
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পরপরই দেশজুড়ে তাণ্ডব শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। শিবির, ছাত্রদল, যুবদলের সন্ত্রাসীদের হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের মানুষ। এমনকি খড়গ নেমে আসে সাধারণ সরকারি চাকরিজীবীদের ওপরও। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া যেসব কর্মকর্তা প্রশাসন ও পুলিশের বিভিন্ন পদে ছিলেন, গণহারে চাকরিচ্যুত করা হয় তাদের। এর আগে, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে দেশের ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের সময়েও একই কাজ করেছেন তিনি। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনের অজুহাতে প্রহসনের বিচারে রাতারাতি সেনা-নৌ ও বিমান বাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গণহত্যা চালান খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের দেখানো পথেই হেঁটেছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর রাজাকার, মৌলবাদ ও উগ্রবাদীদের পুনর্বাসন করেন তিনি। পরের বার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনকে রাজনীতিকরণের উদ্দেশ্যে চাকরিজীবীদের ওপর খড়গ চালান তিনি।
২০০১ সালের ৬ ডিসেম্বরের প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান হেডলাইন হয় খালেদা জিয়ার সরকার গঠনের পরেই গণহারে মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মজীবীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর ১৫ জন সচিবের রদবদলের মাধ্যমে প্রশাসনে অস্থিরতা শুরু করে। এরপর সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও নারী কর্মকর্তাসহ ৫০ জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ৩৬ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ক্যাডারের শতাধিক কর্মকর্তাকে এসডি করা হয়। অতিরিক্ত আইজিসহ পুলিশের ৯ জন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক অবসরে।
আরও পড়ুন : বিএনপি আমলে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য রাজপথে নেমেছে সাধারণ মানুষ
এমনকি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের রাজনৈতিক সুপারিশ অনুসারে সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসক, পুলিশের এসপি-ওসি প্রভৃতি তিন শতাধিক পদে ব্যাপক রদবদল করা হয়। যাদের চাকরিচ্যুত, বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি বা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে; তাদের কারো বিরুদ্ধেই অদক্ষতা বা অযোগ্যতা বা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। এমনকি তত্ত্বধায়ক সরকারের সময় মাত্র কয়েকমাস আগে ‘নিরপেক্ষ’ মনে করে নিয়োগ দেওয়া শতাধিক সরকারি কর্মকর্তাকেও বিএনপি-জামায়াত সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে। এর মূল কারণ, দক্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট লোকদের নিয়োগের পথ সৃষ্টি করা।
[২০০১-এ খালেদার আমল : বিএনপি’র রাজনীতি না করার দরুণ অকারণে চাকরি হারাতেন পেশাজীবীরা]
প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, যাদের অন্যায্যভাবে পদচ্যুত বা কর্মহীন করা হয়েছে তাদের সিনিয়রদের সবাই ১৯৭৩-সালের ব্যাচের কর্মকর্তা। তাদের অধিকাংশই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। গণহারে সর্বস্তরের সরকারি পেশাজীবীদের চাকরিচ্যুত, ওএসডি এবং রদবদলের ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। এমনকি হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়ার আশায় ছোটাছুটি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পেশাজীবীরা। ফলে ভেঙে পড়ে চাকরিবিধি ও চাকরির কাঠামো। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে প্রশাসন।
আরও পড়ুন :
- ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে দেশবিরোধিতাই বিএনপির লক্ষ্য
- সব মানবাধিকার কি বিএনপি-জামায়াতের জন্যই? সাধারণ মানুষ ও বিএনপি-জামায়াতের ভিকটিমরা কি মানুষ নয়?
- গ্রামের মানুষের সাথে প্রতারণা : বিএনপির পুরনো অভ্যাসের দলিল