ভর্তুকি

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মত বড় একটা সাফল্য বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যার প্রধান রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সরকার কৃষিতে বিপুল ভর্তুকির পাশাপাশি কৃষিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে মোট ৮৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এই খাতে ভর্তুকি ছিল মাত্র ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় এখন সারে ভর্তুকি বেড়েছে ২৭ গুণ। যার ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন। সার এবং কৃষি উপকরণ প্রাপ্তিতে সরকার মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রসারিত করেছে। কৃষি বিষয়ক পরামর্শ, নিয়মিত তদারকিতে কৃষক সকল সুবিধা পাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে।

আরও পড়ুন: বিএনপির অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই শোচনীয় : তারা রাজনীতির মাঠে বড় বড় কথা বললেও তারা স্বীকার করে নিয়েছে দেশ চালানোর যোগ্যতা তাদের নেই।

সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ খাদ্য উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় এসে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেচকাজে ডিজেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি চালু করে। এতে মাত্র ৫ বছরে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। কিন্তু এই খাতে ভর্তুকি একেবারে কমিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াত সরকার। ফলে কৃষকরা পড়েন বিপাকে। সার ও বিদ্যুতের দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হন কৃষকরা। আর সেই বিক্ষোভ দমনে গুলি চালায় বিএনপি-জামায়াত সরকার। ফলে মারা যান অর্ধ শতাধিক কৃষক। যা বাংলাদেশে এক লজ্জাজনক অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে।

কৃষিখাতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের অব্যবস্থাপনার ফলে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ পুনরায় খাদ্য ঘাটতি এবং উৎপাদনে নেতিবাচক ধারায় চলে আসে। পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার পুনরায় সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ভর্তুকি চালু করে। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণে কোনও সংকট না হওয়ায় কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য বর্তমানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় যা প্রায় ৩ গুণ। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে দ্বিগুণের মতো। এই দুই কারণে বাংলাদেশের সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ‍ভর্তুকি দিয়েও সরবরাহ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ ঠিক রাখতে এ বছর সার ক্রয় খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়ার চাহিদা ২৬ লাখ টন, টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন এবং ডিএপি সারের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১৬ লাখ টন। তবে এখন দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর মূলে কারা: দ্য ডিপলোম্যাটের বিশ্লেষণ

শুধু সার কেনার ক্ষেত্রে এত ভর্তুকি দিলে সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে বলে পরামর্শকরা বলছেন। আবার ভর্তুকির অভাবে সারের দাম বাড়ালে কৃষকেরও কষ্ট বাড়বে, কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দাম আরও বাড়বে। তবুও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভর্তুকি প্রয়োজনে বাড়ানো হবে, তবুও যেন কৃষক কষ্ট না পায়। অথচ বিএনপি-জামায়াত সরকার এই সার নিয়ে কী করেছিল মনে পড়ে? জানার আগে একটু পেছনে ফেরা যাক।

বিএনপি-জামায়াত সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়। রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন শিল্পমন্ত্রী। জঙ্গিদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে নিজামীর ভূমিকা ছিল অনন্য। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের গোড়াপত্তনের সঙ্গে যুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসাদুল্লাহ আল গালিবের সাথে গভীর যোগাযোগ ছিল নিজামীর। যার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী গালিবের ভাগ্নে মোহাম্মদ সালাফিকে জিয়া সার কারখানায় (বর্তমানে আশুগঞ্জ সার কারখানা) স্টোর কিপারের চাকরির ব্যবস্থা করা হয় নিজামীর মাধ্যমে। সালাফি ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা। সেই কারখানায় সার উৎপাদনের জন্য আমদানি করা হয় বিভিন্ন ধরণের উপাদান। যার মধ্যে ছিল বিশেষ একটি উপাদান- রক সালফার।

[ কৃষক যে সার এখন পায় ভর্তুকিতে, বিএনপি সেই সার তৈরির উপাদান তুলে দিয়েছিল জঙ্গিদের হাতে! ]

পরিকল্পনা মত কারখানা থেকে ভুয়া ভাউচারে প্রায় ১১শ’ ৮২ টন রক সালফার সরিয়ে ফেলে সালাফি। রক সালফার সার উৎপাদনের পাশাপাশি বিস্ফোরক তৈরিরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ। এত বিপুল পরিমাণ রক সালফার চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে সরকারের ভেতরে তোলপাড় হয়। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের হস্তক্ষেপে বিষয়টির তদন্তের ভার নেয় সরকার। কিন্তু রাজাকার নিজামী জড়িত থাকায় এবং তারেক রহমানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকজনের প্রভাবে সেই তদন্তের আর অগ্রগতি হয়নি। সংবাদপত্রে মাঝে মাঝে হালকা করে বিষয়টি নিয়ে লেখা হলেও চাপের মুখে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।

এই বিপুল রক সালফার নিয়ে জমা করা হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ঝাউতলা এলাকার আহলে হাদিস মসজিদে। বোমা তৈরির প্রধান উপাদান এই রক সালফারের পুরোটাই চলে যায় দেশের আনাচে কানাচে। জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর সামরিক সদস্যদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। ঐ মসজিদ থেকে এসব রক সালফার কাঠের বাক্সে ভরে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হত। তা থেকে তৈরি বোমা দিয়েই ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়।

আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সহিংসতা ভোলেনি দেশবাসী ; আতঙ্কিত থাকতো পুরো দেশ

জেএমবির আমির (জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সাবেক সদস্য) মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় সেই রক সালফারের কয়েকশ বস্তা পানিতে ফেলে নষ্ট করা হয়। তবে বেশিরভাগই এখনও জঙ্গিদের কাছে মজুদ রয়েছে। তিনি এও নিশ্চিত করেন, জেএমবি হলো জামায়াতের বি টিম। জামায়াতের সরাসরি নির্দেশেই তারা দেশে নাশকতার ঘটনা ঘটায়। বিএনপি-জামায়াত আমলে জঙ্গিদের শক্তিমত্তা বাড়াতে প্রয়োজনীয় আর্থিক, প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে জেএমবি ও হুজি সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে ছিল। এজন্য তাদের আরও শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নেয় এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত।

কী বুঝলেন পাঠক? যে সার দিয়ে কৃষক খাদ্যশস্য আবাদ করে, জাতির মুখে অন্ন তুলে দেয়, সেই সার তৈরির উপাদান ব্যবহার করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। অযোগ্যের হাতে দেশের শাসনভার চলে গেলে কী ঘটতে পারে, এটা তার একটা উদাহরণ মাত্র। সিদ্ধান্ত আপনাদের।

 

আরও পড়ুন: