা হয়। সেই ভাষণটি লিখে দিয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তারের প্রধান সহকারী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ তিনি লম্বা লম্বা লেকচার দেন। জিয়ার মৃত্যুর দেরি, ডিগবাজি দিতে দেরি করেননি ফখরুল।

রাজাকারপুত্র মির্জা ফখরুল গত ২৯শে সেপ্টেম্বর তারিখে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছেন। সেখানে লাইনে লাইনে মিথ্যাচারের পসরা সাজিয়েছেন, তথ্যসন্ত্রাস করেছেন। সেই লেখাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হলো এখানে।

ফখরুল লিখেছেন: সমকাল ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যৌক্তিক ও মৌলিক পরিবর্তন দরকার’ বিষয়ে লিখতে বলেছে। লেখালেখির অভ্যাস আজকাল নেই। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সব সুকুমারবৃত্তির মৃত্যু হয়েছে। আমি দার্শনিক নই, লেখকও নই। মাঠে কাজ করা রাজনৈতিক কর্মী। এটুকু বুঝি, দেশের মৌলিক পরিবর্তনে যুক্তিনির্ভর সংবিধান প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে লন্ডনে গোপনে চিঠি পাঠালো বিএনপির একাংশ

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: বাকপটু মির্জা ফখরুল রাস্তায়, সভায় চট করে যে কোনো কিছু আউড়ে যেতে পারেন, মিথ্যাচার করতে পারেন। কেউ তাকে এ নিয়ে প্রশ্নও করবে না। কারণ রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে সবাই তা হালকাভাবেই নিবে। কিন্তু রাজনৈতিক কলাম লিখতে হলে তো তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনা প্রয়োজন। সেখানে মিথ্যাচার করলে তা নথি হিসেবে স্থায়ীভাবে রয়ে যাবে। তাছাড়া দলীয় প্রধান দুই ব্যক্তির পক্ষে চাটুকারিতা ছাড়া তার সেই যোগ্যতাটাও নেই। এই কলামে অসংখ্য মিথ্যাচার করেছেন তিনি, যা ক্রমে উঠে আসবে।

মির্জা ফখরুলের আজ সংবিধানের প্রতি মমত্ববোধ জেগে উঠেছে। অথচ তার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে লুণ্ঠন এবং ধর্ষণ করে ছেড়েছিলেন। জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা খুনিদের সুরক্ষায় এবং বিচার বন্ধ করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনের রূপান্তর করে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একইভাবে সারাদেশের মানুষের ধিক্কার এবং জনদাবি উপেক্ষা করে সেই অধ্যাদেশ বলবৎ রেখেছিলে, খুনিদেরকে সংসদে ঠাঁই দিয়েছিলেন। সেই বিএনপির মহাসচিবের আজ সংবিধানের প্রতি মায়া দেখলে মাছের মায়ের পুত্রশোকের কথা মনে পড়ে যায়।

ফখরুল লিখেছেন: সকলের অংশগ্রহণের নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ সবচেয়ে জরুরি। সংসদীয় কমিটিগুলোর কার্যকর অংশগ্রহণে সকল নীতি, আইন এবং নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্যের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হবে, এটি প্রচলিত নিয়ম। যুক্তরাজ্যে সেই কারণেই সংসদীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারেও সিনেট কমিটি ও কংগ্রেস কমিটি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব প্রতিষ্ঠান সংসদীয় ব্যবস্থার কাছে জবাবদিহি করে। তাই সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মার্কিন প্রেসিডেন্টও স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন না। প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধানসহ কেউ সংবিধানের বাইরে যেতে পারেন না। উদার গণতন্ত্রে এটিই মৌলিক ও যৌক্তিক ব্যবস্থা।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: যে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা করে বিএনপি, সেই নির্বাচনেই মির্জা ফখরুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও নির্বাচিত হয়েও তিনি তার ভোটারদের আস্থার বিন্দুমাত্র পাত্তা দিলেন না। তিনি সংসদে যাননি। তার সংসদীয় আসনের জনগণকে তোয়াক্কাই করলেন না, তাদের হয়ে সংসদে কথা বলতে চান না তিনি। তিনিই আবার যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিচ্ছেন! যুক্তরাজ্যে সংসদ সদস্যরা সংসদে বসে মোবাইল ফোনে পর্ণ ভিডিও দেখছেন- এমন সংবাদ প্রকাশের পরেও তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ দেন!

যুক্তরাষ্ট্রের মত একটা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের উদাহরণ দেন তিনি, যে দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নাৎসী প্রতীক ব্যবহারের কারণে ধিকৃত হয়েছেন, যে দেশের মূল ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে আছে পেন্টাগন আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে, রাষ্ট্রপতি তাদের ক্রীড়নক হিসেবে অলঙ্কারিক পদ দখল করে থাকেন শুধু। যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় চরমভাবে, যেখানকার সিনেট কমিটি এবং কংগ্রেসের মত নিয়েই অন্য দেশের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়, যে দেশের সরকারি বাহিনীগুলো সাধারণ জনগণকে হত্যা করছে প্রতিদিনই, কিন্তু জবাবদিহিতা নাই, সে দেশটির সেনাবাহিনী, পুলিশের উদাহরণ দেন মির্জা ফখরুল!

আসলে অন্য কোনো কারণ নয়, এই দেশগুলোর কাছ থেকে মির্জা ফখরুলরা বিশেষ খাতির পান, সে দেশগুলোর লবিস্ট ফার্মে বিএনপির বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে, সে কারণেই তাদের প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই ফখরুলের। উদার গণতন্ত্রের আকাঙ্খা একটা ফাউ কেচ্ছা মাত্র।

ফখরুল লিখেছেন: মোটা ভাত, মোটা কাপড়, মাথার ওপরে ছাদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও বেঁচে থাকাই মৌলিক অধিকার। তা থেকে সিংহভাগ মানুষ বঞ্চিত। শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনসহ সর্বত্র দুর্নীতি ও দলীয়করণ দেশকে অকার্যকর করেছে। শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনা ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। ভীতি ও ত্রাস মানুষের প্রতিবাদের সাহস কেড়ে নিয়েছে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুৎ ও সারের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভরত কৃষকদের গুলি করে হত্যা করেছিল, সেই বিএনপির মহাসচিব আজ মানুষের মৌলিক অধিকারের গপ্পো দিচ্ছেন! যে দলটি ক্ষমতায় যাওয়া মাত্রই বিরোধীদল ও সংখ্যালঘুদের দমনে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করেছিল দেশে, আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল, লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুন, জমি দখল, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী এমন কোনো অপরাধ ছিল না, যা করেনি, সেই বিএনপি মহাসচিব আজ মৌলিক অধিকারের কথা বলেন কোন মুখে?

আওয়ামী লীগ সরকারের এই সময়ে বিএনপির কোন নেতা-কর্মী না খেয়ে আছেন? বিএনপি করার কারণে কোন কর্মীর রুজি-রোজগার বন্ধ আছে? অথচ বিএনপি আমলে একটি সাধারণ পান দোকান দিতে হলেও চাঁদা দিতে হতো, ব্যবসার ১০% বখরা আদায় করতেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান। সেসময় দেশে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব ছিল না বিনা বখরায়।

প্রতিবাদ দূরের কথা, টুঁ শব্দ করলেও লাশ পড়ে যেত, যেমন পড়েছিল চট্টগ্রামের ছাত্রনেতা মহিমউদ্দীনের। আজ বিএনপি নেতারা দিনভর রাজপথ কাঁপান, তাদের দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তাদের বিলাসী জীবন চলছে, বিদেশ সফর করছেন ঠিকঠাক। কেউ কেউ ৩০ মাস ধরে পুরো বিল্ডিংয়ের গ্যাস বিল না দিয়ে দিব্যি টিকে আছেন রাজধানীতে।

মির্জা ফখরুল আরেকটি মিথ্যাচার করলেন দারিদ্রসীমা নিয়ে। তিনি দাবি করেছেন- দেশের শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে! মির্জা ফখরুলের এমন কোনো বয়স হয়নি বা তিনি অপ্রকৃতিস্থ নন যে ভুলভাল বকবেন। তিনি সজ্ঞানেই মিথ্যাচারটি করেছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি আমলে অর্থাৎ, ২০০৫ সালে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ ছিল দারিদ্রসীমার নিচে।

