ইউনূস

দেশের ক্রাইসিসে যাকে পাওয়া যায় না, যিনি পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয় করার দূরভিসন্ধি করেন, যিনি দেশের মানুষকে ঋণের সুদের জালে ফাঁসিয়ে সর্বস্বান্ত করেন আর মার্কিন চক্রান্তকারীদের নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা চাঁদা দেন, যিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বকেয়া ৩০০ কোটি টাকা লোপাট করতে আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে ১৪ কোটি টাকায় লবিংয়ের জন্য নিয়োগ দিয়ে আদালত কর্তৃক তিরস্কৃত হন, তিনি হলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাশীল বান্ধবী হিলারি ক্লিনটন ও তার স্বামীর লবিংয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ পাচার সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বের অন্তত ৯টি ব্যাংকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫ লাখ ডলারের হদিস মিলেছে, যা বাংলাদেশী টাকায় ৭৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। ড. ইউনূসের সবচেয়ে বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জেপি মরগান চেস ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে ১৯৯৭ সালে। ব্যাংক অব আমেরিকায় তার অ্যাকাউন্টের লেনদেন শুরু ২০০১ সালের নভেম্বর থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সিটিব্যাংক এনএ’তে তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন ২০০৪ সালে। একই দেশে এইচএসবিসি ব্যাংকে তিনি ২০০৬ সালে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ দেশে না রেখে এই ৪টি ব্যাংকে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে উপার্জিত অর্থ ড. ইউনূস এখানে রেখেছেন। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে জেপি মরগান চেস ব্যাংক থেকে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনের তহবিলের জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন তিনি। জেপি মরগান চেস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি স্বনামে থাকলেও এটি মূলত ইউনূস সেন্টার যুক্তরাষ্ট্র শাখার বলে জানা গেছে। কিন্তু এই ব্যাংকের হিসেব-নিকাশ সব তদারকি করেন ড. ইউনূস নিজেই। ব্যাংক অব আমেরিকার অ্যাকাউন্টটি ড. ইউনূস ও তার স্ত্রীর যৌথ নামে।

[অনুসন্ধানঃ ৯টি বিদেশি ব্যাংকে ড. ইউনূসের ৭৫ কোটি টাকার সন্ধান]

সিটি ব্যাংক এনএ’র অ্যাকাউন্টটি ড. ইউনূস পরিচালনা করলেও এটি সোশ্যাল বিজনেসের নামে পরিচালিত। এইচএসবিসির অ্যাকাউন্টটি ইউনূসের ব্যক্তিগত হিসাব বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এছাড়া ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডে দুটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করেছেন। ক্রেডিট সুইসভিত্তিক ব্যাংক এবং ইউবিএস ব্যাংকে তার দুটি অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে। ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি ১৯৯৮ সালে চালু হয়েছে। যার হিসেব বিবরণীতে দেখা যায়, নরওয়ে ভিত্তিক টেলিনর কোম্পানির সঙ্গে গ্রামীণের চুক্তির কারণে কমিশন বাবদ পেয়েছিলেন ২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা বাংলাদেশী টাকায় ২ কোটি টাকার কাছাকাছি।

এছাড়াও টেলিনর থেকে ড. ইউনূস বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি টাকায় ২০ কোটি টাকার মতো নিয়েছেন। ইউবিএস ব্যাংকেও ড. ইউনূসের একটি অ্যাকাউন্টের খবর মিলেছে। যেটি খোলা হয় ২০০২ সালে। এখানে তার প্রায় ৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কের খবর পাওয়া গেছে। এই অ্যাকাউন্টটি তার স্থায়ী আমানত হিসেবে চিহ্নিত অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। এছাড়া জাপানে ড. ইউনূসের আরেকটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। দ্যা ব্যাংক অব টোকিও মিতসুবিশি-ইউএফজে-তে ড. ইউনূসের স্থিতির পরিমাণ গত ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ কোটি টাকা।

এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস সিঙ্গাপুরে আরেকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করেছেন। সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটিতে ১০ই জুলাই পর্যন্ত স্থিতির পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় ২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বের ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থিতির পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

অনুসন্ধান ছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এই ৯টি হিসেবই সম্পূর্ণ নয়। এগুলো হলো পানিতে ভেসে থাকা হিমবাহের চূড়ার মত। পানির ওপরে দেখা যায় হিমবাহের ১০% আর নিচে থাকে ৯০%। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এমনকি আফ্রিকার অন্তত দুটি দেশে ড. ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অর্থের হিসাব তিনি বাংলাদেশের আয়কর বিবরণীতে প্রকাশ করেননি।

তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ড. ইউনূস অর্থের বিনিময়ে বিদেশে প্রচুর বক্তৃতা রাখেন, টিকেট কেটে লোকজন সেখানে অংশ নেন। তার বইয়ের রয়্যালটি, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবসা এবং প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ তিনি এসব ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধুমাত্র বক্তৃতা, বইয়ের রয়্যালটি এবং পুরস্কারের টাকাই নয়, ইউনূস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনের পক্ষে লবিং করেছেন; সেই লবিংয়ের টাকাও তিনি এসব ব্যাংকে রেখেছেন।

[অনুসন্ধানঃ ৯টি বিদেশি ব্যাংকে ড. ইউনূসের ৭৫ কোটি টাকার সন্ধান]

সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা নিষ্পত্তির প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের অর্থ সম্পদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ সময় দেখা যায়, গ্রামীণ টেলিকম প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসেব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ড. ইউনূস এখানে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন, প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ ইউনূস সেন্টারে স্থানান্তরিত করেছেন, ইউনূস সেন্টার থেকে আবার সেই অর্থ আরেক জায়গায় স্থানান্তর করেছেন। এখন বিদেশে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক ড. ইউনূস কীভাবে হলেন, সেটি তদন্তের দাবি রাখে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

আরও পড়ুনঃ