
১/ IDU সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে? IDU হচ্ছে International Democratic Union নামের একটি সংগঠন যেটি ১৯৮৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে। আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টি, ভারতের ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ইসরায়েলের লিকুদ পার্টি, জার্মানীর ‘ক্রিস্টিয়ান স্যোশাল ইউনিয়ন ইন বাভারিয়া’ সহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের রক্ষণশীল দলগুলো নিয়ে এ সংগঠনটির যাত্রা। এ সংগঠনের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)’।
অঞ্চলভিত্তিক IDU এর কয়েকটি শাখা সংগঠন রয়েছে। যেগুলা IDU এর মটো বাস্তবায়ন করে। এমন একটি শাখা সংগঠন হচ্ছে APDU (Asia-Pacific Democratic Union)। ২০১৯ সালে এটির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন।
সুতরাং এই জোটের মাধ্যমে সেই ১৯৮০র দশক থেকেই মূলত বিজেপির সাথে বিএনপির সখ্যতা। বিশ্বাস না হলে গুগলে জোটটির নাম সার্চ দিয়ে দেখেন, উইকিপিডিয়া ও তাদের ওয়েবসাইটসহ মির্জা ফখরুলের ভাইস-চেয়ারম্যান হওয়ার খবর পেয়ে যাবেন।
২/ ১৯৯২ এ ‘বাবরি মসজিদ’ যখন ধ্বংস করা হয় তখন বাংলাদেশর ক্ষমতায় বিএনপি। মুসলমান আইডেন্টিটি ও ভারতবিরোধীতার ধুঁয়া তোলে ক্ষমতায় আসলেও সেদিন চুপ থেকেছিলো বিএনপি। কোন প্রতিবাদ করেনি বিএনপি। বরং যেসব ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলো সেদিন তাদের উপর পুলিশি বর্বরতা চালায় তৎকালীন বিএনপি সরকার।
৩/ নরেন্দ্র মোদি যে ঘটনার জন্য “গুজরাটের কসাই” হিসেবে খ্যাত সেটি হলো ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা। সেসময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট। এবারও এই হত্যাযজ্ঞ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন প্রতিবাদ করেনি। যদিও জামায়াত রাস্তায় নেমেছিলো কিন্তু সেটি মূলত পরিকল্পনামাফিক যাতে এই সুযোগে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার করে হিন্দুদের ভারতে পাঠানো যায়। এতে হিন্দু ভোট কমবে।
৪/ ভারতের কট্রর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ২০১৪ সালে নির্বাচনে জয়ী জয়ে প্রধানমন্ত্রী হয় নরেন্দ্র মোদী। তখন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় সারাদেশে বিএনপির নেতা ও কর্মীরা খুশীতে নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরন করেন। সারা দেশে বিএনপির কি যে আনন্দ যা দেশবাসী দেখেছে তা জনগণ ভুলেনি। খালেদা জিয়া আগ বাড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীকে প্রথমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
৫/ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করার জন্য লবিং শুরু করেন। বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ভারতে সফরও করেন। বিএনপি নেতাদের তৎপরতায় কোন আশ্বাস না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপির লবিং এর মাধ্যমে ভারতের ধর্ম গুরু শ্রী শ্রী রবি শংকরের কাছে ধর্ণা দেন, যাতে খালেদার সাথে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ এর ব্যবস্থা করে দেন। কারণ, ধর্ম গুরু রবি শংকরকে বিজেপি নেতারা অতরিক্ত সন্মান করেন। রবি শংকর কে চিনেন? জাকির নায়েকের সাথে তার যে বিখ্যাত বিতর্ক আছে, তিনি।
৬/ ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ৫ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারী সফরে আসেন তখন নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য বিএনপি নেতারা উঠে পড়ে লাগেন। অনেক অনুরোধ করার পর অবশেষে খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ করে কি যে খুশী বিএনপি দেখিয়েছিলো তা দেশের সকল মিডিয়া মারফৎ জনগণ দেখেছে।
◼️ তাহলে এবার এতো অভিমান কেন? হ্যাঁ বিএনপির বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির উপর কোন রাগ বা বিদ্বেষ, যেটি আছে সেটি হলো অভিমান, ভাইয়ে ভাই অভিমান করলে যেরকম। তো অভিমানটা হলো ২০০৮ এর পর ২০১৪তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিএনপির নেতারা ও খালেদা জিয়া ভেবেছিলো, নরেন্দ্র মোদী বুঝি এবার বিএনপিকে জোর করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। কিন্তু বিএনপির ভাবা উচিত, ক্ষমতায় যেতে হলে দেশের জনগণের সমর্থন আদায় করে নিতে হয়।
◼️আরেকটা ব্যাপার হিসাব মেলালেও খুব সহজে দেখা যায়, বিএনপির ভারতবিদ্বেষ মূলত কংগ্রেস বিদ্বেষ। কংগ্রেসের অসাম্প্রদায়িক নীতি এবং মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারনে ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি রাজনীতিতে বেশ সুবিধা করতে পারে না।
ইতিহাস তাই বলে-
➡️ জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আসে তখন ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মোকাবেলায় ব্যস্ত ছিলেন। তখন ভারতে ইমার্জেন্সি চলতেছিলো। ইন্দিরা ক্ষমতা হারান ১৯৭৭ সালে বিজেপির পূর্বসূরি দল জনতা পার্টির কাছে।
➡️ ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় আসেন ১৯৮০ সালে। জিয়াউর রহমান মারা যায় ১৯৮১ সালে।
➡️ ভারতে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ঠিকে থাকে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে বাংলাদেশে এরশাদ ছিলো ১৯৯০ পর্যন্ত।
➡️ ভারতে ক্ষমতায় আসে ডিসেম্বর ১৯৮৯ থেকে জুন ১৯৯১ পর্যন্ত কংগ্রেসের বিরোধীপক্ষ জনতা দলের কাছে। সংসদে জোটের বাইরে এই জনতা দল সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলো বিজেপি। এই সময়ের ভেতরেই বাংলাদেশে ১৯৯১তে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি ক্ষমতায় আসে।
➡️ ভারতে ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিলো অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আর সেই সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বাংলাদেশে ৯৬এর আওয়ামী লীগের পর আবারও ক্ষমতায় আসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত।
➡️ ২০০৮ এ আবার ভারতে ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস। বিএনপিও নিজের মিত্রকে পায়নি।
➡️ এই মিত্রতার জোড়েই ২০১৪তে ভারতে বিজেপি জিতলে বিএনপি খুবই আশাবাদী ছিলো।