অন্যদিকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, ২০১৯ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এই সত্যটা বিএনপি স্বীকার করে না কখনই। এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এই ৪২ শতাংশের মনগড়া তথ্যটি দিয়েছেন। এবং দুঃখের ব্যাপার হলো, পত্রিকাগুলোও বিএনপির মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে দিব্যি এই ভুয়া তথ্যটি বিএনপি নেতার ভাষ্য হিসেবে ছেপেছে। সত্যি সেলুকাস।

আরও পড়ুন : সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের সফলতা দেখে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে মরিয়া মির্জা ফখরুল

ফখরুল লিখেছেন: স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছিল বিভাজন ও ভিন্নমত নির্মূলের রাজনীতি। যুক্তিহীন ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, মৌলিক অধিকার হরণ করে বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রের কবর দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনে এবং মিশ্র ও ক্ষুদ্র বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যৌক্তিক ও মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। তাঁর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন ঐক্য, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির যৌক্তিক ও মৌলিক ধারা সৃষ্টি করে। তিনি বাম-ডান সব মতকে নিয়ে সত্যিকারের বাস্তব রাজনীতির জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। যৌক্তিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত তৈরি করেছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই অগ্রযাত্রাকে রুখে দিয়েছিল দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা তাঁকে হত্যা করে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: বিভাজন ও ভিন্নমত বলতে মির্জা ফখরুল মূলত তাদের রাজনৈতিক দোসর জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারকেই বুঝিয়েছেন। স্বাধীনতার পর জনরোষের ভয়ে ফখরুলের রাজাকার পিতা পরিবারের লোকজনসহ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষের বিভাজন তাকে রাগান্বিত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়েছিলন। ভিন্নমত নির্মূল অর্থাৎ পাকিস্থানপ্রেমিদের খেদানোর রাজনীতি মির্জা ফখরুলদের বুকে বেদনা জাাগায়।

ব্যক্তিপূজার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গেও তাদের বেদনা স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু সরকারের অধীনে চাকরি করা এক সামান্য মেজর- যে কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, তাকে আইডল হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মহীরূহসম ইমেজের বিপরীতে। বঙ্গবন্ধুর জুতোর আড়ালেই চাপা পড়ে যায় সেই মেজরের অবদান। তবুও দলীয় প্রধান হিসেবে মেজর জিয়াকে মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর ছায়ায়। ব্যক্তিপূজা বলে কটাক্ষ করাটাই রাজাকারপুত্রের জন্য স্বাভাবিক। বাকশাল-এর জুজু অনেক বছর ধরেই ছড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াত।

বাকশাল ছিল মূলত কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষদের মুক্তির সোপান। যা বাস্তবায়ন পরের কথা, শুরুটাই করে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধু। যে বাকশাল-এর সদস্য পদ নিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও। আমৃত্যু পাকিস্থানের একনিষ্ঠ অনুগত জিয়ার দর্শন ছিল একটাই- দেশকে পাকিস্থানের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেজন্য তিনি সামরিক বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সদস্যদেরকে মিথ্যা অজুহাতে হত্যা করেছিলেন রাতের আঁধারে। দেশ ছেড়ে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনেন, রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযমসহ চিহ্নিত কুলাঙ্গারদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেন। তাদেরকে পুনর্বাসিত করেন।

তার শেখানো উচ্চাকাঙ্খার বলি হয়েছেন তিনি নিজেই। তার হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে মামলাটি আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় চালু করেছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে পুনরায় বন্ধ করে দেয়। এমনকি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ‘জিয়ার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই তাকে হত্যা করেছিল’ মর্মে কিছু ক্লাসিফায়েড তথ্য দেওয়ার পরেও প্রতিদেনটি আর আলোর মুখ দেখতে দেয়নি খালেদা জিয়া সরকার। আজ অব্দি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দূরে থাক, জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যই জিয়া হত্যার বিচার চায়নি। কেন? ফখরুল সাহেবের কাছে জবাব আছে?

ফখরুল লিখেছেন: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন চিন্তাকে ভিত্তি করে দেশকে এগিয়ে নেন। সংসদীয় গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মতো যৌক্তিক পরিবর্তন তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল। অর্থনীতির আশাব্যঞ্জক উন্নয়ন হয়েছিল।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারন করেছেন ঠিকই। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদেরকে বুকে তুলে পবিত্র সংসদে বসিয়ে কলঙ্কিত করেন ৩০ লাখ শহিদ ও ৬-৮ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিয়ে পাওয়া বাংলাদেশের রক্তাক্ত ইতিহাসকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলেন ফখরুল! অথচ এই বিএনপি আমলেই নির্যাতিত হয়েছিল অগুণিত সাংবাদিক। বোমা ছুড়ে, গুলি করে, গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় অনেক সাংবাদিককে। বিটিভির বাইরে একমাত্র টিভি চ্যানেল ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে লাইসেন্স পাওয়া একুশে টিভি। আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে শুরু বলেই প্রতিহিংসাবশত সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি ২০০২ সালে। যার পেছনে প্রধান কারণ ছিল বিএনপি সরকরের নানা দুর্নীতি আর দেশজুড়ে সন্ত্রাসবাদের সংবাদ করার কারণে।

রাষ্ট্রের না হলেও জিয়া পরিবার এবং বিএনপি নেতাদের পকেট-অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন করেছিল খালেদা জিয়া সরকার। জিয়ার মৃত্যুর পর বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলতেন- জিয়ার জামা-কাপড় কেটে ছোট করে তারেক-কোকোকে পরানো হতো। জিয়ার রেখে যাওয়া ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। সেই স্যুটকেস থেকে বের হয়েছিল আলাদীনের চেরাগ। সেখান থেকে একে একে বেরোতে লাগল একাধিক টেক্সটাইল মিল, অসংখ্য লঞ্চ ও নৌযান, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ বিপুল সম্পদ। হদিস মিলতে লাগল দেশে-বিদেশে অগাধ সম্পত্তির। আর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য তো রয়েছেই।

ফখরুল লিখেছেন: আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাসহ রাজনীতি ও রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তথাকথিত মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। সেখানে গুটি কয়েক লোকের হাতে টাকা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় বাড়ছে না। যে সংকট তৈরি হয়েছে, এর একদিকে জ্বালানি তেল, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে গণমাধ্যমকে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মিথ্যা মামলায় গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড দিয়ে গৃহ অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসনে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: বিএনপি আমলে সন্ত্রাসবিরোধী সভা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর নেমে এসেছিল প্রলয়। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ যায় ২৪ নেতা-কর্মীর, আহত হন পাঁচ শতাধিক। চিকিৎসা বন্ধ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল আহতদের। আইন-আদালত সব কুক্ষিগত করে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। মির্জা ফখরুল সেসময় নিশ্চয় কোমায় ছিলেন না। এই সরকারের আমলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, মিথ্যাচার, টকশো, সবই চলছে দেদারসে। দিনভর বক্তব্য দেয়ার পরেও তাদের দাবি গণতন্ত্র নাই। এক মেগাওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদন করতে না পারা ফখরুল মেগা প্রজেক্টকে আখ্যা দিচ্ছেন ‘তথাকথিত’ বলে!

অথচ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক সক্ষমতা, দেশজ উৎপাদন, রিজার্ভ, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, কৃষি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও মজুদ… ইত্যাদি নানা সূচকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ের সংস্থাগুলোর গবেষণায় বাংলাদেশকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্ত ভিত্তির অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক নানা সম্মেলনে বাংলাদেশ লিডারশিপের পদমর্যাদা পাচ্ছে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর কাছে উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ সহায়তা প্রদানসহ তাদের দায়ও নিচ্ছে বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ আগে কেউ কখনো দেখেছে?

হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের কথা ভুলে গেছেন ফখরুল। মাফিয়া সাম্রাজ্যের সিন্ডিকেট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, বিদেশে অর্থ পাচারের বিশ্বরেকর্ড করেছিল বিএনপি। যার বদৌলতে ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাড়া পাচ্ছে, জামিন পাচ্ছে কীভাবে? মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে থাকা মামলাগুলো কীভাবে স্থগিত হলো? তারা কি তবে সরকারের সাথে গোপন আঁতাত করেছেন? জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে মির্জা ফখরুলকে বারণ করেছিল কেউ? নির্বাচিত হয়েও জনগণকে উপেক্ষা করলেন, সংসদে যাননি কেন তিনি?

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তো ছিল ২১শে আগস্টসহ বারবার শেখ হাসিনার ওপর প্রাণঘাতী হামলাগুলো। বিনিময়ে কি প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া? বরং খালেদা জিয়াকে আপনজনদের সান্নিধ্যে বাড়িতে থাকার সুযোগ ও দেশের সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাজা স্থগিতের অন্তবর্তীকালীন সুযোগও দিয়েছেন। এত সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ দূরের কথা বিশ্বের ইতিহাসে কোনো অপরাধীই পাননি। খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবুও ফখরুলের দাবি, খালেদা জিয়া নাকি প্রতিহিংসা শিকার! ২১শে আগস্টের প্রধান পরিকল্পনাকারী তারেক রহমান বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছেড়ে ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়েছেন শুধুমাত্র সাজা থেকে বাঁচতে। তিনি সৎ ও দেশপ্রেমিক হলে তো দেশে এসে মামলা ফেইস করতেন। তার দলে কি আইনজীবীর আকাল পড়েছিল? কিন্তু তিনি নিজেই জানেন, অপরাধ সুস্পষ্ট, বাঁচার উপায় নেই।

ফখরুল লিখেছেন: বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশের ভবিষ্যতের ও গণতন্ত্রের ক্ষতি করেছেন। সেজন্যই বিএনপি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। ২০১৮ সালে কোনো নির্বাচনই হয়নি। আগের রাতে ভোটে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। সত্যিকারের যুক্তিভিত্তিক রাজনীতি গড়ে উঠতে পারে, যখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে। গণতান্ত্রিক চর্চা হয়। দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগ সেই ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক পরিসর নেই। বিরোধী দল কথা বলতে পারে না। সংবাদপত্র লিখতে পারে না। নির্যাতন, দমন-পীড়ন, গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলায় ভয়ংকর পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন এখন বিএনপির কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে। অথচ খালেদা জিয়া নিজেই এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষমতায় থাকতেই। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি খায়রুল হকের দেয়া রায়ের সমালোচনা করছেন ফখরুল। যার অর্থ হলো, আদালত অবমাননা করছেন তিনি। আদালতের বিরুদ্ধাচরণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার অর্থ আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। এজন্য তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে আদালতের কাছে। আজ পর্যন্ত বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। দিনভর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে বিএনপি বিবৃতি দেয়ার পর হঠাৎ বিকেলে এসে জানায় ভোট মানি না!

কয়েকদিন পর রুহুল কবির রিজভী রাতের ভোট নামের একটি হাস্যকর পদবাচ্যের অবতারণা করেন। যার পক্ষে আজ পর্যন্ত একটি প্রমাণ দেখাতে পারেনি বিএনপি। অথচ তাদের নাকি লাখ লাখ নেতা-কর্মী। তাদের কারো মোবাইল ফোনে একটা ছবি/ভিডিও দেখাতে পারেনি বিএনপি। কেন? এমনকি নির্বাচন কমিশন তাদরেকে অভিযোগ করতে বলেছিল, তাহলে তদন্ত করা হবে বলে সিইসি আশ্বস্ত করেন, তবুও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এমনকি আদালতে পর্যন্ত যেতে পারত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে, কিন্তু বিএনপি সেটাও করেনি।

হাস্যকর অভিযোগের বিপরীতে কোনো প্রমাণ থাকলে তো যেত। দিনভর এমন নানান মিথ্যাচার, গালগল্প ছাড়ায় বিএনপি এবং সকল রাজনৈতিক দল। তবুও তাদের দাবি বিরোধীদল কথা বলতে পারে না, সংবাদপত্রেও নাকি লিখতে পারে না। তাহলে সমকাল পত্রিকায় ফখরুলের এই নিবন্ধ কি ভূত এসে লিখে দিয়ে গিয়েছিল? ফখরুল-রিজভীসহ বিএনপির কোনো নেতাকে কথা বলার কারণে গ্রেপ্তার বা নির্যাতন করা হয়েছিল? তারা তো বহাল তবিয়তে আষাঢ়ে গল্পের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। জননিরাপত্তায় রাস্তায় পুলিশ থাকলে তাদের এত অসুবিধা কেন? পেট্রোল বোমা হামলা চালাতে না পারার কারণে? দূতাবাসে দৌড়ানো বন্ধ করে মির্জা ফখরুলদের উচিৎ সত্যিকারের রাজনীতির পাঠে মনোনিবেশ করা।

ফখরুল লিখেছেন: একজন ব্যক্তিকে খুশি করতে গোটা ব্যবস্থা চালানো হয়েছে। এক ব্যক্তির তোষণ শুরু হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ এবং সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। তা আজ পুরোপুরি চলে গেছে। আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলছি না। আমরা বলছি, জনগণের প্রতিনিধিত্বের সংসদ। তা না হলে, জনগণের চাওয়া, দাবিদাওয়ার সমাধান হবে না।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের সাফল্যের কথা ওপরে বলা হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে মূল রূপকার যিনি, সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আন্তর্জাতিক নেতৃত্বে পরিণত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি, পদকলাভ করছেন, সম্মানিত হচ্ছেন নানাভাবে। বিশ্ব দরবারে যেখানে তিনি এমনিতেই সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, সেখানে দেশের মানুষ কেন তার প্রশংসা করবে না? খালেদা জিয়ার জন্য ফখরুল যেমন ভুয়া সনদ এনে দেশবাসীকে দেখাতে গিয়ে পরে ধরা পড়ে গিয়েছেন, তেমন ভুয়া সনদ লাগে না শেখ হাসিনার প্রশংসা করতে।

তাছাড়া রাজাকারপুত্র ফখরুল কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে? তোষণের চোটে খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং তারেক-কোকোকে শিশু মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার ধৃষ্ঠতা দেখানো ফখরুলের বিচার হওয়া উচিৎ। নেতৃত্বহীন বিএনপি ক্ষমতায় এমনিতেও যেতে পারছে না, তারা প্রতিনিধিত্ব করবে কীভাবে? নিজে নির্বাচিত হয়েও সংসদে যাওয়ার সৎ সাহস রাখেন না, তিনি জনগণের দাবির কথা বলেন কোন মুখে? সংসদে পাঠিয়েছেন রুমিন ফারহানার মত রাজনৈতিক মূর্খদের, যারা সংসদে যান ঝগড়া করতে।

ফখরুল লিখেছেন: বর্তমানে কিছু ধনী মানুষ আরও ধনী হচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। বৈষম্য বাড়ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। যারা অনেক টাকায় ইংলিশ মিডিয়ামে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিদেশে পড়তে পারে তারাই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের কারণে শিক্ষা নেই। দুর্নীতিতে স্বাস্থ্য খাত অসুস্থ। যার টাকা আছে, তার জন্য চিকিৎসা আছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যান চিকিৎসার জন্য। বিদ্যুৎ খাতেরও অভিন্ন অবস্থা। আওয়ামী লীগ দায়মুক্তি আইন করে, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে। যা খুশি তাই চলছে দায়মুক্তির কারণে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ধনীরা ব্যবসা করে ধনী হওয়ার জন্যই। এটাকে অনৈতিক ভাবার কোনো কারণ আছে? গরিবের যদি কর্মদক্ষতা না থাকে, তার জন্য উপায় কী? করোনা মহামারীতে বিগত বছরগুলোতে সারাবিশ্বে অগুণিত মানুষ কর্মহীন হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোতে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। বাংলাদেশে সেই তুলনায় প্রভাব পড়েছে খুব কমই।

বিএনপির ধনী নেতাদের নাম আসছে প্যান্ডোরা পেপার্স, প্যারাডাইজ পেপার্স আর পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে, এতে কি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে? গয়েশ্বর চন্দ্রের মত নেতারা ৩০ মাসের গ্যাসের বিল আটকে দিয়ে রাষ্ট্রকে জিম্মি করছেন। ফখরুল, রিজভীদের দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস দেখা যায় না, তারা চলছেন কীভাবে? দিনভর তো থাকেন পার্টি অফিসে বা রাস্তায়। তাদের বিলাসী জীবন-যাপন চলছে কীভাবে? কিছুদিন পর পর সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যান কীভাবে? ক্ষমতায় না থেকেও তারা কি ক্রমাগত ধনী হচ্ছেন?

আরও পড়ুন : মির্জা ফখরুল একজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষ হয়েও নিজের গদি বাঁচাতে যেভাবে মিথ্যাচার করছেন, এটি তার মতো নেতার মুখে মানায় না – মির্জা আব্বাস

ফখরুল লিখেছেন: ইলেকট্রনিক বা খবরের কাগজ সব সংবাদমাধ্যম আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ বনাম অন্যান্য। বিএনপির লোক হলে সে বিচার পাবে না, আইনের আশ্রয় পাবে না, মৌলিক অধিকার পাবে না, চাকরি পাবে না। এই বিভক্তির ফলে মেধার বিকাশ হচ্ছে না।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে হলে টিভি, সংবাদপত্র আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাদের গলাবাজি শোনা যায়? সরকার পতনের দাবিতে গণ্ডায় গণ্ডায় রাজনৈতিক দলকে একাট্টা করা, হুমকি-হুঁশিয়ারি দেওয়া, আল্টিমেটাম দেওয়া, রাজপথ দখল করার ডাক, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার, টকশোতে গরমাগরম বক্তৃতা আর মিথ্যাচার তবে কারা কারছে? নিয়ন্ত্রণ তাহলে কীভাবে হলো? আওয়ামী লীগ অবশ্যই জাতিকে বিভক্ত করেছে, অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষে থাকা গোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগই আলাদা করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে। একপক্ষে ছিল দেশের স্বাধীনতাকামী জনতা, অন্যপক্ষে ছিল রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা। যুদ্ধের পর তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে। যেটা জিয়াউর রহমান বন্ধ করে উল্টো তাদের পুনর্বাসন করে, জেল থেকে ছেড়ে দেয়। খালেদা জিয়াও যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও মোটা দাগ টেনে জাতিকে দেখিয়ে দেয়, স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই নাই স্বাধীন বাংলাদেশে।

এই বিভক্তিটা স্বাভাবিকভাবেই রাজাকারপুত্রদের কাছে বিষবৎ মনে হবে। বিএনপির লোকজন নাকি বিচার পাচ্ছে না। তাহলে প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, বিভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের জামিন লাভের খবর। সেসব কি জাদুবলে হচ্ছে? আওয়ামী লীগ করে, এমন কেউ অপরাধ করলে কি ছাড় পাচ্ছে? শাস্তি হচ্ছে না তাদের? কেউ মিথ্যাবাদী হলেই শুধু এসব অস্বীকার করবে, দেখেও দেখবে না। বিএনপির কোন নেতা-কর্মী চাকরি পাচ্ছে না? তাদের মুখে আহার জোটাচ্ছে কে তাহলে?

ফখরুল লিখেছেন: ক্যাসিনো মামলা, দুর্নীতির মামলার আসামিদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মিথ্যা মামলা হলেও খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিনটা দেওয়া হচ্ছে না। ২১ আগস্টের মামলায় তিনটি প্রাথমিক রিপোর্টে তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলা সাজিয়ে তাঁকে সাজা দিয়েছে। প্রধান আসামিকে মামলা চলাকালে ফাঁসি দিয়েছে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: মামলা যদি জামিনযোগ্য ধারায় হয়, ছাড়া না পাওয়ার তো কোনো কারণ নাই। জামিন তো বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পাচ্ছে। জি কে শামীমের মত বড়সড় অপরাধীকে জাড়িয়ে সরকারের সমালোচনা করেছিল বিএনপি। অথচ সেই জি কে শামীমের মামলা লড়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। যিনি শামীমের জামিন পাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

সেই মওদুদ আবার খালেদা জিয়ারও আইনজীবী ছিলেন। নিজে আবার বাড়ি দখল করে রাখার দায়ে উৎখাতও হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রের অর্থ তছরুপ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় তহবিলে আসা অর্থ লোপাট করেছেন। এতিমের অর্থ লোপাট মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার নামে আরও অনেক গুরুতর মামলা আছে, যাতে তিনি সাজা পাচ্ছেন বা মামলা চলমান আছে।

[আলো আসার গপ্পো : পত্রিকায় কলামের নামে মির্জা ফখরুলের মিথ্যাচার ও তথ্যসন্ত্রাসের চুলচেরা বিশ্লেষণ]

২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা হলে বিএনপি তাতে প্রধান আসামী করেছিল পার্থ সাহা আর জজ মিয়াদেরকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় পার্থকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বানানো হয়েছিল। অপরদিকে নোয়াখালী থেকে তুলে আনা হয় জজ মিয়া ওরফে জালাল আহমেদকে। শুধুমাত্র তারেক এবং বিএনপি নেতাদের বাঁচাতেই মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল।

আজ ফখরুল এসব ঘটনাকে প্রতিহিংসা দাবি করছেন। অথচ গ্রেনেড ছুড়ে এত মানুষ হতাহত করা হলো, অপরাধীদের যেন সাজা না হয়, সেটা দাবি তাদের! সেসময় বিচার দূরে থাক, হতাহতদের চিকিৎসাই করাতে দেয়া হয়নি, আলামত ধ্বংস করে ফেলা হয়, রাতারাতি ঘটনাস্থল পানি দিয়ে ধুলে পরিস্কার করে ফেলা হয়েছিল। প্রতিহিংসা শব্দের অর্থ জানেন রাজাকারপুত্র ফখরুল?

ফখরুল লিখেছেন: আজ গণতন্ত্র নেই বলেই যুক্তি কখনও প্রাধান্য পায় না। বিতর্ক, জবাবদিহিতা নেই বলে সবকিছুতে ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে মূল লক্ষ্য ‘আমাকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে থাকতে হবে, লুটপাট করতে হবে।’ তাহলে যুক্তি খাটবে না। পরামর্শ একটাই, গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। যতই অন্ধকার থাক, কাল নতুন দিনে নতুন সূর্যের আলো সব আঁধার কেটে নতুন বাংলাদেশে আলো ছড়াবেই। সত্যিকার অর্থেই জ্ঞানভিত্তিক, যুক্তিভিত্তিক একটি মুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: গণতন্ত্র নেই নেই নেই- এই বুলি আর কত ফখরুল সাহেব? গণতন্ত্র না থাকলে কথা বলতে পারতেন? আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতার মত কার্ফুতন্ত্র থাকলে কী বলতেন? যাকে সন্দেহ হতো, তাকেই রাতের আঁধারে ফাঁসিতে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে ‘খতম করে দেয়া তন্ত্র’ থাকলে কী বলতেন? সেসময় জবাবদিহিতা ছিল? হাওয়া ভবনের লুটপাটতন্ত্রের অন্যতম কুশীলব আপনি নিজে কাউকে জবাবদিহি করেছিলেন? বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে আপনি আপনার মন্ত্রণালয়ের লুটপাটের অন্যতম প্রধান দোসর ছিলেন। বিমানকে পথে বসিয়ে দিয়েছিলেন। কাউকে জবাবদিহিতার কথা তো তখন মনে পড়েনি?

নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছিল কে? রোহিঙ্গাদেরকে ভুয়া ভোটার বানিয়ে, ছাত্রদলের নেতাদেরকে নির্বাচন কর্মকর্তা বানিয়ে, ক্ষমতা চিরাস্থায়ী করার তন্ত্রমন্ত্রের জননী কে? মনে পড়ে না এখন? বিরোধীদল-মতকে নিধন করার চর্চা করেছিলেন, আজ নিজেরা বিরোধীদলে থেকে গণতন্ত্রের সবক দিচ্ছেন? এতই যদি গণতন্ত্রপ্রেমি হন, তবে গণ-মতের তোয়াক্কা না করে বিদেশি দূতাবাসের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরঘুর করেন কিসের লক্ষ্যে? জনগণ আপনাদের মতলব বোঝে। আপনাদের আসল চেহারা তারা চিনে নিয়েছে। তাই ধানাই-পানাই বন্ধ করুন। সুষ্ঠু রাজনীতির পথে আসুন।

আরও পড়ুন :